Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধের কিছু তথ্য

অধ্যাপক শামসুল হুদা লিটন | প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০২০, ১২:৪৩ পিএম | আপডেট : ১২:৪৪ পিএম, ১১ মে, ২০২০

মদিনা থেকে প্রায় ৭০ মাইল দূরে অবস্থিত একটি কূপের নাম ´বদর´। সেখানে এ কূপের নামে বদর নামে একটি গ্রামও রয়েছে। ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ এ স্থানেই সংঘটিত হয়।
ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধঃ বদর যুদ্ধ যখন সংঘটিত হয় তখন রমজান মাস ছিল। দিনটি ছিল ১৭ রমজান। ২য় হিজরী। ৬২৩ মতান্তরে ৬২৪ খ্রিস্টাব্দ। মদিনা শহর হতে ৭০ মাইল দূরে বদর নামক প্রান্তরে বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।
ইতিহাসের প্রথম যুদ্ধঃ বদরের যুদ্ধ ছিল মুসলমানদের জন্য প্রথম ও প্রধান যুদ্ধ। এ কারণেই বদর যুদ্ধের বিজয়ের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ছিল অনেক বেশি।
মুসলমান সৈন্য সংখ্যাঃ বদরের যুদ্ধে মুসলিম সৈন্য সাহাবী ছিলেন মাত্র ৩১৩ জন। এই ৩১৩ জনই ছিল পদাতিক বাহিনীর সদস্য। এদের মধ্যে ৬০ জন ছিলেন মুহাজির এবং বাকী সব আনসার। এর মধ্যে ছিল আওস গোত্রের ৬১ জন এবং খারাজ গোত্রের ১৭০ জন। বদর যুদ্ধে মুসলমানদের ঘোড়া ছিল ২ টি এবং উট ছিল ৭০ টি। মুসলমান অধিকাংশ সৈনিকের হাতে তেমন কোন প্রয়োজনীয় অস্ত্র ছিল না।
মুসলিম প্রধান সেনাপতিঃ মুসলিম বাহিনীর প্রধান সেনাপ্রধান ছিলেন বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে।
অন্যতম সেনাপতিঃ বদর যুদ্ধের অন্যতম সেনাপতি ছিলেন-হযরত আবুবকর (রা.),উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.),হামজা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব( রা.),আলী ইবনে আবু তালিব( রা.)।
মুসলমানদের মধ্যে শহীদঃ বদর যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর মধ্যে শহীদ হয় ১৪ জন সৈন্য সাহাবী ।
বদর যুদ্ধে কান্নাকাটি করে অংশ গ্রহণ করা অপ্রাপ্তবয়স্ক সাহাবীঃ
হযরত ওমায়র বিন ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু। সে অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক ছিল বলে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) তাকে বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে নিষেধ করেছিলেন। সে সাহাবী চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠেছিলেন। অবশেষে তাঁর কান্নাকাটি দেখে হুজুর( সাঃ) তাকে অংশ গ্রহণের অনুমতি দিয়েছিলেন।
আবু জাহেলকে হত্যা করেছিল দুই বালকঃ
হযরত মুআওয়েজ( রাঃ) ও হযরত মু´ আজ( রাঃ) নামক দুই কচি বালক। তারা ছিল সহোদর দুই ভাই। আকরা এর পুত্রদ্বয়। এই দুই বালক আবু জাহেলকে চিনত না। যুদ্ধের ময়দানে ওরা আবু জাহেলকে হন্যে হয়ে খুজছিলো। দুই ভায়ের অনুরোধে হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ ( রাঃ) তাদেরকে ইরারা দিয়ে দেখিয়ে দেন- ঐ যে আবু জাহেল। এর পর নাবালক দুই ভাই তলোয়ার উঁচু করে দৌড়ে গিয়ে আবু জাহেলের উপর হঠাৎ অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই তলোয়ারের আঘাতে ইসলামের দুশমন ও পাপিষ্ঠ আবু জাহেলকে পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে বিদায় করে দেয়।

কুরাইশ বাহিনীর সৈন্য সংখ্যাঃ
অমুসলিম তথা কুরাইশদের পদাতিক বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা ছিল ১০০০জন, উষ্ট্রারোহী ৭০০ জন, অশ্বারোহী ৩০০ জন, খাদ্যের ব্যবস্থাপনায় ছিল ১৩ জন এবং যুদ্ধাস্ত্র বহনের জন্য ছিল শত শত উট। লৌহবর্ম ছিল ৬০০ টি। এ ছাড়া কুরাইশ বাহিনী মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত ছিল।
কুরাইশ বাহিনীর জন্য প্রতিদিন ৯-১০টি উট খাওয়ার জন্য জবাই করা হতো।
কুরাইশ বাহিনীর সেনাপতি : মক্কার কুরাইশ বাহিনীর প্রধান সেনাপতি ছিলেন আবু জাহেল।
কুরাইশদের বিশেষ সেনাপতিঃ আবু জাহেল ছাড়াও যুদ্ধ পরিচালনার জন্য কুরাইশ বাহিনীর বেশ কয়েকজন সেনাবাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন। তারা হলেন, উতবা ইবনে রাবিয়া, উমাইয়া ইবনে খালফ।
কুরাইবাহিনীর হতাহতের সংখ্যাঃ
মুসলিম বাহিনীর হাতে কুরাইশ বাহিনীর ৭০ জন সৈন্য নিহত হয়। বন্দিও হয় আরো ৭০ জন সৈন্য ।
বদর যুদ্ধের ফলাফলঃ
ইসলামের এ প্রথম সামরিক যুদ্ধে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নেতৃত্বাধীন মুসলিম বাহিনী ব্যাপক সামরিক বিজয় লাভ করে।
বদর যুদ্ধের প্রভাবঃ
ইসলামের ইতিহাসে বদরের যুদ্ধ সুদূরপ্রসারী প্রভাব সৃষ্টি হয়। যুদ্ধ জয়ের ফলে বিশ্বনেতা হিসেবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কর্তৃত্ব বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। ফলে মদিনার নতুন রাষ্ট্রকে অন্য আরব গোত্রগুলি মুসলিমদেরকে নতুন শক্তি হিসেবে দেখতে শুরু করে।বদরের যুদ্ধের পর নতুন রাষ্ট্র মদিনার শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি অনেকেই ইসলামের সুশীতল ছায় তলে আশ্রয় গ্রহণ করে। মুসলিম উম্মাহর কাছে বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবাগণ অনেক সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী।অন্যদিকে এ যুদ্ধে আবু জাহলসহ মক্কার অনেক প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ নিহত হন। ফলে আবু সুফিয়ান কুরাইশদের নতুন নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। মক্কা বিজয়ের আগে বদর পরবর্তী যুদ্ধগুলোতে মুসলিম বাহিনীর বিরুদ্ধে কুরাইশদের নেতৃত্ব দেয় আবু সুফিয়ান।
১০ হিজরিতে মক্কা বিজয়ের সময় আবু সুফিয়ান ইসলাম গ্রহণ করেন। মুসলিম হওয়ার পর আবু সুফিয়ান মুসলিম সাম্রাজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। খোলাফায়ে রাশেদার ৩০ বছর রাজত্বের পর তার ছেলে আমীর মুয়াবিয়া উমাইয়া খিলাফত প্রতিষ্ঠা করেন।
আধুনিক যুগে বদরের নামে বিভিন্ন দেশের অপারেশনঃ
১৯৭৩ সালে ইজরাইলের বিরুদ্ধে মিসরের আক্রমণের নাম ছিল ‘অপারেশন বদর’।
১৯৮০ এর দশকে ইরাকের বিরুদ্ধে ইরানের অপারেশনের নামও ‘অপারেশন বদর’ রাখা হয়।
বদর যুদ্ধ ছিল সত্যের সাথে মিথ্যার শক্তি পরীক্ষার লড়াই। এ যুদ্ধ ছিল হকের সাথেবাতিলের,মুসলমানদের সাথে কাফেরের ।ঐতিহাসিকদের মতে, মুসলিমবাহিনী এ যুদ্ধে যদি জয়লাভ না করতে পারতো তাহলে ইসলাম পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে মুছে যেতো।এ যুদ্ধ বিজয়ের পর নতুন যুগের সূচনা হয়। মহান আল্লাহর সাহায্যে মুসলিম সৈন্যরা বিজয় লাভ করেন। যুদ্ধে বিজয়ের পর অমুসলিমদের প্রতি মুসলমানদের আচরণ ছিলো আরেক ঐতিহাসিক ঘটনা। পরাজিতদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা হয়। তাদেরকে আরামে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। শিক্ষার বিনিময়ে বন্দী মুক্তির ঘোষণা দেন হযরত মুহাম্মদ (সঃ)।বদর যুদ্ধে বন্দীদের মুক্তিেণ আদায়ের শর্তে মুক্তি দেয়া হয়। যে সব বন্দী মুক্তিপণ আদায় করতে সক্ষম ছিলোনা তাদেরকে ১০ জন মুসলিম শিশুকে লেখা পড়া শেখানোর শর্তে মুক্তি দেয়া হয়। এ ঘটনা ছিল যুদ্ধ ও শিক্ষার ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত। হযরত যায়েদ বিন সাবিত (রাঃ) এভাবে লেখা পড়া শিখেছিলেন। বদর যুদ্ধের বিজয়ের পথ ধরেই পরবর্তীতে মুসলিম জাতি অপ্রতিরোধ্য গতিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে।

লেখকঃসাংবাদিক,কলামিস্ট



 

Show all comments
  • আশরাফুল ইসলাম খান ১৩ মে, ২০২০, ৩:২৫ এএম says : 0
    ইসলামে জন্য আমাদের নবী অনেক কস্ট করেছেন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ