পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশে আগাম বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত শুক্রবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের অর্ধশত নদ-নদীর পানি প্রায় চার মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে পদ্মা, মেঘনা, গোমতি, সুরমা, কুশিয়ারা, খোয়াই, হালদা, মাতামুহুরিসহ অন্যান্য নদ-নদী রয়েছে। কৃষক, কৃষিবিদসহ বিশ্লেষকরা বলছেন, অসময়ে নদ-নদীতে পানিবৃদ্ধি বিগত বহু বছরে দেখা যায়নি। পানিবৃদ্ধির এমন প্রবণতা দেখা গিয়েছিল ৮৮’র ভয়াবহ বন্যার শুরুর সময়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদ-নদীতে অস্বাভাবিক পানিবৃদ্ধি এ সময়ে, বিশেষ করে জুনের শুরুতে দেখা যায় না। সাধারণত জুনের শেষ বা জুলাইয়ের শুরুতে দেখা যায়। অসময়ে পানিবৃদ্ধি ভয়াবহ বন্যারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ইতোমধ্যে নদ-নদীতে পানিবৃদ্ধির কারণে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের অনেক নিম্নভূমি নিমজ্জিত হয়েছে। অনেক ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। কৃষকদের অনেকে তাড়াহুড়ো করে আধপাকা ধান কেটে তুলতে হয়েছে। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের কৃষি অফিসার জানিয়েছেন, সেখানে ৩৩ একর বোরো ধানের জমি এবং ২৫০ একর নিচু ভূমির ফসল তালিয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘূর্ণিঝড় আম্পান দেশের ভেতরে এবং পশ্চিমবঙ্গে যে বৃষ্টিপাত ঝরিয়েছে এবং মুম্বাইয়ে ঘূর্ণিঝড় নিসর্গের বৃষ্টির পানি নেমে আসায় দেশের নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ভারত ফারাক্কাসহ তার সব বাঁধের গেট খুলে দেয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে বিভিন্ন স্থানে নদ-নদীর ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। বাড়ি-ঘরসহ ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অসংখ্য মানুষ সহায়-সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। বন্যার পদধ্বনি এবং নদীভাঙ্গন যেভাবে শুরু হয়েছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে, আরেকটি বড় ধরনের প্রকৃতিক বিপর্যয় অপেক্ষমান।
ঝড়-ঝঞ্ঝা, বন্যা আমাদের দেশে নতুন নয়। যুগের পর যুগ ধরেই আমরা তার কবলে পড়ছি এবং মোকাবিলার চেষ্টা করছি। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের জীবনরক্ষায় অনেকাংশে সফল হলেও সম্পদ রক্ষায় যে খুব একটা সফল হচ্ছি, তা বলা যায় না। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের যে সম্পদহানি হয়, তা ফিরে পাওয়া পাওয়া যায় না। নদীভাঙ্গনে কোনো কিছুই ফেরত পাওয়া যায় না। সবই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়। এমনও দেখা গেছে, অনেকে স্বচ্ছল পরিবার সব হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে। ঘর-বাড়ি, সম্পদহারা এসব মানুষের বেশিরভাগই আশ্রয়ের সন্ধানে রাজধানীমুখী হয়, কিংবা বাঁধে আশ্রয় নেয়। এবার আগেভাগে বন্যা হওয়ার যে আলামত দেখা যাচ্ছে এবং নদীভাঙ্গন তীব্র হয়ে উঠেছে, তাতে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায় না। লাখ লাখ মানুষের অর্থনৈতিক ও মানবিক সংকটের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা নদীভাঙ্গন রোধ, বেড়ি বাঁধ নির্মাণ নিয়ে অনেক কথা শুনি। প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়। দেখা যায়, নদী ব্যবস্থাপনা এবং বাঁধ নির্মাণের সাথে যারা জড়িত, তাদের একটি শ্রেণীর এন্তার দুর্নীতির কারণে তা শুভংকরের ফাঁকিতে পরিণত হয়। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও বন্যার পানির তোড়ে বাঁধগুলো ভেঙ্গে শত শত কোটি টাকা ভেসে যায়। বছরের পর বছর ধরে তা চলে আসছে। বাঁধ ও নদী ব্যবস্থাপনার বিষয়টি একটি শ্রেণীর কাছে যেন ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর কোনো প্রতিকার আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। আবার একবার বাঁধ নির্মাণের পর তার রক্ষণাবেক্ষণ যে করতে হয়, তা সঠিকভাবে করা হয় না। বাঁধ টিকে আছে নাকি ভেঙ্গে গেছে, তার তদারকি হয় না। সরকার তথা জনগণের অর্থের এমন অপচয় বিশ্বের আর কোথাও আছে কিনা, আমাদের জানা নেই। এখন যেভাবে নদীভাঙ্গন চলছে, যদি বন্যা শুরু হয়, তবে তা আরও প্রকট আকার ধারণ করবে। মানুষের দুর্দশার সীমা থাকবে না। এ পরিস্থিতিতে এখনই নদীভাঙ্গন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ অন্যদের শিক্ষা দিতে পারে। এ কথা বাস্তব হলেও দুঃখের বিষয় হচ্ছে, দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে সম্পদহারাদের পুনর্বাসনে আমরা পুরোপুরি সফল হতে পেরেছি, এমন দাবি করতে পারি না। সম্পদ হারিয়ে অসংখ্য মানুষ এখনো মানবেতর জীবনযাপন করছে।
বন্যার যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা কীভাবে মোকাবিলা করা যায় এবং কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া যায়, তা পরবর্তী মন্ত্রীসভার বৈঠকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা দরকার। তা নাহলে, একদিকে করোনা, অন্যদিকে বন্যা, এই দুই দুর্যোগে মানবিক ও অর্থনৈতিক যে বিপর্যয় ঘটবে, তা সামাল দেয়া সম্ভব হবে না। বিপুল সংখ্যক মানুষের খাদ্য, বাসস্থান ও চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে সরকারকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে। এ আশঙ্কা সামনে রেখে এখন থেকেই সরকারকে প্রস্তুতি নিতে হবে এবং প্রস্তুত থাকতে হবে। প্রাকৃতিক এসব বিপর্যয় মোকাবিলায় আগামী বাজেটে দিকনির্দেশনা থাকা জরুরি। বিপদ আসুক, তারপর দেখা যাবে, এমন মনোভাব নিয়ে বসে থাকলে ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে। তখন তা সামাল দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রাকৃতিক দুর্যোগ সামাল দিতে গিয়ে যুগ যুগ ধরে অনেক জানমাল খুইয়ে আমরা সাফল্যের পথে অগ্রসর হয়েছি। তবে পরবর্তী পুনর্বাসন কাজে ব্যর্থতা রয়েই গেছে। এক্ষেত্রে সাফল্য অর্জিত হয়নি। উল্লেখ করা প্রয়োজন, যে কোনো রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার এবং তার নিরাপদ প্রয়োগ নিয়ে গবেষণা করতে এক যুগেরও অধিক সময় লেগে যায়। দেখা যাচ্ছে, করোনার এই মহামারীতে বিজ্ঞানী ও গবেষকরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ছয় মাস বা এক বছরের মধ্যে প্রতিষেধক আবিষ্কারে উঠে পড়ে লেগেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা এবং পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনের বিষয়টিও এমন অগ্রাধিকার দিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।