Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দেশে রেমডিসেভির উৎপাদনের উদ্যোগ

| প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০২০, ১২:০৬ এএম

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা চলছে। বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের অনেকগুলো কোম্পানি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান কোভিড-১৯ ভাইরাসে ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের দ্বারপ্রান্তে থাকলেও ভ্যাকসিনের শতভাগ সাফল্যের ব্যাপারে আশাবাদী হওয়ার মত সংবাদ এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। এহেন বাস্তবতায় অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রেমডিসেভির করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকারিতা সম্পর্কে মার্কিন সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার দাবি করেছে। মার্কিন কোম্পানি গিলেড সায়েন্সের পেটেন্টভুক্ত এই জরুরী ওষুধটি এই মুহূর্তে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে একমাত্র কার্যকর ওষুধ হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় বিশ্বব্যাপী এর চাহিদা তুঙ্গে। এ প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ ঘোষিত উন্নয়নশীল দেশের পেটেন্ট রেয়াদের সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের নামি-দামি কোম্পানিগুলো রেমডেসিভির উৎপাদনে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের বেশ কয়েকটি ওষুধ কোম্পানি ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বহু দেশে ওষুধ রফতানি করছে। এর মধ্যে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস অন্যতম। ৬টি দেশীয় ওষুধ কোম্পানি এই মুহূর্তে কাঁচামাল আমদানি করে রেমডেসিভির উৎপাদনে তোড়জোড় শুরু করেছে। বেক্সিমকো ফার্মা, ইনসেপ্টা, বিকন ফার্মা, এসকায়েফ, স্কয়ার ফার্মা ও হেল্থকেয়ার কোম্পানী প্রতিযোগিতামূলকভাবে ওষুধ বাজারে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বেক্সিমকো ফার্মা চলতি মাসের মধ্যেই রেমডিসেভির বাজারজাত করার বিষয়ে নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে। আরো অন্তত দুটি কোম্পানি যথাশীঘ্র ওষুধটি বাজারে ছাড়ার ব্যাপারে আশাবাদী বলে জানিয়েছে। করোনা মহামারীর হতাশা ও আতঙ্কে এটি অবশ্যই একটি আশা জাগানিয়া সংবাদ।
কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিরুদ্ধে রেমডিসেভিরের শতভাগ কার্যকারিতা এখনো সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত নয়। তবে মার্কিন ওষুধ প্রশাসনের ট্রায়ালে রেমডিসেভির ইনজেকশন রোগের দ্রæত নিরাময়ে কার্যকর বলে দাবি করা হয়েছে। সারাবিশ্ব যখন করোনা মহামারীর আতঙ্কে বিপর্যস্ত তখন একটি কার্যকর ওষুধ আবিষ্কার ও উৎপাদনের লক্ষ্যে কোটি কোটি মানুষের অধীর অপেক্ষা থাকা স্বাভাবিক। সেই সাথে এ ধরনের ওষুধ নিয়ে বাণিজ্যিক মুনাফাবাজির আশঙ্কাও করা হচ্ছে। যদিও এমন একটি বৈশ্বিক মহামারিতে প্রাণঘাতী ভাইরাসের ওষুধ নিয়ে বাণিজ্যিক ফায়দা হাসিলের সুযোগ জাতিসংঘ, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নির্দেশনা ও তদারকির বাইরে থাকার সুযোগ খুব কম। আমেরিকায় রেমডিসেভির বাজারমূল্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, এটি একটি দামি ওষুধ, গিলেড সায়েন্স তাদের উৎপাদিত প্রথম ব্যাচের ১৫ লাখ ইউনিট ওষুধ মার্কিন জনগণের জন্য বিনামূল্যে দেয়ার ঘোষণা দিলেও তারা এখনো ওষুধটির বাজারমূল্য নির্ধারণ করেনি বলে জানা যায়। তবে বাংলাদেশের অগ্রসর ওষুধ কোম্পানিগুলো রেমডিসেভিরে প্রতি ভায়ালের মূল্য ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা হতে পারে বলে জানিয়েছে। একেকজন রোগীর জন্য এই ইনজেকশন ৬ থেকে ১০ ডোজ লাগতে পারে বলে জানা গেছে। এ হিসেবে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হবে রেমডেসিভির পেছনে। দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তবে ওষুধের উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনার পাশাপাশি সরকারি ভতুর্কির মাধ্যমে সবার জন্য সুলভ মূল্যে ওষুধটি ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার ব্যবস্থা এখন সময়ের দাবি।
ওষুধ শিল্পে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ অবস্থান এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। চলমান করোনাভাইরাসে কার্যকর হিসেবে প্রথম আলোচিত হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ওষুধ উৎপাদন, বিপণন ও বিভিন্ন দেশে রফতানিতে দেশীয় কয়েকটি কোম্পানির ঐতিহ্য রয়েছে। এবার আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে স্বল্পতম সময়ে রেমডিসেভির উৎপাদন ও বাজারজাত করতে পারলে, তা হবে বৈশ্বিক দুর্যোগের সময় দেশের ওষুধ শিল্পের জন্য একটি মাইলফলক অর্জন। তবে আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা যাই হোক, দেশের চাহিদা পূরণের দিকেই শতভাগ নজর দিতে হবে। কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে ওষুধ কোম্পানিগুলোকে শুল্ক রেয়াত দেয়া, দেশীয় বাজারে কমমূল্যে ওষুধ বিক্রির শর্তে সরকারি ভর্তুকি ও প্রণোদনার পাশপাশি ওষুধের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণে ওষুধ প্রশাসনকে স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। যেহেতু ৬টি কোম্পানি এই মুহূর্তে রেমডিসেভির উৎপাদনের চেষ্টা করছে, ভবিষ্যতে হয়তো আরো অনেক কোম্পানি এই দলে যুক্ত হবে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করাও তখন হয়তো সম্ভব হতে পারে। তবে এ সময়ে বাণিজ্যিক চিন্তার বাইরে গিয়ে ওষুধ কোম্পানিগুলোকে দেশে জরুরী চাহিদা পূরণে মনোনিবেশ করতে হবে। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে। সারাবিশ্বে করোনার কোনো প্রতিষেধক বা কার্যকর ওষুধ না থাকায় রেমডিসেভিরের সাফল্যে মানুষের মধ্যে যে আশার সঞ্চার হয়েছে, তা উৎপাদনে বেক্সিমকোসহ দেশীয় কোম্পানিগুলো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে, এটাই সকলের প্রত্যাশা। রেমডিসেভির উৎপাদনে বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলোর সাফল্যের সাথে একটি বৈশ্বিক মহামারীর দুযোর্গ মোকাবিলা এবং আন্তর্জাতিক ওষুধশিল্পে বাংলাদেশের বাজার সম্প্রসারিত করার বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর স্বার্থ নিহিত আছে। আমরা তাদের সাফল্য প্রত্যাশা করছি।



 

Show all comments
  • শওকত আকবর ৮ মে, ২০২০, ৫:৫০ পিএম says : 0
    প্রিয় সম্পাদক,আপনার লেখা সম্পদকীয় পড়ে বুঝলাম দরিদ্র রোগী এতো টাকা খরচ করতে পারবে ও না,চিকিৎসা ও হবেনা। অত এব হে আল্লাহ তুমিই ভরসা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভ্যাকসিন

২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন