Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঠাণ্ডা যুদ্ধ, দুই বিমানবাহী জাহাজ মোতায়েন চীনের

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০২০, ৪:১৯ পিএম

নতুন শীতল যুদ্ধের ব্যপারে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিযারি দেয়ার পর চলমান উত্তেজনার মধ্যেই তাইওয়ান উপকূলে নতুন দুই বিমানবাহী যুদ্ধ জাহাজ মোতায়েন করেছে চীন।

তাইওয়ান উপকূলের নিকটবর্তী প্রিয়াটস দ্বীপের নিকটে আক্রমণাত্মক যুদ্ধ মহড়ায় যোগ দিতে যাওয়ার আগে চীনের নতুন দুই বিমানবাহী জাহাজ লিয়াওনিং ও শানডং হলুদ সাগরের মধ্যে সুরক্ষিত বোহাই উপকূলে যুদ্ধ প্রস্তুতি প্রশিক্ষণে নিযুক্ত ছিল। এই প্রথমবারের মতো চীন নতুন দুই বিমানবাহী জাহাজ একসাথে মোতায়েন করল। তাদের এই পদক্ষেপে তাইওয়ান প্রিয়াটস দ্বীপ থেকে সম্ভাব্য আগ্রাসনের আশঙ্কা করছে। কারণ, এটি মূল ভূখণ্ডে আক্রমণের জন্য চীনা ঘাটি হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে।

এর আগে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র চাইছে চীনের সঙ্গে নতুন ‘শীতল যুদ্ধ’ শুরু করতে। করোনাভাইরাসকে পুঁজি করে সে লক্ষ্যের দিকেই ধাবিত হচ্ছে তারা। রোববার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজনৈতিক দল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চীনের বিরুদ্ধে কথা বলছে। তারা চাইছে, দুই দেশ যেন কোল্ড ওয়ারে জড়িত হয়ে পড়ে। বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এনডিটিভির বরাতে জানা যায়, করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র নতুন এক বিরোধিতা তৈরি করছে চীনের বিরুদ্ধে। আগে থেকে চলা বাণিজ্যিক যুদ্ধও এতে বড় ভূমিকা রাখবে।

প্রসঙ্গত, হংকং ইস্যুতেও দুই দেশের বিরোধিতা লক্ষ্য করা গেছে। গত শুক্রবার চীন নতুন একটি আইন জারি করেছে। যাতে করে হংকংয়ের চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমিয়ে দেয়া যায়। এরও সমালোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, হংকংয়ের আন্দোলনের পেছনে ইন্ধন আছে যুক্তরাষ্ট্রের। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের কারণে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু দেশটিতে মরণঘাতী এই ভাইরাসের পাশাপাশি একটি রাজনৈতিক ভাইরাসেরও সংক্রমণ ঘটিয়েছে।

এই প্রসঙ্গে ওয়াং ই বলেন, এই রাজনৈতিক ভাইরাসের কাজই হলো চীনকে দোষারপ করা। কোনো যুক্তি ছাড়াই কিছু রাজনৈতিক নেতা আমাদের দোষারোপ করে আসছেন। যা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। নির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্যে নিয়েই এসব করা হচ্ছে।

চীনের কাছ থেকে এমন জোরালো বক্তব্য এমন সময় এলো যখন করোনাভাইরাসের সমস্ত দায় চীনের ওপর চাপানোর চেষ্টায় রাশ টানার কোনো লক্ষণই দেখাচ্ছেন না প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সম্প্রতি এক তত্ত্ব প্রচার করেছেন হোয়াইট হাউজের বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা পিটার নাবারো যে, ‘চীন করেনাভেইরাসে আক্রান্ত লাখ মানুষকে বিমানে উঠিয়ে সারা পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিয়েছে যাতে একটি প্যানডেমিক তৈরি হয়।’ এ কথায় প্রচণ্ড ক্ষেপে গেছে বেইজিং।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এ সময় চীনকে কোণঠাসা করে নতুন এক শীতল যুদ্ধের চেষ্টা কি শুধুই ডোনাল্ড ট্রাম্প বা তার কিছু সহযোগীর কাজ? অধিকাংশ পর্যবেক্ষক অবশ্য তা মনে করেন না। তাদের কথা - বেশ আগে থেকেই বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, বৈরিতা দিনে দিনে বাড়ছে। করোনাভাইরাস প্যানডেমিক তাতে শুধু নতুন একটি মাত্রা যোগ করেছে।

বেইজিং ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর চায়না অ্যান্ড গ্লোবালাইজেশনের প্রেসিডেন্ট ওয়াং হুহাইওর মতে, ১৯৭৯ সালে দুই দেশের মধ্যে পুরোমাত্রায় কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠান পর পারস্পরিক অবিশ্বাস এত খারাপ কখনো হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা এশিয়া সোসাইটির মার্কিন-চীন সেন্টারের পরিচালক অরভিল শেল বিজনেস ইনসাইডার পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা একটি শীতল যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে।’

হংকংয়ের ব্যাপটিস্ট ইউনিভার্সিটির রাজনীতির অধ্যাপক জ্যঁ পিয়ের সেবাস্টিয়ান লন্ডনের ফিনানশিয়াল টাইমস পত্রিকাকে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন নতুন এক ধরণের শীতল যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছে।’

কুয়ালালামপুরে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব চায়নার অধ্যাপক ড সৈয়দ মাহমুদ আলী বিবিসিকে বলেন, বেশ অনেকদিন ধরেই চীনকে আমেরিকা তাদের প্রভাব প্রতিপত্তির প্রতি প্রধান হুমকি হিসাবে বিবেচনা করছে। তিনি বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ১৯৯২ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাদের যে জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল নেয়, তাতে পরিষ্কার বলা আছে, আর কোনদিনই বিশ্বের কোথাও তারা এমন কোন শক্তিকে মাথাচাড়া দিতে দেবে না যারা আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে।

চীনের প্রতিবেশী কয়েকটি দেশের সাথে, যেমন ভারত, জাপান, ভিয়েতনাম, সামরিক ও কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব দেশগুলোর সাথে যৌথ সামরিক মহড়া করছে। ডব্লিউ টি ও বা ডব্লিউ এইচ ওর মতো যেসব আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে চীনের প্রভাব রয়েছে, যেগুলোর সুবিধা চীন নিচ্ছে সেগুলোকে খাটো করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

রয়টার্স বার্তা সংস্থা বলছে, চীনের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি অভ্যন্তরীণ নথিতে দেশের শীর্ষ নেতৃত্বকে সতর্ক করা হয়েছে যে চীনের প্রতি যে বৈরি মনোভাব বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বে এখন তৈরি হয়েছে, তার নজির ১৯৮৯ সালে তিয়েনানমেন স্কয়ারের ঘটনার পর দেখা যায়নি।

ঐ নথিতে বলা হয়েছে, চীন এবং চীনা কম্যুনিস্ট পার্টিকে ঘায়েল করা, অপদস্থ করা, তাদেরকে বিশ্ব নিরাপত্তা এবং অর্থনীতির জন্য একটি হুমকি হিসাবে দেখানোর জন্য আমেরিকা উঠেপড়ে লেগেছে। সূত্র: দ্য ইউএস সান, বিবিসি।



 

Show all comments
  • শেখ ফরিদ ২৭ মে, ২০২০, ২:৪৯ পিএম says : 0
    আমেরিকা চীন আধিপত্য বিস্তার নিয়ে চলছে যুদ্ধের দামামা। আর আমাদের কে দিয়ে দিছে করোনা ভাইরাস নামক মস্তিষ্ক ব্যাধি। ব্যাস আমরা মরছি করোনা করোনা করে। আর তিনারা আছেন আধিপত্য বিস্তারে ব্যস্ত।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ