Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজধানীর লকডাউন এখন ‘কাগজ-কলমে’

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ডেলটার বিস্তার ঠেকানোর লকডাউনে গত শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছুটির দিন রাস্তায় ভিড় বেড়েছে। আর এসব দেখে এক নাগরিক মনে করিয়ে দিলেন সেই প্রবাদ- ‘কাজীর গরু খাতায় আছে গোয়ালে নেই।’ মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, ওয়ারী, ধানমন্ডি, মালিবাগ, কমলাপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তায় গড়ির চাপ গত কয়েকদিনের মতোই বেশি। পাড়া মহল্লার দোকানপাটও স্বাভাবিক সময়ের মতো খোলা। পথে পথে মানুষের চলাচল আগের চেয়ে বেশি।

করোনাভাইরাস মহামারির দেড় বছরে এখনই সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা পার করছে বাংলাদেশে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গত ১ জুলাই দেশে লকডাউন জারি করা হলেও বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা করে কোরবানির ঈদের সময় ৯ দিন তা শিথিল করা হয়েছিল। ঈদের ছুটির পর ২৩ জুলাই থেকে আবার লকডাউন শুরু হলেও এর মধ্যে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হয়েছে। চলমান এই লকডাউন আগামী ১০ অগাস্ট পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। তবে দিন যত যাচ্ছে, রাস্তাঘাটে মানুষও তত বাড়ছে, জীবিকার তাগিদে মানুষ আর বিধিনিষেধ মানতে চাইছে না।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল বেশ বেড়েছে। শুক্রবার ছুটি থাকায় চলাচল কম ছিল। তবে শনিবার তা গত দিনের চেয়ে বেড়েছে। প্রয়োজনীয় কাগজ প্রিন্ট করতে ঘর থেকে বের হওয়া মো. সিদ্দিক বলেন, সব দোকানপাট খোলা। মার্কেটগুলো কৌশল করে সার্টার বন্ধ রাখে। বিকল্প সিঁড়ি আছে। সেদিক দিয়ে মার্কেটে ঢুকে প্রিন্টের কাজ সেরে নেব। যাত্রাবাড়ির ফুটপাতে দোকান সাজিয়ে বসে থাকা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, সরকার গরিবের জন্য কিছুই করছে না। ঘরে খাবার নেই তাই কিছু পণ্য কিনে রাস্তায় বসেছি। লাভ হলে স্ত্রী সন্তান নিয়ে রাতে খেতে পারবো।

যাত্রাবাড়ীতে বাজার করতে আসা মো. আলী আহমেদ বলেন, বাজারে বোঝার উপায় নেই লকডাউন চলছে। এই লকডাউন মানে এখন নামে। কাজীর গরুর মতো- খাতায় আছে, গোয়ালে নেই। এসব বিষয়ে কঠোর হওয়া উচিত। শহীদ নামের এক সিএনজি চালক বলেন, সরকার সবকিছুই খুলে দিয়েছে। শুধু গরিবের সিএনজি ও গণপরিবহণ বন্ধ করে রেখেছে।

মতিঝিল শাপলা চত্বরের কাছে ফুটপাতে জিন্স প্যান্ট বিক্রেতা মো. শফিক বলেন, লকডাউনের কড়াকড়ি কমে গেছে। দেখেন, সকাল থেকে মতিঝিল সড়কে প্রচুর প্রাইভেট কার এসে রাস্তার দুই ধারে পার্কিং করা। এখানকার প্রতিষ্ঠানে এখন পুরোদমেই কাজ-কর্ম চলছে। আগে মতিঝিলের ফুটপাত ছিল ফাঁকা। গত এক সপ্তাহ যাবত দেখছি, ফুটপাতে মানুষজনের হাঁটাচলা বেড়ে গেছে। এই মতিঝিল পাড়ায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্যাররা আমার কাস্টমার। তাদের সাথে এখন প্রতিদিনই দেখা হয়।

শান্তিনগরের বাজারের কাছে ন্যায্য মূল্যের ডাল, তেল, চিনি বিক্রির ট্রাকের সামনেও ভিড় রয়েছে মানুষের। লাইনে দাঁড়ানো ফাতেমা বেগম বলেন, লকডাউন শেষ হলে ভিড় বেড়ে যাবে। সেজন্য সকালে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। মতিঝিলে টিসিবির পণ্য নিতে আসা হেমায়েত হোসেন বলেন, কাজ নেই। তাই কমমূল্যে টিসিবির পণ্য কিনতে এসেছি। কিন্তু দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে এখনো পণ্য পাইনি।

লকডাউন নিয়ে জানতে চাইলে আরামবাগের বাসিন্দা রেজাউল করিম বলেন, যে সংখ্যার মানুষজন রাস্তার ফুটপাতে দেখা যায়, রাস্তায় প্রাইভেট যেভাবে বেড়েছে তাতে এই লকডাউন দেওয়ার কোনো মানে নেই। আপনি দেখেন বাজারে কত মানুষজন। তাদের অনেকের মুখের মাস্ক গলায় ঝোলানো। মানুষজন এখনও সচেতন হচ্ছে না। এটা আমাদের সকলের জন্য বিপদ।

দুপুরে দেখা গেল দোলাইর পাড় এলাকায় ব্যারিকেট দিয়ে যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষা করা হচ্ছে। সেখানে একজন সিএনজি চালক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, মানুষের খাবার নেই; লকডাউন দিয়ে সরকার ঘরে বসে রয়েছে। গরিবের খাবারের ব্যবস্থা করলে মানুষ ঘরে বসে থাকতো।

রাজধানীর নিউমার্কেট, নীলক্ষেত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সরব রয়েছেন। কেউ ব্যক্তিগত গাড়ি বা মোটর সাইকেল নিয়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসার বাইরে বের হয়েছেন কিনা তারা জানতে চাইছেন।



 

Show all comments
  • Rahman ৮ আগস্ট, ২০২১, ৮:৪৩ এএম says : 0
    ঠিকই যে সরকার যদি সবকর খাবারের ব্যবস্হা করে দিতো তাহলে জনগণ লকডাউন মানলো।আর যদি সরকার খাবারের ব্যবস্হা করে না দেয় তাহলে লকডাউন যতোই দেক না কেন যতোই করাকরি করোক না কেন মানুষ তা মানবে না। এটাই বাংলাদেশের মানুষের অভ্যাস।ঠিক বলছি নাকি।
    Total Reply(0) Reply
  • zakir Hossain ৮ আগস্ট, ২০২১, ৯:২৮ এএম says : 0
    ............ ‍ডাউন.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ