পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে। অনেক আগে শুরু হওয়া ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতেও সংক্রমণের হার এখনো কমেনি। এ কারণে দুই মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও অধিকাংশ দেশে লকডাউন, শাটডাউন প্রত্যাহার করা হয়নি। সে দিক থেকে বাংলাদেশে সংক্রমণ এখনো তার সর্বোচ্চ পর্যায়ে উপনীত হয়নি। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিচ্ছেন। এহেন বাস্তবতায় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ রাখা, সব মানুষকে ঘরে অবস্থান করা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনো বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে সাধারণ ছুটির মেয়াদ আরেকদফা বাড়িয়েছে সরকার। তবে রাস্তায় সেনাবাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতির পরও দেশের বিভিন্ন স্থানে রাস্তায়-বাজারে ব্যাপক জনসমাগম লক্ষ করা যাচ্ছে। কিছু মানুষ জরুরি প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে যাবে, এটা হয়তো রোধ করা সম্ভব নয়। এর বাইরে অপ্রয়োজনীয় কাজে, খোঁড়া অজুহাতে রাস্তায়, বাজারে বের হচ্ছে অনেক মানুষ। বিশেষতঃ ইতোমধ্যে সংক্রমিত এলাকার লকডাউন ভেঙ্গে অন্যত্র সরে যাওয়ার যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তাতে সামাজিক সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ক্রমবর্ধমান করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে পূর্ব ঘোষণা অনুসারে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে সাধারণ ছুটির মেয়াদ ৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু মানুষ যেভাবে রাস্তায়-বাজারে বেরিয়ে আসছে তাতে সাধারণ ছুটিসহ সরকারের সব উদ্যোগই ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, খোদ রাজধানী ঢাকায় সাধারণ মানুষ সামাজিক দূরত্ব নির্দেশনা মানছে না। এ কারণেই প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকায় করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ছে এবং সে সব এলাকা অনির্দিষ্ট লকডাউনের আওতায় নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একজন করোনাভাইরাস বহনকারীর মাধ্যমে পুরো পরিবার এবং প্রতিবেশীরাও সক্রমণের ঝুঁকিতে পড়ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো অর্থনৈতিক পরাশক্তি ও শিল্পোন্নত রাষ্ট্রে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ করোনাভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যুর শিকার হচ্ছে, সেখানে দরিদ্র, জনবহুল ও দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা সহজেই অনুমেয়। দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৫৫ জেলায় করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ নতুন করে সংক্রমিত হচ্ছে। তবে সবচেয়ে উদ্বেগের ব্যাপার হচ্ছে, সব শ্রেণির সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরাও ব্যাপক হারে করোনা সংক্রমণের শিকার হচ্ছে। একইভাবে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে সদস্য করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে তারাও এখন করোনা সংক্রমণের শিকার হচ্ছে। ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যাপক সংখ্যক করোনা সংক্রমণের শিকার হলে এক সময় সামাজিক দূরত্ব নির্দেশনা বাস্তবায়নসহ পুরো সামাজিক শৃঙ্খলা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়তে পারে। সেই সাথে অনিয়ন্ত্রিত সামাজিক সংক্রমণ দেশে ভয়াবহ ট্রাডেজির জন্ম দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে দুই মাসের বেশি সময় ধরে লকডাউন থাকলেও স্থবির অর্থনীতি পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। মার্কিন সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) পক্ষ থেকে করোনাভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভ বা দ্বিতীয় ধাক্কা আরো ভয়াবহ পরিণাম ডেকে আনতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ এখনো করোনা সংক্রমণের প্রথম ধাপ অতিক্রম করেনি। এখনো সংক্রমণের সম্ভাব্য বিস্তৃতির তুলনায় শনাক্তকরণের হার খুবই কম। ইউরোপের দেশগুলো যেখানে প্রতিদিন লক্ষাধিক লোকের টেস্ট করছে, সেখানে ১৭ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে ২৪ ঘণ্টায় করোনা পরীক্ষার হার এখনো ৩ হাজারের বেশি নয়। সামাজিক সংক্রমণ রোধ করতে হলে এবং যথাশীঘ্র অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করতে হলে প্রতিদিন লক্ষ মানুষকে করোনা টেস্টের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এ জন্য প্রথমেই ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও গণমাধ্যম কর্মীদের সংক্রমণ প্রতিরোধী ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। করোনা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোর প্রস্তুতি, স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসার মান সাধারণ মানুষের কাছে এখনো প্রশ্নবিদ্ধ। করোনা মহামারীর কারণে দেশের সাধারণ স্বাস্থ্য সেবায় বড় ধরনের সমন্বয়হীনতা এবং অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে। প্রয়োজনীয় সুরক্ষাব্যবস্থা না থাকায় ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগীদেরকে প্রাপ্য সেবা থেকে বঞ্চিত করছে। জরুরি স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে ঘুরতে রোগী মৃত্যুর দুঃখজনক খবর পাওয়া যাচ্ছে প্রতিদিনই। যে সব দেশে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ করোনা মহামারীতে মারা যাচ্ছে সেখানেও এমন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে না। এ ধরনের বাস্তবতা দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার লক্ষণ। ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিইসহ ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি দরিদ্র, দিনমজুর ও কর্মহীন মানুষের খাদ্যসহ অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমেই কেবল সামাজিক দূরত্ব নির্দেশনা এবং করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা দূর করে সংশ্লিষ্ট সকলের আরো কঠোর ও পেশাদারী ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।