পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
অঘোষিত লকডাউনের মধ্যেই ধীরে ধীরে গার্মেন্টসহ দোকানপাট খুলে দেয়া হচ্ছে। গত ২৬ এপ্রিল থেকে সীমিত পরিসরে গার্মেন্ট খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পিলপিল করে শ্রমিকরা ঢাকামুখী হয়েছে। গতকাল থেকে পুনোর্দ্যমে গার্মেন্ট খুলে দেয়া হয়েছে। গার্মেন্ট খোলার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি কারখানা কর্তৃপক্ষকে কঠোরভাবে মেনে চলা এবং প্রত্যেক শ্রমিককে ৬ ফুট দূরত্বে বসার ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, হাত ধোয়া এবং মাস্ক পরার বিষয়টি নিশ্চিত করা হলেও সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়নি। অধিকাংশ গার্মেন্ট ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর হওয়ায় দেশের সিংহভাগ শ্রমিকের বসবাসও এসব এলাকায়। অথচ করোনার কেন্দ্রস্থল হিসেবে এসব এলাকা চিহ্নিত। গার্মেন্ট খোলার পর ইতোমধ্যে সাভারে নতুন করে ৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এদের প্রত্যেকেই গার্মেন্ট শ্রমিক। এর প্রতিক্রিয়ায় সাভারের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সাভারকে পুরোপুরি লকডাউন করতে প্রশাসনের কাছে চিঠি দিয়েছে। এদিকে রাজধানীর দোকান মালিক সমিতি মার্কেট খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা যায়। দেখা যাচ্ছে, করোনার প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে, এর মধ্যেই যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়াই লকডাউন শিথিল করে সবকিছু খুলছে।
আমাদের দেশে এমন একটা প্রবণতা রয়েছে যে, সবকিছুতেই উন্নত বিশ্বের উদাহরণ টানা হয়। সব ব্যাপারে যে উদাহরণ সঠিক হয় না, তা করোনা বুঝিয়ে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স, ইটালি, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলো করোনার মধ্যেই লকডাউন ধীরে ধীরে শিথিল করছে। তবে এই শিথিলে যাতে করোনা বিস্তার লাভ না করে সে ব্যবস্থাও করে রেখেছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থায় থাকা যুক্তরাষ্ট্র গত শুক্রবার তার উদ্ভাবিত টিকা রেমডিসির ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। এ টিকা করোনার চিকিৎসায় কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও লকডাউন তুলে দিতে পারছে। দেশটি প্রতিষেধকের ব্যবস্থা করেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যান্য দেশও তাদের করোনা পরিস্থিতি বুঝে লকডাউন শিথিল করছে। দেশগুলোতে করোনার প্রকোপ কমে আসার পর এবং যথাযথ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা প্রস্তুত করেই তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরাও যেন উন্নত বিশ্বের পদাঙ্ক অনুসরণ করে লকডাউন শিথিল করছি। অথচ আমাদের প্রতিষেধক দূরে থাক, ন্যূনতম প্রস্তুতিই নেই। অপ্রতুল টেস্টিং প্রক্রিয়া, হাসপাতালগুলোতে অপর্যাপ্ত চিকিৎসা, অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার চিত্র নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে অসংখ্য ভুক্তভোগীর হাসপাতালের অপর্যাপ্ত চিকিৎসার অভিজ্ঞতার কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকের আত্মীয়-স্বজনের চিকিৎসা করতে গিয়ে কী ধরনের হয়রানির শিকার এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছে, তার করুণ চিত্র বিধৃত হয়েছে। করোনার বিষয়টিকে যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুরুতে গুরুত্ব দেয়নি এবং কোনো ধরনের প্রস্তুতি নেয়নি, তা বিশেষজ্ঞরা বারবার বলেছেন। তারা এও বলেছেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত ছিল করোনাভাইরাস আমাদের দেশে আসবে না। এ চিন্তা থেকে প্রস্তুতি নেয়ার ক্ষেত্রে তারা অনেকটা নেব-নিচ্ছি’র মধ্যে ছিল। পরবর্তীতে করোনা যখন এসে পড়ে, তখন দৌড়ে কূল পায়নি, এখনও পাচ্ছে না। যদিও সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, তারা প্রস্তুত ছিল, তবে এ কথা বিশ্বাসযোগ্য হয়নি। সাধারণ মানুষের মধ্যে এখন এ ধারণা বদ্ধমূল করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে যাওয়া মানে চিকিৎসা না পাওয়া। হায়াৎ থাকলে বাঁচবে, না থাকলে বাঁচবে না। অন্যদিকে যে চিকিৎসক চিকিৎসা দেবে এবং নার্স সেবা দেবে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তাদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীই ছিল না। এখন যে কয়েক শ’ চিকিৎসক ও নার্স করোনায় আক্রান্ত তার মূল কারণই হচ্ছে যথাযথ প্রস্তুতির অভাব। যেখানে চিকিৎসকরাই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে, সেখানে রোগীর চিকিৎসা পাওয়ার বিষয়টি দিল্লি দূরস্ত’র মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। টেস্টের ক্ষেত্রেও অপর্যাপ্ত ব্যবস্থা দৃশ্যমান। বিএসএমইউ’তে টেস্ট শুরু করার পর সেখানে গাদাগাদি করে মানুষের যে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়, তাতে রোগ নির্ণয়ের চেয়ে রোগ বিস্তারকেই ত্বরান্বিত করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। দেশের করোনা পরিস্থিতি সামাল দেয়ার ক্ষেত্রে এরকম হ-য-ব-র-ল অবস্থার মধ্যেই সরকার লকডাউন শিথিল করছে। বিষয়টি অনেকটা ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দারের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অস্বীকার করার উপায় নেই, দেশর অর্থনীতির স্বার্থে কোনো না কোনো সময় লকডাউন শিথিল করতে হবে। আমাদের দেশের মতো উন্নয়নকামী দেশের পক্ষে মাসের পর মাস লকডাউন করে চলা সম্ভব নয়। সেই অর্থনৈতিক শক্তি আমাদের নেই। আবার করোনার মতো দুধারি তলোয়ারের মধ্যে পড়লে, বিপদ কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে তা এখন টের পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় যথাযথ প্রস্তুতিই লোকসান কমানোর একমাত্র পথ হতে পারে। দুঃখের বিষয়, এই প্রস্তুতিই সরকার কার্যকরভাবে নিতে পারেনি। এক ভয়াবহ পরিস্থিতি বা করোনার পিকটাইমের মধ্যেই লকডাউন শিথিল করছে। এতে বিষয়টি হিতে বিপরীত হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, একবারে লকডাউন তুলে দেয়া ঠিক হবে না। ধীরে ধীরে লকডাউন তুলতে হবে। আমাদের যেহেতু এখনো পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাব রয়েছে, তাই আমাদেরকেও একবারে লকডাউন না তুলে ধীরে ধীরে তুলতে হবে। পাশাপাশি করোনা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা উন্নয়নে আরও দ্রুত কাজ করতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি পালনে কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।