Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

চীনের ভুল স্বীকার, উহানে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ল ৫০%

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৭ এপ্রিল, ২০২০, ২:৫০ পিএম

করোনার উৎপত্তিস্থল চীনের মৃতের সংখ্যা নিয়ে অনেক আগে থেকেই তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। এরই মধ্যে শহরটিতে কভিড-১৯ তে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩ হাজার ৮৬৯ বলছে চীনা কর্তৃপক্ষ। আগের হিসেবের তুলনায় মৃতের সংখ্যার তালিকায় আরো যোগ হয়েছে ১ হাজার ২শ ৯০ জন মানুষ। এতে করোনায় গোটা চীনে এখন মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬৩২ জনে। আগে ছিলো ৩ হাজার ৮৬৯।

তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে চীন। বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলি যখন করোনা-ঝড়ে বিধ্বস্ত, তখন ক্রমে সেরে উঠছে চীন। থেমেছে মৃত্যুমিছিল, কমেছে সংক্রমণ। কিন্তু করোনার উৎপত্তিস্থল উহান শহরে যতজন মারা গেছিলেন বলে সরকারিভাবে বলা হয়েছিল, সেই মোট মৃত্যুর সংখ্যা আগের চেয়ে আরও ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছে চীন। খবর বিবিসির।

কী করে এমনটা হল তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উহান কর্তৃপক্ষের দাবি, অনেক মৃত্যুর সংখ্যা ভুল করে লেখা হয়নি। এছাড়া অনেকেই করোনা পরীক্ষা করানোর সুযোগ পায়নি। পাশপাশি বেশকিছু করোনা রোগী হাসপাতালে আসার আগে বাড়িতেই মারা গেছেন। তাই মৃত্যু নিয়ে সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করা যায়নি তখন। পরে হিসাব করে ভুল ধরা পড়েছে। তবে নতুন করে এভাবে মৃত্যুসংখ্যা প্রকাশ করায় চীন সরকারের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

উহান জানিয়েছে, এর আগে বলা হয়েছিল ২৫৭৯ জন করোনা আক্রান্ত মারা গেছেন উহানে। কিন্তু এখন উহান শহরে আরও ১২৯০ জনের মৃত্যু দেখানো হয়েছে। ফলে এই নিয়ে করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উহান শহরে ৩৮৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে মোট। এরফলে পুরো চীনেও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬৩২ জনে।
করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে ইতিমধ্যেই পশ্চিমাদের তোপের মুখে পড়েছে চীন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি দাবি করেছেন, মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে মিথ্যা বলছে চীন। সংখ্যাটা কম করে ৪২ হাজার বলেও দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু মৃতের সংখ্যা নিয়ে নয়, চীন প্রথম থেকেই করোনা সংক্রমণ নিয়ে তথ্য গোপন করেছে বলেও অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি এও দাবি করা হয়েছে, উহানের গবেষণাগারে জৈবরাসায়নিক অস্ত্র হিসেবে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি।
এবার চীন নিজেই জানাল, তাদের গণনায় ভুল হয়েছিল। কোভিড ১৯-এ চিনের উহানে যত জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল, আদতে সংখ্যাটা নাকি তার চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি। এ কথা সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেও জানিয়েছে উহান কর্তৃপক্ষ।

চীনা সংবাদ সংস্থা সিনহুয়াতেও প্রকাশ করা হয়েছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তথ্য পর্যালোচনায় মৃতের তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরও ১২৯০ জনের নাম। এ সময়ের আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বেড়ে গেছে। ৩২৫ জন বেড়ে হয়েছে ৫০ হাজার ৩৩৩ জন।

ওয়ার্ল্ডোমিটার জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত করোনায় বিশ্বব্যাপী নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৫২১ জনে এবং আক্রান্তের সংখ্যা ২১ লাখ ৮২ হাজার ১৯৭ জন। অপরদিকে ৫ লাখ ৪৭ হাজার ২৯১ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

উহান সরকার বলছে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল না তাদের সংখ্যাটা আগে গণনা করা হয়নি। হাসপাতালগুলোর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় অনেকে বাড়ি বসেই চিকিৎসা নিয়েছে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন বরাবরের মতই তথ্য লুকানোর বিষয়ে সচেষ্ট। শহরের নিউক্লিক এসিড টেস্টিং সিস্টেম থেকে এই নতুন তথ্য সংগ্রহ করা হয় যেখানে করোনা পজেটিভ মানুষ টেস্ট করেছেন, হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। এভাবে স্ক্রিনিং এর মাধ্যমে নতুন মৃতের সংখ্যা বের হয়ে আসছে।
এ বিষয়ে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথের অধ্যাপক বলছেন, মহামারী বা বড় ধরনের সংক্রামক রোগে এমন পরিবর্তন হয়ে থাকে। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রকোপটি ভালোভাবে বুঝতে কতৃপক্ষের উচিত তথ্যগুলো আরো যাচাই, সংশোধন ও নিশ্চিত করা। অনেকে বলছেন বিশৃঙ্খলার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক মৃতের সংখ্যা প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। প্রার্দুভাবের শুরুর দিকে এমন ভুল করাটা স্বাভাবিক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ