Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সামাজিক দূরত্ব নির্দেশনা ভেঙে পড়ছে

| প্রকাশের সময় : ২৯ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০৬ এএম

দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেড়ে চলার মধ্যেই অঘোষিত লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব নির্দেশনা ভেঙ্গে পড়তে শুরু করেছে। দরিদ্র মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার সুরাহা না হওয়ার পাশাপাশি এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে হঠাৎ করেই সাধারণ ছুটিতে থাকা হাজার হাজার গার্মেন্ট কর্মীকে ঢাকায় জড়ো করার অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে করোনাভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণ বাড়িয়ে তোলা হয়েছে। বাংলাদেশে করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাব মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। সে পর্যন্ত সর্বোচ্চ সতর্কতা ও সামাজিক দূরত্ব নির্দেশনা বাস্তবায়নেরর মাধ্যমে সংক্রমণ যতটা সম্ভব কমিয়ে রাখাই এখনকার মূল লক্ষ্য। অনেক আগে শুরু হওয়া ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতেও সংক্রমণের হার এখন কিছুটা স্তিমিত হয়ে এলেও অধিকাংশ দেশে লকডাউন, শাটডাউন প্রত্যাহার করা হয়নি। কোনো কোনো দেশে অতি সীমিত আকারে কিছু কিছু সেক্টর খুলে দিলেও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পুনরায় পুরোপুরি চালুর ব্যাপারে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করতে দেখা যাচ্ছে। সে দিক থেকে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ এখনো তার সর্বোচ্চ পর্যায়ে উপনীত হয়নি। রাস্তায় সেনাবাহিনীর টহলসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি থাকার পরও দেশের বিভিন্ন স্থানে রাস্তায়, বাজারে ব্যাপক জনসমাগম রোধ করা এমনিতেই কঠিন ও জটিল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে কথিত সীমিত আকারে গার্মেন্ট কারখানা চালুর সিদ্ধান্ত করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কাই প্রবল হয়ে উঠেছে। 

ক্রমবর্ধমান করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলায় দেশে সাধারণ ছুটির মেয়াদ কয়েক দফা বাড়িয়ে ৫ মে পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। চলমান করোনা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে দেশের স্কুল-কলেজের ছুটির মেয়াদ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত হতে পারে বলে সোমবার প্রধানমন্ত্রী টেলিকনফারেন্সে ঘোষণা দিয়েছেন। সেখানে সাধারণ ছুটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আবারো হাজার হাজার গার্মেন্ট কর্মীকে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ফ্যাক্টরিগুলোতে জড়ো করার অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত কীভাবে নেয়া হলো তা বোধগম্য নয়। এমনিতেই সাধারণ ছুটি ও সামাজিক দূরত্ব নির্দেশনা উপেক্ষা করে মানুষ যেভাবে রাস্তায়, বাজারে বেরিয়ে আসছে তাতে সাধারণ ছুটিসহ সরকারের সব উদ্যোগই ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় সাধারণ মানুষের অসচেতনতায় সামাজিক দূরত্ব নির্দেশনা এমনিতেই অকার্যকর হয়ে পড়তে শুরু করেছিল। এখন সীমিত পরিসরে গার্মেন্ট কারখানা চালুর ঘোষণা দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আবারো গার্মেন্ট শ্রমিকদের ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের শিল্পাঞ্চলগুলোতে জড়ো করার মধ্য দিয়ে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সরকারি সব উদ্যোগ এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার আন্তর্জাতিক নির্দেশনাবলী ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে করোনা মহামারী ইউরোপ-আমেরিকার মতো ব্যাপক সংক্রমণ ও প্রাণঘাতী রূপ নিলে দেশের সামাজিক বাস্তবতা ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা ভেবে আতঙ্কিত হতে হয়।
প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকায় করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ছে। দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৬০ জেলায় করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ নতুন করে সংক্রমিত হচ্ছে। সব শ্রেণির মানুষের পাশাপাশি ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীসহ সম্মুখ সারির করোনাযোদ্ধারাও ব্যাপক হারে করোনা সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন। পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে সদস্যরা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে, তারাও ক্রমবর্ধমান হারে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শিকার হওয়ায় সামাজিক সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও মহামারী রোধের উদ্যোগগুলো উদ্বেগজনক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। এহেন বাস্তবতায় গার্মেন্টের মতো শ্রমঘন শিল্প খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে করোনাভাইরাসে লকডাউনের ক্ষতি সমন্বয় করতে সরকার ইতোমধ্যে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার বেইল-আউট প্রকল্প হাতে নিয়েছে। গত সোমবারও প্রধানমন্ত্রী ব্যাবসায়ীদের অভয় দিয়েছেন। এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, আমাদের জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ গার্মেন্ট শিল্পের উপর লক্ষকোটি টাকার বিনিয়োগ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠির লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ নির্ভরশীল। কিন্তু যেখানে পশ্চিমা দেশগুলোতে লকডাউনসহ বড় ধরনের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে, সেখানে আমাদের গার্মেন্ট কারখানাগুলো থেকে করোনা সংক্রমণ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়লে তা রানাপ্লাজা ট্রাজেডির মতো পুরো সেক্টরের জন্য বড় ধরনের বিপর্যয়কর হয়ে ওঠার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি ও লকডাউনের মধ্যেও একবার হাজার হাজার গার্মেন্ট শ্রমিককে পায়ে হাঁটিয়ে রাজধানীতে জড়ো করার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে তাদেরকে বাড়িতে ফেরত পাঠানোর সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এখখ আবারো করোনাভাইরাসের হটস্পটগুলোতে তাদের নিয়ে আসার পরিণাম নিয়ে আশঙ্কা ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ক্রয়াদেশ বহাল থাকায় সীমিত আকারে কিছু গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি খুলে উৎপাদন চালু রেখে বাজার ধরে রাখার চেষ্টাকে সমর্থন করা গেলেও তা হতে হবে সামাজিক শারীরিক দূরত্ব, স্বাস্থ্যবিধি ও সুরক্ষাব্যবস্থা যথাযথভাবে নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে। অধিকাংশ গার্মেন্ট কারখানায় সে ধরনের কোনো ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না। আমাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ যেমন রক্ষা করতে হবে, অন্যদিকে একটি বৈশ্বিক মহামারীর কবল থেকে মানুষের জীবন রক্ষার তাগিদকে অগ্রাহ্য করাও সম্ভব নয়। এটা ঠিক যে, এক সময় গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিসহ অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালু করতেই হবে। কিন্তু তার জন্য সবার আগে প্রয়োজন, সুচিন্তিত ও পরিকল্পিত উপায়ে উপযুক্ত সময় ও পন্থা নির্ধারণ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লকডাউন

৭ এপ্রিল, ২০২২
১৩ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন