২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
রক্তস্বল্পতা এমন একটি অবস্থাকে বোঝায় যেখানে রক্তে যথেষ্ট পরিমাণ সুস্থ লোহিত রক্তকণিকা বা হিমোগেøাবিন থাকে না এবং এর মাত্রা বয়স ও লিঙ্গ অনুযায়ী স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কমে যায়। এ কোষগুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এরা সারা দেহে অক্সিজেন সরবরাহ করে। পুরুষের তুলনায় মহিলাদের রক্তস্বল্পতার হার বেশি। রক্তে হিমোগেøাবিনের পরিমাণ কমে গেলেই রক্তস্বল্পতা রোগ হয়। গর্ভবতী ও প্রসূতি মা এবং ছোট শিশুরাই এ রোগের সহজ শিকার।
শিশুদের মাঝে রক্তশূন্যতার সমস্যাটি প্রায়ই দেখা যায়। শিশুরা এই সমস্যার প্রধান শিকার। কারণ শিশুদের ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া, যতœ না নিলে, দীর্ঘ দিন ধরে কোনো অসুখে ভুগলে শিশুদের দেহে লৌহজনিত অভাব দেখা যায় বলে রক্তস্বল্পতার প্রভাব পড়ে। এটি কিন্তু মোটেই অবহেলার নয়। এই সমস্যা থেকে শিশুর মৃত্যু পর্যন্তও হতে পারে। কারণ, রক্তস্বল্পতার মাত্রা বেশি হলে শিশুর হৃদপিÐের কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। শিশুর শরীর ফুলে যায়। খাওয়া-দাওয়ায় অরুচি হয়। শিশুর শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। শিশুটি যারপরনাই দুর্বল হয়ে যায়। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। অল্প পরিশ্রমেই শিশুটি ক্লান্তিবোধ করে। শিশুটির জিভ, নখ, হাত ও পায়ের তালু ফ্যাকাশে হয়ে পড়ে। রক্তে হিমোগেøাবিনের মাত্রা কমে গেলে শিশুদের এসব সমস্যা দেখা যায়। শিশুর রক্তে হিমোগেøাবিনের মাত্রা নিয়মানুযায়ী স্বাভাবিক থাকা খুবই জরুরি।
রক্তে আয়রন, ফলিক এসিড, ভিটামিন বি-২, প্রোটিন রক্তশূন্যতা দূর করতে অত্যন্ত জরুরি। এই রোগ প্রতিরোধ করতে শিশুকে প্রথম ছয় মাস মায়ের দুধ খাওয়ানো খুবই জরুরি। এর পর শিশুকে ঘরে তৈরি কিছু খাবার দিতে হবে। শিশুকে তিন-চার মাস অন্তর কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে। যদি এমন হয় যে, শিশু কম ওজন নিয়ে জন্ম নিয়েছে; সে ক্ষেত্রে আয়রন ও ফলিক এসিড ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দেয়া যেতে পারে। শিশুর প্রতিদিনের খাবারে সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, কলা, পেঁপে ইত্যাদি থাকা উচিত। এগুলো আয়রন ঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। কলিজা, গোশত, ডিম, মাছ ইত্যাদি খাবারও স্বল্পপরিমাণে শিশুকে দেয়া যেতে পারে। মোটকথা শিশুকে সুষম খাদ্য দিলে এই সমস্যায় ভোগার কারণ নেই।
শিশুর যতœ নিতে হবে। শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বাইরের খাবারের চেয়ে ঘরে তৈরি এসব খাবার শিশুর জন্য খুই উপকারি। রক্তস্বল্পতার কারণ হিসেবে আছে লোহিত রক্তকণিকা কম তৈরি হওয়া। মায়ের শরীরের কিছু কারণের জন্যও শিশুর রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত রক্তকণিকা ভেঙে যাওয়ার কারণে যেমন-থ্যালাসেমিয়াতেও রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। শিশুর কোনো আঘাতজনিত কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলেও রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। কৃমিজনিত কারণ রক্তশূন্যতার একটি অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এজন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং তিন-চার মাস পরপর অন্যান্য সদস্যকেও কৃমির ওষুধ খেতে হয়। শিশুর জ্বর যদি দীর্ঘ দিন স্থায়ী হয় এবং শিশুর শরীরের ওজন কমে যায় এবং খাওয়া-দাওয়া পরিমাণমতো না হলেও এই অসুখ দেখা দিতে পারে।
শিশুর এই রোগের চিকিৎসার জন্য প্রথমেই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রক্তে হিমোগেøাবিনের মাত্রা জেনে নিতে হবে। প্রয়োজনে অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হতে পারে। রক্তশূন্যতার কারণ যাচাই করতে হবে। শরীরের যে উপাদানগুলোর ঘাটতির জন্য রক্তশূন্যতা হয়েছে, সেই উপাদানগুলো পূরণ করতে হবে। আয়রন এবং ফলিক এসিড প্রয়োজনে দিতে হবে। যদি মারাত্মক রক্তশূন্যতা থাকে এবং হার্টফেইলিউরের দিকে যেতে থাকে, সেক্ষেত্রে রক্ত পরিসঞ্চালনের দরকার হতে পারে। এর জন্য হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়। তবে বেশির ভাগ শিশু সাধারণ কতগুলো কারণের জন্য রক্তস্বল্পতায় ভোগে, যেগুলো দূর করা খুব কঠিন কিছু নয়। কালো কচু, ধনে পাতা, কাটা নটে, ডাঁটা শাক, কাঁচকলা, দোলাশাক, আটা, কালোজাম, কলিজা ইত্যাদিতে প্রচুর আয়রন আছে। এসব খাবার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
গর্ভবতী মাকে আয়রন ট্যাবলেট খেতে দিতে হবে। কৃমি প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতিটি শিশুর যতœ নিতে হবে। পরামর্শ - * টাটকা মৌসুমী ফল এবং বাচ্চা মুরগীর স্যুপ, ডিম, কলিজা, কালোজাম, বিট, গাজর, পালংশাক, লাল শাক, কচুশাক ও মেথির মতো পুষ্টিকর খাদ্যদ্রব্যাদি গ্রহণ করুন। * আয়রনের অভাবজনিত কারণে রক্তস্বল্পতা হলে আয়রণ সমৃদ্ধ খাদ্য ও ওষুধ খেতে হবে। * ভিটামিন বি১২ বা ফলিক অ্যাসিডের অভাবে হলে উক্ত উপাদানের ঘাটতি পূরণ করতে হবে। * রক্তস্বল্পতা প্রকট হলে রক্তসঞ্চালনের ব্যবস্থা করতে হবে।* শিশুদের ক্ষেত্রে কৃমি রক্তস্বল্পতা অন্যতম প্রধান কারণ তাই কৃমি প্রতিরোধী ওষুধ খেতে হবে এবং ব্যবস্থা নিতে হবে। * গর্ভবতী মায়েদের গর্ভের ৪র্থ মাস থেকে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার ও ওষুধ খেতে হবে।
চিকিৎসক-কলামিস্ট,
মোবা : ০১৭১৬২৭০১২০।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।