মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
মরুভূমির দেশ কুয়েত। রাজতন্ত্রের এই দেশটিতে আবার ট্যাক্স ফ্রি। গাড়ি কিনতেও ট্যাক্স লাগে না। আবার আয়কর-ও দিতে হয় না। আয় করেন। সেই কুয়েতের প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ট্যাক্স আরোপের দাবি জানিয়েছেন দেশটির এক সংসদ সদস্য। দেশটির সিনিয়র সাংসদ ও পার্লামেন্টের মানব সম্পদ কমিটির প্রধান খলিল আল সালেহ প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ট্যাক্স আরোপের দাবি জানিয়েছেন এবং এরই মধ্যে পার্লামেন্টে একটি খসরা বিল প্রস্তাব করেছেন।
আর্থিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান কুয়েত ফিন্যান্সিয়াল সেন্টারের একটি সহযোগী গবেষণা সংস্থা বলছে, রেমিট্যান্স ট্যাক্স নিয়ে কুয়েত সরকার যে বিল অনুমোদন করতে যাচ্ছে তা নিয়েছে বিতর্ক উঠেছে। এমনকি এটা বাস্তবায়ন হবে কিনা তাও ভেবে দেখা হচ্ছে।
অবশ্য এরই মধ্যে এই বিল কুয়েতের সংসদীয় কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, প্রবাসীদের আয়ের উপর ভিত্তি করেই এই ট্যাক্স নির্ধারণ করা হবে। সে অনুযায়ী, ৯৯ কুয়েতি দিনারে ১ শতাংশ এবং ৫০০ কুয়েতি দিনারে ৫ শতাংশ হারে ট্যাক্স দিতে হবে প্রবাসীদের। এই ট্যাক্স আরোপিত হলে সেখানে থাকা বাংলাদেশিদেরও টাকা পাঠাতে ওই দেশের সরকারকে অতিরিক্ত ট্যাক্স গুণতে হবে।
১৯৭৬ সাল থেকে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগ দেয়া শুরু করে কুয়েত। যা চালু ছিল ২০০৭ সাল পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে প্রায় চার লাখ ৮০ হাজার শ্রমিককে নিয়োগ দেয়া হয়। পরে আরও প্রায় ৮০ হাজার বাংলাদেশিকে নিয়োগ দেয়া হয়। সম্প্রতি কুয়েত বাংলাদেশ থেকে খাদেম ভিসায় শ্রমিক নেয়া নিষিদ্ধ করে। তবে অন্য সব ধরনের ভিসায় লোক নেয়ার সুযোগ আগের মতই বহাল আছে।
কুয়েতের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটি থেকে ২০১৬ সালে প্রায় ১৫.৩ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স তাদের দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এর মধ্যে ৭ শতাংশ পাঠিয়েছেন বাংলাদেশিরা। আর ২৭ শতাংশ ও ১৮ শতাংশ পাঠানো হয়েছে যথাক্রমে ভারত ও মিশরে।
রয়টার্স বলছে, ফিন্যান্সিয়াল কমিটি এই ট্যাক্স আরোপ অনুমোদন দিলেও আইন প্রণেতারা বিরোধিতা করছেন। যদি এই খসড়া বিল অনুমোদিত হয়, তবে এটি সরকারের কাছে পাঠানো হবে। এরপর মন্ত্রিপরিষদের কাছে গৃহীত হলে তা আইন আকারে কার্যকর হবে। তখন কুয়েত হবে উপসাগরীয় ৬ দেশের মধ্যে রেমিট্যান্সের ওপর ট্যাক্স আরোপ করা প্রথম দেশ।
রেমিট্যান্সের ওপর ট্যাক্স আরোপ নিয়ে যখন আলোচনা হচ্ছে, তখন কারা এই ট্যাক্স দেবে তা এখনও শনাক্ত হয়নি। এছাড়া রেমিট্যান্স বলতে আসলে কী বোঝানো হচ্ছে- সেটাও ঠিক হয়নি। এর মধ্যে আয় বা ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণ অন্তর্ভুক্ত হবে কিনা তাও স্পষ্ট নয়।
উল্লেখ্য, অব্যাহত বাজেট ঘাটতির মুখে অন্যতম ধনী এই আরব রাষ্ট্রটি। দেশটির আয়ের ৯৫ ভাগই আসে অপরিশোধিত তেল রফতানি থেকে। অবশিষ্ট আয় আসে সেবা খাত থেকে। বিশ্ব বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম এখন সর্বনিম্ন। গত ১১ বছরে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে ব্যারেল প্রতি তেলের দর।
২০০৭ সালে যেখানে ব্যারেল প্রতি তেলের দাম ছিলো ২শ’ ডলার। সেখানে কমতে কমতে এখন ৩৬ ডলার ছুঁই ছুঁই করছে।
বিশ্ববাজারে চাহিদা না থাকায় প্রতিদিনই দাম কমছে। এমন পরিস্থিতিতে আসছে নতুন বছরে দাম আরও কমতে পারে বলে স্পষ্টভাবেই আভাস দিয়েছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। কুয়েতে যখন এই পরিস্থিতি তখন মারাত্মক বাজেট ঘাটতির মুখে প্রতিবেশী সউদী আরব।
নিজ দেশের নাগরিকদের ওপর ভর্তুকি চালু থাকলেও বাড়তি রাজস্ব আহরণ আর বাজেট কাটঁছাটের শিকার হবে এইসব অভিবাসী। যার প্রভাব নিশ্চিত ভাবেই পড়বে অভিবাসীদের জীবনমানের ওপর।
তেলের মূল্য বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ভিসা ফি বৃদ্ধিসহ সবকিছুতেই নতুন করে শুল্ক নির্ধারণের পরিকল্পনা নিয়েছে দেশটি। আরব দেশগুলোর মধ্যে অর্থনীতির দিক থেকে সবচেয়ে বড় দেশ সউদী আরব। দেশটির নজিরবিহীন বাজেট ঘাটতির বিষয়টি এখন আর লুকোচুরির পর্যায়ে নেই।
‘বড়ভাইয়ের’ মতোই কুয়েত বৈদেশিক নীতি থেকে অভ্যন্তরীণ আইন সংস্কার- প্রায় সব কিছুতেই অন্ধ অনুসরণ করে সউদী আরবকে। অর্থনৈতিক নীতি না বদলালে সউদী আরব আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে- গত অক্টোবরে এই বলে সউদী আরবকে সতর্ক করেছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ।
অব্যাহত তেলের মূল্য পতনের সঙ্গে সেই পূর্বাভাস মিলতে শুরু করায় তাই কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ‘ছোটভাই’ কুয়েতের। ভর্তূকি আর ব্যয় কাটছাঁটের পথেই হাটাঁর পরিকল্পনা করেছে কুয়েত। যার কারণে আয়ের একটি বাড়তি অংশ যে সরকারের কোষাগারে দিতে হবে তা ইতোমধ্যেই প্রকাশ করেছে স্থানীয় গণমাধ্যম। সে হিসেবে স্বাভাবিকভাবে কমে যাবে সঞ্চয়। সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন নিম্ন মধ্য পেশায় নিয়োজিত অভিবাসী শ্রমিকরা।
এই পরিস্থিতিতে কতদিন কুয়েত ট্যাক্স ফ্রি দেশের স্বর্গরাজ্যে নিজেদের ধরে রাখতে পারে সেই প্রশ্নেই আলোচনা এখন প্রবাসীদের মাঝে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।