শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
ডলার সাহেব। করোনা যুদ্ধে বেঁচে আসা এক ভাগ্যবান মানুষ। হসপিটাল থেকে বাসায় ফিরে দেখেন, নিনা প্যাটেল বাসায় নেই। ফোনও বন্ধ। কিচেন-বাথরুমের আপার-বক্সগুলো খোলা। চেয়ার পেতে উকি মেরে দেখেন একটা বস্তাও নেই।
দারোয়ান শুধু বলেছে, দু’দিন আগে অ্যাম্বুলেন্সে আসা তিনজন লোকের সাথে ম্যাডাম চলে গেছেন। সাথে নিয়ে গেছেন কয়েকটি বস্তা।
এতক্ষণে ডলার সাহেবের মাথা কাজ করতে শুরু করছে। হসপিটালে যাওয়ার আগে খেয়াল করেছেন নিনা কার সাথে চুপিসারে ফোনে কথা বলছে। বাথরুমে গেলে ডলার সাহেব নিনার ফোনে হোয়াটস অ্যাপ হিস্টরি দেখে নেন। কাভার ফটোতে সান্দ্রা আগারকারের ছবি। চ্যাট বক্সে নিনা প্যাটেল লিখেছেন, আই উইল ম্যানেজ অল ইন টাইম।
দুবাইয়ের আল খুরুজ হোটেলের বার-ম্যানেজার এই সান্দ্রা আগারকারই ডলার সাহেবের সাথে সুন্দরি নিনা প্যাটেলের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো। আগারকার দক্ষিণ কেরালার বাসিন্দা। আরবি হিন্দি ইংরেজিতে স্মার্টলি কথা বলে যে কাউকে মুগ্ধ করেন। বারে চাকরির সুবাদে ঢাকা দিল্লি দুবাইয়ের এলিটদের সাথে তার দারুন নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে।
কথা ছিলো ডলার সাহেবের করোনা উপসর্গগুলো তারা কাউকে জানাবে না। বাসায় পরিচর্যা করলেই সেড়ে যাবে। কিন্ত চার দিনের মাথায় পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের লোক এসে হাজির। ডলার সাহেবের কাছে এখন ক্লিয়ার, পুলিশকে নিনাই ফোন করেছিল?
ইঞ্জিনিয়ার আবদুল হান্নান ওরফে ডলার। ক্লাব-পাড়ায় ডলার সাহেব। বয়স পঞ্চাশোর্ধ। একটি নির্মাণ কোম্পানির স্বত্ত্বাধীকারী। সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রজেক্টের কাজ করেছেন। নিম্নমানের ম্যাটেরিয়ালস ব্যাবহার এবং আয়কর রিটার্ন না দেয়ায় বেশ কয়েকটি দুদুকের মামলা। ওদিকে ব্যাংক-হিসাব জব্দের ভয়। তাই টাকাগুলো তুলে এনে বস্তায় পুরে রেখেছিলেন। পাঁচ-দশ কোটি নয়, দুশ’ বিশ কোটি। ভেবেছিলেন আর কিছু না করলেও এই টাকা দিয়েই নিনা আর তার বাকি জীবন টিপ-টপ কেটে যাবে।
প্রথম স্ত্রী শায়লার সাথে সেপারেশন হওয়ার পর ডলার সাহেব একাই ছিলেন। কিন্ত দুবাইয়ের আল খুরুজ হোটেল-বারে নিনা প্যাটেলকে দেখে তার মাথা ওলট-পালট হয়ে যায়। পিলে চমকানোর মত মুম্বাইয়ের মেয়ে নিনা প্যাটেল। মডেলিংয়েও দারুন খ্যাতি। পরিচয়ের পর খুব দ্রুত বিয়ে।
ডলার সাহেবের আর বুঝার বাকি থাকেনা, নিনা তার টাকার জন্যেই বৌ হয়ে এসেছিল। পেছনে ছিলো সান্দ্রাসহ আরো ক’জন।
এই মুহূর্তে ডলার সাহেবের উত্তরার ফ্ল্যাট, একটি ল্যান্ডক্রজার, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কয়েকটি একাউন্টে লাখ দু’য়েক টাকা ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই। লকডাউনের মধ্যেই ড্রাইভ করে সে ডিয়াবাড়ি লেক পাড়ে গিয়ে বসে। আকাশে বৈশাখি মেঘের আনা গোনা। মেঘের দল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে। হঠাৎ পানিতে কিছু একটা পড়ার শব্দে তার খেই ফেরে। একটি চিকা আরেকটিকে ধাওয়া করে পানিতে ফেলে দেয়। অনেক চেষ্টা করে চিকাটি বেয়ে ওপরে ওঠে। ডলার সাহেব ভাবেন, তাকেও আবার ওঠতে হবে। তবে এবার টাকার জন্য নয়, প্রায়শ্চিত্যের জন্য। খুব ভুল হয়ে গেছে তার। বার-ক্যাসিনো আর করোনা তার সব কেড়ে নিয়েছে। শায়লার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইবেন। হয়তো সে ফেরত আসবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।