পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণের জন্য প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এমন প্রকল্পে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে কোটি কোটি টাকা খরচ করতে দেখা যাচ্ছে, যার আদৌ প্রয়োজন নেই বললেই চলে। সাম্প্রতিক সময়ে খাল বা পুকুর খনন প্রকল্পের কর্মকর্তাদের উগান্ডা সফরে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে। অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফরে সরকারি অর্থের অপচয় এবং খাল বা পুকুর খননের মত প্রকল্পে কেন কর্মবর্তাদের বিদেশ যেতে হবে, এ নিয়ে সরকারের শীর্ষ মহল থেকেও প্রশ্ন উঠেছে। ব্যতিক্রম বাদ দিলে বেশির ভাগ প্রকল্পেই এ খাতে বিপুল অঙ্কের বাজেট বরাদ্দ দেখা যায়। সরকারি কর্মকর্তাদের ঘন ঘন বিদেশ সফরে খোদ প্রধানমন্ত্রী বিরক্তি ও বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন। বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রকল্প কর্মকর্তাদের পুকুর খনন প্রকল্পের জন্য বিদেশ সফর নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর এবার একটি প্রকল্পে ফল উৎপাদন শিখতে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে ১০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দের খবর পাওয়া গেল। গতকাল একটি দৈনিকে প্রকাশিত খবরে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত একনেকের বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা উত্থাপিত হওয়ার খবর জানা যায়। তবে আগের পুকুর খনন কর্মসূচির জন্য উগান্ডা সফরের মত এবারো পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন। সরকারি অর্থ খরচ করে কর্মকর্তাদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর বন্ধের কথাও তিনি বলেছেন।
প্রকাশিত খবরে জানা যায়, দেশে ফল উৎপাদন বৃদ্ধি, দেশীয় ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের জন্য ২০১৪ সালে গৃহিত একটি প্রকল্প সম্পর্কে পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তি থাকা সত্বেও ২০১৫ সালে তা একনেকে পাস করা হয়। প্রথম প্রাক্কলনে ১৯৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। পাঁচ বছর মেয়াদী প্রকল্পটি ২০২০ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ইতিমধ্যে এক বার মেয়াদ এক বছর এবং বাজেট ১০৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা বাড়ানোর পরও কাজ শেষ করতে পারেনি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এবারে প্রকল্পের মেয়াদ আরো ২ বছর এবং বাজেট আরো ১৬১ কোটি বা ৫৩.৮২ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই প্রস্তাবের সাথেই ফল উৎপাদন শিখতে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রসঙ্গটি উঠে এসেছে। দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়ন বাজেটের আকার বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু একদিকে সরকারি প্রকল্পে কাজের মান, যথা সময়ে কাজের বাস্তবায়ন এবং সম্ভাব্য ব্যয়ের প্রাক্কলন ঠিক রাখা যাচ্ছে না, অন্যদিকে এডিপি বাস্তবায়নে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয়, দফতর ও বিভাগের অদক্ষতা, ব্যর্থতা ও দুর্নীতি বন্ধ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। অপ্রয়োজনীয় খাতে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের প্রতিযোগিতা দেখা গেলেও বাজেট বাস্তবায়নসহ সরকারি কাজ ও সেবা খাতের দক্ষতা বৃদ্ধিতে তার কোনো ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে না।
পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তি এবং ফিজিবিলিটি রিপোর্ট ছাড়াই কিভাবে একনেকে প্রকল্প অনুমোদিত হয়ে যায়, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এসব বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীর মন্তব্য ও পদক্ষেপ যর্থাথ ও সময়োপযোগী। পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগের পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর, অস্বচ্ছতা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার অবস্থান সৎ ও যোগ্য কর্মকর্তাদের জন্য আশাব্যঞ্জক। যেখানে অর্থাভাবে জনগুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকারযোগ্য অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে না, সেখানে খাল-পুকুর খনন বা ফল উৎপাদন শিখতে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে কোটি কোটি ব্যয় বা অপচয়ের এই মচ্ছব চলতে পারে না। এমন খরচের অনুমোদনের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি না ঘটলেও লোকসান কমানোর অজুহাত তুলে প্রতিবছর বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করা হচ্ছে। এভাবে জনগণের উপর চাপছে বাড়তি ব্যয়ের বোঝা। গত তিন বছরে জ্বাল্ািন মন্ত্রনালয়ের সাড়ে ৪ শতাধিক কর্মকর্তার বিদেশ সফরের তথ্য জানা যায়। যে খাতে দুর্নীতি-লুটপাট যত বেশি, সে খাতে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের বহরও বেশি দেখা যায়। দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক বাস্তবতায় এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় ব্যয়, অপচয় এবং লুটপাট বন্ধের কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। পরিকল্পনা মন্ত্রীর এমন মন্তব্য ও সদিচ্ছাকে আমরা স্বাগত জানাই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।