পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিশ্বব্যাপী করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। সর্বশেষ তথ্যমতে, বিশ্বে ১৮৮টি দেশ ও অঞ্চল করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা ছড়িয়েছে ১৪ হাজার। এ মুহূর্তে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ ইতালী এবং তার পরের স্থান স্পেনের। ইতালীতে একদিনে মৃত্যু হয়েছে ৬৫১ জনের। স্পেনে একদিনে মৃত্যু হয়েছে ৩৭৫ জনের। অতিঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে আরো রয়েছে ইরান ও দক্ষিণ কোরিয়া। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অবস্থাও আশংকাজনক। এসব দেশের পরিস্থিতি যে কোনো সময় শোচনীয় রূপ ধারণ করতে পারে। বলাবাহুল্য, করোনা দুর্বার ও অপ্রতিরোধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছোট-বড় ধনী-দরিদ্র কোনো দেশই নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারছে না। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন দেশে শহরের পর শহর লকডাউন করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গোটা দেশকে পর্যন্ত লকডাউন করা হয়েছে। আরো অনেক শহর ও দেশ লকডাউনের মুখে রয়েছে। করোনা প্রতিরোধে লকডাউন ফলদায়ক পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। প্রতিবেশী ভারতে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ১৪ ঘণ্টার জনতার কারফিউ পালিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে ৭৫টি শহর লকডাউন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, দু-চার দিনের মধ্যে শহরগুলো লকডাউন হতে পারে। ইতোমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের পৌর এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এখনো করোনার প্রকোপ ব্যাপক আকার ধারণ করেনি বটে, তবে করতে পারে এমন আশংকা রয়েছে। এটা বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এলাকা। এখানে করোনা ছড়িয়ে পড়লে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বিশ্বের অন্য যে কোনো এলাকার চেয়ে বেশি হতে পারে। ভারত শুরু থেকে এই প্রাণঘাতী ভাইরাস রুখতে সম্ভাব্য সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানও পিছিয়ে নেই। হু’র মতে পাকিস্তান করোনা মোকাবিলায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে। শ্রীলংকা, আফগানিস্তান ও অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় দেশ করোনা রোধে সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্ভবত: বাংলাদেশে এক্ষেত্রে সবচেয়ে অপ্রস্তুত অবস্থায় রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, গত দু’তিন মাসে তাহলে আমরা কী করেছি? বলতে গেলে আমরা যে কিছুই করিনি, বাস্তবে সেটাই এখন প্রমাণিত হচ্ছে।
দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ২৭-এ দাঁড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা পাঁচ জনের কম নয়। আক্রান্তদের মধ্যে ১০ জন বিদেশফেরত। ১৩ জন বিদেশফেরতদের সংস্পর্শে আক্রান্ত। আর চার জনের পুরো তথ্য পাওয়া যায়নি। একজন মৃতের তথ্যে জানা গেছে, তিনি বিদেশফেরত নন এবং বিদেশফেরতদের সংস্পর্শেও আসেননি। অথচ আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন। করোনা সংক্রমণে এটি নতুন তথ্য এবং অবশ্যই উদ্বেগজনক তথ্য। গত কয়েক মাসে কয়েক লাখ প্রবাসী দেশে এসেছেন। তাদের মধ্যে সামান্য কিছু সংখ্যককে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। অধিকাংশকেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের কারণেই মূলত করোনার সংক্রমণ ঘটছে। ভুল, অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে করোনার বিস্তার ঘটার মাসুল এখন ইতালী দিচ্ছে। এরপরও আমাদের সচেতনতা না হওয়া দুঃখজনক। ‘চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে’, প্রবাদের মতো এখন সরকার নড়ে চড়ে বসেছে এবং নানা উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের দুটি উপজেলা শিবচর ও সাদুল্লাহপুরকে লকডাউন করা হয়েছে। রাজধানীর একটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। আরো কিছু এলাকায় লকডাউন করা হতে পারে। এদিকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। জরুরি বিষয় ছাড়া নিম্ন আদালতে বিচারকার্য মুলতবি করা হয়েছে। নিত্যপণ্যের দোকান ছাড়া সব বিপণিবিতান বন্ধ করা হয়েছে। আগেই জনসমাবেশ, ওয়াজমাহফিল বন্ধ করা হয়েছে। সামাজিক সমাবেশ ও অনুষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। গণপরিবহন, বিমান বন্দর ও শিল্প কারখানা শাটডাউন হতে পারে। তবে পরিস্থিতি যাই হোক, মসজিদসমূহ শাটডাউন হবে না। যথারীতি চালু থাকবে এবং আজান, নামাজ ও জামাত চলবে। এটাই শরিয়তী বিধান। অন্যান্য দেশেও নানা ক্ষেত্রে লকডাউন, শাটডাউন করা হয়েছে। যেহেতু করোনা ছোঁয়াছে, সুতরাং আক্রান্ত বা সন্দেহভাজন ব্যক্তির স্পর্শ থেকে নিরাপদ থাকাই এর সংক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়ায় উপায়। কেউ জানে না, কে করোনায় আক্রান্ত বা জীবাণু বহন করছে। কাজেই, জনসমাবেশস্থল বা জনস্পর্শ যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। বাসা-বাড়ি ও কর্মক্ষেত্রে সেনিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।
বিশ্বজুড়ে সভা-সমাবেশ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজার, বিপণিবিতান, বিমান, নৌ, ট্রেন ও বাস চলাচল, অফিস-আদালত ইত্যাদি পূর্ণ বা সীমিত আকারে বন্ধ করা হয়েছে বা হচ্ছে মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থেই। বিভিন্ন শহর-জনপদ লকডাউন করা হচ্ছে একই উদ্দেশ্যে। দেখা যাচ্ছে, এভাবে একটি দেশের বিভিন্ন এলাকা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। অনুরূপভাবে এক দেশ থেকে অন্য দেশও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। এটা করোনার বিস্তার প্রতিরোধে ইতিবাচক ভূমিকা রাখলেও এ থেকে রেহাই পাওয়ার একমাত্র উপায় নয়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা যথাথই বলেছে, মানুষকে সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে একের পর এক শহর, অঞ্চল, দেশ লকডাউন করা হচ্ছে। তবে এই লকডাউন ভাইরাসটি মোকাবিলায় যথেষ্ট নয়। লকডাউনের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার পদক্ষেপও নিতে হবে। করোনার সুনির্দিষ্ট প্রতিষেধক নেই। অন্যান্য ওষুধ দিয়ে এর চিকিৎসা চলছে। সচেতনতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এ থেকে মুক্ত থাকার প্রকৃষ্ট উপায়। করোনা মোকাবিলায় সরকার এ যাবৎ যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা অপ্রতুল বলে প্রতিপন্ন হয়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মাপকাঠিতে করোনা সংক্রমণের যে চারটি স্তর দেখানো হয়েছে, তাতে আমাদের দেশের অবস্থান তৃতীয় স্তরে। চতুর্থ স্তরটি হলো ব্যাপক সংক্রমণ ও ব্যাপক মৃত্যু। অথচ আমাদের দেশে কোয়ারেন্টাইনের পর্যাপ্ত সুবিধা নেই, হাসপাতাল, ডাক্তার ও নার্সদের নিরাপত্তা নেই, করোনা পরীক্ষায় সুবন্দোবস্ত নেই। এই সঙ্গে আছে জনসচেতনতার শোচনীয় ঘাটতি। এই পটপ্রেক্ষায় করোনার দ্রæত বিস্তার ঘটলে কী পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তা ভেবে স্বভাবতই উদ্বিগ্ন ও বিচলিত হতে হয়। আমরা আশা করি, সরকার শাটডাউন, লকডাউন করেই দায়িত্ব শেষ করবে না, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও নেবে। পাশাপাশি উদ্ভুত পরিস্থিতিতে জনগণকে সর্ব পর্যায়ে সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদান করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।