Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অবশেষে তালেবানদেরই জয়, যুক্তরাষ্ট্রের চূড়ান্ত পরাজয়

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০২০, ১:০৫ পিএম

ওসামা বিন লাদেনকে ঘিরে ১৯ বছর আগে আফগানিস্তানে হামলা শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দীর্ঘ সংঘাতে জড়িয়ে শেষ পর্যন্ত তালেবানের শর্ত মেনে নিয়ে আফগানিস্তান ছাড়তে চুক্তি সই করেছে দুই পক্ষ। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এ ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ তালেবানের শর্ত মেনে নেয়া হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যা প্রকৃতপক্ষে আফগান যুদ্ধে মার্কিনিদের চুড়ান্ত পরাজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
শনিবার (২৯ ফেব্রæয়ারি) কাতারের রাজধানী দোহায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং তালেবান নেতাদের উপস্থিতিতে এই চুক্তি সই হয়। চুক্তি অনুযায়ী আগামী ১৪ মাসের মধ্যে আফগানিস্তান ছাড়তে হবে মার্কিন ও ন্যাটো সেনাদের।
তালেবানদের সঙ্গে শান্তি চুক্তি সই করতে শনিবারই কাতারে পৌঁছান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। অপরপক্ষে ৩১ সদস্যের তালেবানের একটি প্রতিনিধি দল আগেই কাতার যান। দোহায় অনুষ্ঠানে মাইক পম্পেও বলেন, আজ এ চুক্তির মাধ্যমে শান্তির সূচনা হল। আফগানিস্তানে শান্তি ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করে।
তালেবানের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, আমরা আশা করি দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা এবং শান্তি চুক্তি সই হওয়ার সময় যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিশ্রæতির প্রতি অনড় থাকবে।
তিনি বলেন, জাতির এ খুশির দিনে আজকে তালেবানের সব সদস্যকে যেকোনো ধরনের হামলা থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চুক্তির আওতায় যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান থেকে হাজার হাজার মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পাশাপাশি দেশটিতে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি পালনের কথা বলা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান ঐতিহাসিক এ চুক্তিতে যা আছে :
১. যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীকে আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে বলে নিশ্চয়তা দিতে হবে।
২. আফগানিস্তান থেকে সব বিদেশি সেনা সরিয়ে নেওয়ার টাইমলাইন ঘোষণার নিশ্চয়তা দিতে হবে।
৩. আন্তর্জাতিক সাক্ষীর উপস্থিতিতে আফগানিস্তানের মাটি থেকে সব বিদেশি সেনা সরিয়ে নেওয়ার গ্যারান্টি এবং যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহৃত হতে না দেওয়ার গ্যারান্টি দেওয়ার পর আফগানিস্তান ইসলামিক প্রজাতন্ত্রকে (যুক্তরাষ্ট্র যাকে স্টেট হিসেবে স্বীকার করে না, বরং তালেবান হিসেবে বিবেচনা করে) আফগান সরকারের (তালেবান যাকে সরকার হিসেবে মানে না) সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। এই আলোচনা হবে ১০ মার্চ ২০২০ থেকে; যা হিজরি ১৫ রাজ ১৪৪১।
৪. আফগানিস্তানের ভেতরকার দুই পক্ষের আলোচনায় একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা হবে। দুইপক্ষ যুদ্ধবিরতির তারিখ এবং প্রকারতা নিয়ে সিদ্ধান্তে আসবে। এছাড়া আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক রোডম্যাপ কি হবে তাও ঘোষণা করা হবে দুইপক্ষের আলোচনার মাধ্যমে।
চুক্তি সই হওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্র এবং আফগান সরকারের যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র-তালেবানের চুক্তি অনুযায়ী তালেবান যদি তাদের দেয়া প্রতিশ্রæতি রক্ষা করে, তাহলে আগামী ১৪ মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে অবশিষ্ট সকল সৈন্য প্রত্যাহার করে নেবে যৌথবাহিনী।
২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে আফগানিস্তান ভিত্তিক আল-কায়েদা গ্রুপ হামলার পর দেশটিতে অভিযান চালায় যুক্তরাষ্ট্র। উভয়পক্ষের সংঘর্ষে ২ হাজার ৪শ’র বেশি মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে। এখনও দেশটিতে প্রায় ১২ হাজার সেনা মোতায়েন রয়েছে। সংঘর্ষের অবসানের ব্যাপারে প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
২০১১ সাল থেকে আফগানিস্তানে শান্তি নিয়ে আলোচনা করতে আসা তালেবান নেতাদের আশ্রয় দিয়েছে কাতার। ২০১৩ সালে তালেবানের একটি কার্যালয় চালু করা হয়, তবে পতাকা নিয়ে বিরোধে সেই বছরই সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
২০১৮ সালে তালেবান ঘোষণা করে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে বসবে যাতে শান্তির একটি রোডম্যাপ তৈরি করা যায়। তবে তখন তারা পশ্চিমা সমর্থিত আফগান সরকারের সঙ্গে কোন আলোচনায় বসতে অস্বীকার করে। ওই সরকারকে তারা আমেরিকান পুতুল বলে বর্ণনা করে।
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ সপ্তাহের মধ্যে ৫৪০০ সেনা সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান আলোচক। কিন্তু কয়েকদিন পরে তালেবানের হামলায় একজন মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার পর আলোচনাকে ‘মৃত’ বলে ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প



 

Show all comments
  • মেহেদী হাসান সাকিব ৭ মার্চ, ২০২০, ৯:৫৭ পিএম says : 0
    আমি মনেকরি প্রাতেক মুসলিম রাষ্টকে তালেবান দের সাথে থাকা আর কতো অতাচার সইবে মুসলমানরা বাছতে চাইলে সকল মুসলিম এক হও
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আফগানিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ