Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত : বদর যুদ্ধে মুসলিম জনসংখ্যার পরিমাণ

মোহাঃ আসাদুজ্জামান আসাদ | প্রকাশের সময় : ১৩ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৪ এএম

বিশ্ব নবী (দ) নবুয়তের সুদীর্ঘ তের বছর দ্বীনি দাওয়াতি কাজ প্রচারে মক্কায় মুশরিকদের হাতে অমানুষিক জুলুম-নির্যাতন ও অত্যাচারের শিকার হোন। প্রকৃত পক্ষে রিসালাতের দায়ীত্ব যথাযথ ভাবে হাসিল করতে পারেন নি। অবশেষে বিশ্ব নবী (দ) আল্লাহর নির্দেশে মাতৃভুমি মক্কা ছেড়ে মদিনায হিজরত করেন। মদিনায় অধিক প্রচেষ্টায় ইসলাম প্রচার-প্রসারে আত্ন নিয়োগ করেন।

বদরের যুদ্ধ একটি যুগাস্তর কারী ঘটনা। বিশ্ব নবী (দ) যখন মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায়। তখন মক্কার কুরাইশদের চিন্তা,কিভাবে ইসলাম ও মুসলমানদের মুলোৎপাটন করা যায়। মুশরিকরা শেষে একান্ত অভিজ্ঞ নেতা আবু সুফিয়ানকে সিরিয়ায় বানিজ্যে পাঠান।বানিজ্য লব্ধ অর্থে ইসলাম,নবী (দ) এবং মুসলমানদের মুলোৎপাটন করবেন। ইতি মধ্যে বিশ্ব নবী (দ) সংবাদ পান যে,আবু সুফিয়ানের বানিজ্য সিরিয়া থেকে মক্কায় প্রর্ত্যাবতন করছে। বিশ্ব নবী (দ) তাদের কাফেলা অবরোধের নিমিত্তে সাহাবাদের নিয়ে মদিনা থেকে রওয়ানা হোন। গোপনে আবু সুফিয়ান এ সংবাদ পায। সে দমদম ইবনে আমর গিফারীকে মক্কা প্রেরন করে, যাতে কুরাইশরা আবু সুফিয়ানের বানিজ্যকে নিরার্পত্তা দেয়।কুরাইশগণ আবু সুপিয়ানকে নিরাপত্তায়পুর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে মদিনায় অগ্রসর হয়। আবু সুফিয়ান কৌশলে মদিনার পথ ছেড়ে সামুদ্রিক উপকুলে মুসলমানের আগমনের পুর্বেই মক্কার দিকে রওয়ানা হোন।কুরাইশদের সংবাদ দেয়, আমরা মুসলমানদের আক্রমন থেকে বেচে গেছি।তোমরা মক্কায় ফিরে যাও। আবু জেহেল গর্ব ,অহংকারী মনের অধিকারী।সে গর্বের বশবর্তিতে মক্কায় ফিরে না গিয়ে বদর প্রান্তে উপস্থিত হয়। বিশ্ব নবী (দ) সফরা নামক স্থান অতিক্রম করে ওয়াদীয়ে যফরান এসে কুরাইশদের অবস্থা জেনে সাহাবাদের সাথে পরামর্শ করেন। সাহাবাদের পুর্ণ সমর্থন,মনোবল ও মানসিক প্রস্তুতি দেখে সামনে অগ্রসরের নিদেশ দেন। সাহাবাগণ ওয়াদিয়ে যফরান থেকে বদরে সন্নিকটে এসে অবস্থান করেন। এভানে মহান আল্লাহ হক ও বাতিলের প্রথম যুগে মুসলমানকে মহা বিজয় দান করেন।

বদরের যুদ্ধের ব্যাপারে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ঘোষনা করেন,‘বদরের যুদ্ধে তোমরা যথন নিঃসহায় ছিলে,আল্লাহ তোমাদের সাহার্য্য করেছেন।সুতরাং তোমরা আল্লাহ কে ভয় কর,যাতে তোমরা আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হও।স¥রন করুন,যখন আপনি মুমিনদের কে বলেছিলেন যে,একি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে,তোমাদের প্রতি পালক তোমাদেরকে তিন হাজার ফেরেস্তা দ্বারা সাহার্য্য করবেন?যদি তোমরা ধৈর্য্য ধারন কর,আল্লাহকে ভয় করে চল এবং কাফিরেরা অর্তকিত ভাবে তোমাদের উপর আক্রমন করে,তখন আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে পাচ হাজার চিহিৃত ফেরেস্তা দ্বারা সাহার্য্য করবেন। কেবল মাত্র তোমাদের সু-সংবাদ এবং তোমাদের আন্তরিক প্রশাস্তির নিমিত্তে আল্লাহ এ ব্যবস্থা করেছেন এবং বিজয় শুধু মাত্র পরাক্রাস্ত ও প্রজ্ঞাময় আল্লাহ পক্ষ থেকেই আসে। এ অবস্থা এ জন্য গ্রহন করা হয়েছে যে,যাতে কাফিরদের এক অংশকে নিশ্চিহৃ করা অথবা লাঞ্চিত করা হয়। এ অবস্থায় তারা নিরাশ হয়ে ফিরে যায়’। (আল কোরআন)।

আজকের আলোচ্য বিষয় বদরের যুদ্ধের ঘটনা বর্ননা নয়।বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহন কারী মুসলিম মুজাহিদের সংখ্যা কত ? বদরের যুদ্ধে মুসলিম মুজাহিদের সংখ্যা বিভিন্ন জন্য বিভিন্ন ভাবে বর্ণনাা করেন। বিশ্ব নবী (দ) এর বিশিষ্ট জলিল কদর সাহাবী ‘‘হযরত বারা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,বদরের দিন আমাকে ও ইবনে উমর(রা) কে ছোট মনে করা হয়েছিল।এ যুদ্ধে মুহাজিরদের সংখ্যা ছিল ষাটের বেশী এবং আনসারদের সংখ্যা ছিল দুই শত চল্লিশেরও কিছু বেশী’’। বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহন কারী সাহাবীদের সংখ্যার ব্যাপারে বিভিন্ন রকম মত পার্থক্য রয়েছে। যেমন-ইবনে ইসহাকের রিওয়াত মতে মুসলিম মুজাহিদের সংখ্যা তিন শত চৌদ্দজন।হজরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা) থেকে বর্ণিত মুসলিম শরীফের একটি রিওয়াত মতে মুজাহিদের সংখ্যা তিন শত পাচ জন।আল-ইকলীলের রিওয়াত মতে মুজাহিদের সংখ্যা তিন শত পনের জন।বাযযারের রিওয়াত মতে মুজাহিদের সংখ্যা তিন শত সতের জন। হাফিজ ইবনে হাজার,আল্লামা আইনি এবং ইবনে ইসহাক বলেন,বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহন কারী সাহাবীদের মুল্য সংখ্যা হচ্ছে-তিন শত পাচ জন অথবা তিন শত ছয় জন। অবশিষ্ট আট জন সাহাবীর জন্য বিশ্ব নবী (দ) গণীমতের অংশ ও জিহাদের সওয়াবে শামীল হওয়ার ঘোষনা দিয়েছেন।এ হিসাবে বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহন কারী সাহাবীর সংখ্যা তিন শত তের অথবা তিন শত চৌদ্দ জন। তাছাড়া বদর যুদ্ধে এমন কিছু সংখ্যক ছোট ছেলেও অংশ গ্রহন করেছিল,যাদের কে বিশ্ব নবী(দ) যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করেন নি।

ঐতিহাসিক বদরের যুদ্ধে মুসলিমদের জন্য রহমত। এ যুদ্ধে বিজয় লাভের মাধ্যমে চারি দিকে ইসলাম ধর্ম তড়া তাড়ি ছড়িয়ে পড়েছে। আট জন সাহাবী বিভিন্ন কারনে এ যুদ্ধে গ্রহন করতে পারেন নি। তাদের মধ্যে হজরত উসমান ইবনে আফফান।তিনি বিশ্ব নবীর কন্যা উসমান (রা) স্ত্রী হজরত রুকাইয়ার সেবা ও পরিচর্যার জন্য মদিনায় ছিলেন। হজরত তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ ও সাঈদ ইবন যায়েদ (রা) এ দুজন কে বিশ্ব নবী কুরাইশ বাহিনীর খোজ খবর নেয়ার জন্য মদিনার বাইরে প্রেরন করেন। আবু লুবাবা (রা) কে হজরত রাসুল (দ) মদিনার খলিফা নিযুক্ত করেন।হারিস ইবনে হাতিবকে নবী (দ) রাওহা নামক স্থান হতে বনী আমর ইবনে রাউফের নিকট প্রেরন করেন।আসেম ইবনে আদী (রা) কে হজরত রাসুল (দ) আওয়ালীয়ে মদিনায় স্বীয় খলিফা নিযুক্ত করেন।হারিছ ইবনে সাম্মাহ (রা) ও খাওয়্যাত ইবনে যুবায়র (রা) এ দু’জন কে বিশ্ব নবী (দ) রাওয়া হতে মদিনায় ফেরত পাঠান।কারন তারা সেখানে আহত হয়ে পড়েন।বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহন কারী সহিাবীদের সংখ্যার ব্যাপারে‘‘হজরত বারা (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে,তিনি বলেন,রাসুল (দ) এর যে সব সাহাবী বদরে অংশ গ্রহন করেছেন তারা আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, তাদের সংখ্যা তালুতের যে সব সাহাবা(জিহাদে শরীক হওয়ার নিমিত্তে তার সাথে) নদী পার হয়েছিলেন তাদের সম পরিমান ছিল। তাদের সংখ্যা ছিল তিন শত দশেরও কিছু বেশী। বারা (রা) বলেন, আল্লাহর কসম! ইমানদার ব্যতীত আর কেউই তার সাথে নদী অতিক্্রম করেনি’’।
পরিশেষে বলতে চাই,আমরা মোমিন।বদরের যুদ্ধ মোমিনের জন্য বড় ধরনের মোকাবিলা।এ যুদ্ধে মহান আল্লাহ মোমিনের উপর অগনিত রহম ও করুনা নাজিল করেন।মোমিনের উচিত আল্লাহকে যথাযথ ভাবে ভয় করা এবং আল্লাহ করুনাকে স্মরণ করা। এই হোক আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক : পঞ্চগড় নুরুন আলা নুর কামিল মাদ্রাসা, প্রভাষক আরবী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ