পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনা ভীতিতে অস্থির সময় পার হচ্ছে। আর তখনই নীরব প্রকৃতি। শান্ত-স্বাভাবিক ও স্থির প্রকৃতির মাঝে সবার অলক্ষ্যে চলছে ভিন্ন রকম কত কী সুন্দরতার খেলা। প্রকৃতির বিরল মেলা। গতকাল শনিবারসহ গত কয়েকদিন যাবত দেশের প্রধান পর্যটন শহর কক্সবাজারের লাগোয়া বঙ্গোপসাগর সৈকতের কাছাকাছি এসে ডলফিনের দল মনের আনন্দে খেলছে। ওরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। নাচানাচি করছে। নির্জন সৈকতের কিনারেই যেন বসেছে প্রকৃতির আনন্দ মেলা। আর ভেসে আসছে শুধুই সমুদ্রের গর্জন। কারণ জনজট, কোলাহল, যানজটের তর্জন, শব্দদূষণ-আতঙ্ক, পানিতেও দূষণ নেই আপাতত। এ যেন প্রকৃতির স্বস্তি। কারণ পৃথিবী এখন বিরাম নিচ্ছে, প্রকৃতিও।
আর সেসব দৃশ্যবন্দি করেন মোবাইলের ক্যামেরায় স্থানীয় জনাকয়েক লোক। যারা হয়তোবা ভিন্ন কোনো কাজে বা অভ্যাসমতো সমুদ্র সৈকত বালুকায় ঘুরে বেড়াতে গিয়েছিলেন। আর ফেইসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে দেশময়। এমনকি দেশের বাইরের মানুষও তা জানতে পেরেছেন। হয়েছেন অবাকও। কেননা কক্সবাজার সৈকতের কাছাকাছি এমন দৃশ্য আগে তো কেউ দেখেনি কখনো।
প্রকৃতির মাঝে কেনো এই বিরল দৃশ্য? বৈশ্বিক মহামারীর আতঙ্কের মাঝেও অন্যরকম সুন্দরতার কারণ কী? গতকাল এ প্রসঙ্গে জানতে চাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী এবং মেরিন সায়েন্সেস অনুষদের ফিশারিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন জামাল-এর কাছে।
দৈনিক ইনকিলাবকে তারা জানান, মানুষের কোলাহলমুক্ত সুন্দর স্বাভাবিক ও শান্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ পেয়েই ডলফিনরা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কাছাকাছি বেড়াতে ও খেলতে এসেছে- এটাই হতে পারে। তাছাড়া বর্তমান দুর্যোগ সময়ে সমুদ্রে মাছশিকারী ট্রলার, জাহাজ ও বিভিন্ন যান্ত্রিক নৌযান তেমন নেই বললেই চলে। তাই শব্দ-আতঙ্কও নেই সাগরে আপাতত। আর সেই স্বাভাবিক প্রকৃতির পরিবেশ ও সময়কেই ডলফিন দল বেছে নিয়েছে। যা কিছুটা কাকতালীয়ও বটে।
তারা বলেন, ডলফিন সাধারণত মনের আনন্দে এখানে সেখানে খেলে বেড়ায়, ঘুরে বেড়ায়। তারা আসলে প্লে-ফুল সামুদ্রিক প্রাণী। শান্ত প্রাণী। সেইসাথে তারা বেশ বুদ্ধিমানও। ঘ্রাণশক্তিও বেশ প্রখর। অনেক দূর থেকেই কোথায় কি হচ্ছে, সৈকতের পরিবেশ কেমন তা বোঝার ক্ষমতা রাখে। তাছাড়া ডলফিনরা মানুষবান্ধব। মানুষজন সৈকতে ও পানিতে শান্তভাবে চলাফেরা করলে ডলফিনরা মনের খুশিতেই মানুষের কাছে ঘুরতে ফিরতে চলে আসে। কিন্তু আমাদের কক্সবাজারসহ সমুদ্র সৈকতগুলোতে অতিরিক্ত মানুষের ভিড়, চাপ, কোলাহল, শোর চিৎকার, পানিতে বেপরোয়া দাপাদাপি এবং বিশেষ করে সৈকত বাইকের প্রচÐ আওয়াজে সেখানে অতিষ্ঠ হওয়ার মতো পরিবেশ বিরাজ করে আসছে।
কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে লকডাউনের সাথে কক্সবাজার সৈকতসহ সকল পর্যটন কেন্দ্রগুলো এখন বন্ধ। সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। তাই কোলাহলমুক্ত শান্ত ও স্বস্তির একটা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশ পেয়েই সমুদ্রে থাকা ডলফিনরা ঘুরতে ও খেলতে এসে গেছে কক্সবাজার সৈকতের কাছাকাছি। কোলাহলমুক্ত, ঝামেলামুক্ত পরিবেশই তারা বেছে নিয়েছে। কেননা তারা সমুদ্রে অনেক দূর থেকেই ঘ্রাণ ও বুদ্ধির মাধ্যমে ওই পরিবেশ স্বাভাবিক থাকার কথা উপলব্ধি করতে পেরেছে। কেননা ডলফিনরা যথেষ্ট বুদ্ধিমান।
বিজ্ঞানীদ্বয় জানান, বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর সীমায় বিচরণশীল সাধারণত দুই প্রজাতির ডলফিনের সংখ্যাই বেশি দেখা যায়। ‘ইরাবতী ডলফিন’ এবং ‘বটলনোজ ডলফিন’। উভয় জাতের ডলফিনের মূল বিচরণশীল এলাকা বঙ্গোপসাগরের ‘সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড’। যা সুন্দরবনের দক্ষিণে অবস্থিত। সেখানে বন বিভাগ একটি নির্দিষ্টসীমা সংরক্ষিত হিসেবেও চিহ্নিত রেখেছে। যদিও বিচরণক্ষেত্র আরও অনেক বড়।
ওই এলাকায় সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে মনের আনন্দে দলে দলে ডলফিন ঘুরে বেড়ানো, পানির উপরে লাফঝাঁপ ও খেলার দৃশ্য জাহাজযোগে উপভোগের নিজ অভিজ্ঞতা জানিয়ে সমুদ্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, ডলফিন মানুষকে দেখলে কাছে আসে। প্রাকৃতিক পরিবেশে তারা মানুষের বন্ধুর মতোই। এমনকি শান্তভাবে বোট-নৌকা চলাচল করলে সেদিকেও তারা ঘোরে ফেরে। কিন্তু প্রচÐ আওয়াজ ও অস্থিরতা সহ্য করতে পারে না। দূর থেকে ঘ্রাণ পেয়েই তারা সেদিকে থাকে বিমুখ। এখন মহামারী পরিস্থিতিতে সমুদ্র সৈকত জনশূণ্য থাকার সুবাদেই ডলফিনরা মনের সুখে ঘুরতে বেড়াতে এসে যেতেই পারে। তার বিপরীত ঘটলে আর আসার কথাও নয়।
তিনি জানান, মাছসহ বিভিন্ন প্রাণী মানুষের চলাচল ও নৌযান যাতায়াত সহ্য করতে পারে না, সরে যায়। কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সমুদ্রেও স্বাভাবিক পরিবেশ বিরাজ করলে ডলফিন দল মানুষের কাছে ভিড়ে। তাই তারা মানববান্ধব এবং বুদ্ধিমান সামুদ্রিক প্রাণী।
সমুদ্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. হোসেন জামাল জানান, কক্সবাজারসহ দেশের সৈকতগুলোতে বিশেষত মানুষের তীব্রজট, অস্থির বিচরণ, বিশেষ করে ইদানিং সি-বাইকের প্রচÐ আওয়াজে অস্থির অবস্থা বিরাজ করে। এ ধরনের পরিবেশ ডলফিনের জন্য সহনশীল বা তাদেরকে আকৃষ্ট করে না। নির্জন ও কোলাহলমুক্ত, শান্ত পরিবেশ পেয়েই তারা সৈকতের দিকে মনের সুখে দলবেঁধে হয়তো ছুটে এসেছে। তাছাড়া সমুদ্রে ও উপকূলে ড্রিলিংসহ মারাত্মক ধরনের শব্দদূষণের কারণেও ডলফিনের স্বাভাবিক বিচরণশীলতা এবং তাদের প্রজনন, খাদ্যচেইনসহ স্বাভাবিক পরিবেশ হচ্ছে বিপর্যস্ত। এদের বাঁচার উপযোগী পরিবেশ আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। এরজন্য প্রয়োজন সমুদ্রে স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখা। দূষণরোধে কঠোর ব্যবস্থা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।