মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
লাদাখের হিমালয় অঞ্চলে চীনা সেনাদের সাথে ‘মুখোমুখি’ সংঘর্ষে একজন কমান্ডিং অফিসারসহ তিন ভারতীয় সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র এই তথ্য জানিয়েছেন। সোমবার রাতের এই ঘটনাটি কয়েক সপ্তাহ ধরে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং এই অঞ্চলে উভয় পক্ষ থেকে কয়েক হাজার অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের পরিপ্রেক্ষিতেই ঘটেছে। ভারতের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘গ্যালওয়ান উপত্যকায় চলমান উত্তেজনা হ্রাসে আলোচনা প্রক্রিয়া চলাকালে গত সোমবার রাতে একটি সহিংস সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ভারতীয় পক্ষের একজন কর্মকর্তা ও দু’জন সৈন্য নিহত হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পরিস্থিতি হ্রাস করার জন্য দু’পক্ষের সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তারা বর্তমানে সেখানে বৈঠকে বসেন।’ গত প্রায় ৪৫ বছর পর চীন সীমান্তের এ ঘটনায় ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর জওয়ানরা নিহত হয়েছেন। এর আগে ১৯৭৫ সালে অরুণাচল প্রদেশের তুলুং লাতে এমন একটি সংঘর্ষে ৪ ভারতীয় সেনা প্রাণ হারিয়েছিলেন।
এদিকে, সংবাদ সংস্থা এএফপি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দু’দেশের ‘বিতর্কিত সীমানা’ অতিক্রম করার জন্য ভারতকে অভিযুক্ত করেছে চীন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেছেন, ‘সোমবার দু’বার ভারতীয় সেনারা সীমানা পেরিয়ে চীনে ঢুকে পড়েছিল। তারা চীনা সৈন্যদের উস্কানি দেয়াতেই উভয় পক্ষের মধ্যে মারাত্মক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আবারও আন্তরিকভাবে অনুরোধ করছি যে, ক‚টনৈতিক মনোভাব অনুসরণ করে ভারত তার সৈন্য বাহিনীকে সংযত রাখুক।’ তিনি আরও বলেন, ‘সীমান্ত অতিক্রম করবেন না, ঝামেলা করবেন না এবং এমন কোন একতরফা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন না যা সীমান্ত পরিস্থিতি জটিল করে তুলবে।’ লিজিয়ান জানান, বেইজিং দিল্লির কাছে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে।
তবে চীন কোন হতাহতের কথা উল্লেখ করেনি। কিন্তু, ভারত দাবি করেছে যে ‘উভয় পক্ষেই’ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। গত সপ্তাহে চীন বলেছিল যে, কূটনৈতিক ও সামরিক চ্যানেলের মাধ্যমে সীমান্ত উত্তেজনা সমাধানের বিষয়ে ভারতের সাথে তারা ‘ইতিবাচক ঐক্যমতে’ পৌঁছেছে। গতকাল ঘটনাস্থলেই (গালওয়ান ভ্যালি) পারমাণবিক শক্তিধর দুটি দেশের উর্ধতন সেনা কর্মকর্তারা পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টায় আলোচনা চালান। যার অর্থ, গত সোমবারের রাতের সংঘর্ষের পর এখন আলোচনার মাধ্যমে একটা মিটমাটের চেষ্টা চলছে।
গত প্রায় দেড় মাস ধরেই লাদাখের ভারত ও চীনের মধ্যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় (লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা এলএসি) দুপক্ষের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা চলছে, দুই দেশের সেনাবাহিনীও মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। কোনও কোনও সামরিক বিশ্লেষক জানিয়েছেন, একটা পর্যায়ে চীনা সৈন্যরা এলএসি অতিক্রম করে ভারতীয় ভূখন্ডের ভেতর প্রায় চল্লিশ থেকে ষাট কিলোমিটার ঢুকে পড়েছিল - যদিও আনুষ্ঠানিক পর্যায়ে ভারত এ ব্যাপারে এখনও কোনও মন্তব্য করেনি।
১৯৬২ সালে চীন এবং ভারতের মধ্যে একমাত্র যুদ্ধটি হয়েছিল, আর ভারত তাতে পরাজিত হয়েছিল। ভারতের অভিযোগ, চীন দেশটির ৩৮ হাজার বর্গকিলোমিটার ভূখন্ড দখল করে রেখেছে। গত তিন দশকে বিরোধপূর্ণ ভূখন্ড এবং সীমান্ত সঙ্কট নিয়ে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। মে মাসে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেই উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সিকিম সীমান্তে চীনের বাড়তি সেনা মোতায়েনকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, যা পরবর্তীতে সরাসরি সংঘর্ষেও গড়ায়।
২০১৭ সালে বিতর্কিত মালভূমিতে চীন তার সীমান্ত সড়ক বাড়ানোর চেষ্টা করলে দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। চীন এবং ভারত দুটি দেশই সামরিক শক্তিতে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তর, এর আগে বেশ কয়েকবারই তারা সীমান্তে মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। দুই দেশের মধ্যকার যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা অর্থাৎ লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা এলএসি সেটিও অত্যন্ত দুর্বল। দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি নদী, হ্রদ এবং শৈলপ্রবাহ প্রবাহিত হয়েছে, যার মানে হচ্ছে সীমানা যেকোনো সময় বদলে যেতে পারে, যা ভবিষ্যতে আরো সংঘর্ষের উস্কানি হিসেবে কাজ করবে।
দুই পক্ষই বলছে, গত চার দশকে চীন ও ভারতের মধ্যে কোন গুলি বিনিময় হয়নি। গতকালও ভারতীয় বাহিনী দাবি করেছে তারা ‘কোন গুলি চালায়নি’। ভারতের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, ভারতীয় সৈন্যদের পিটিয়ে মারা হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে দেশটির সেনাবাহিনী কোন মন্তব্য করেনি।
সা¤প্রতিক সময়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। ভারত স¤প্রতি লাদাখের একেবারে প্রত্যন্ত এলাকায় একটি নতুন রাস্তা বানিয়েছে এবং কোন সংঘর্ষ হলে ওই রাস্তা দিয়ে দিল্লি সহজেই সীমান্ত এলাকায় সৈন্য এবং মালামাল পাঠাতে পারবে। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ওই এলাকার অবকাঠামো যে ভারত নতুন করে ঢেলে সাজাতে চাইছে, তার ফলেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে চীন। সূত্র : আল-জাজিরা, এএফপি, বিবিসি ও এনডিটিভি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।