পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাবার মত্যুর পর থেকে প্রতিটা ক্ষণ দুঃসহ যন্ত্রণায় কাটছে। যদিও জীবন থেমে থাকে না, চলে যাচ্ছে। কিন্তু বাবা ছাড়া জীবন কতটুকু! কী যে দুঃসহ যন্ত্রণা তা শুধু আমরাই টের পাচ্ছি। সে ব্যথা শুধু যারা পিতাহারা হয়েছেন তারাই বুঝতে পারেন। প্রতিনিয়ত মিস করি বাবাকে। গতকাল ১১তম বার্ষিকীতে বনানীর সামরিক কবরস্থানে বাবাসহ শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসেন বর্বরোচিত হত্যাকান্ডে নিহত কর্নেল কুদরত ইলাহি শফিকের ছেলে অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এভাবেই নিজের কষ্টের অনুভূতি প্রকাশ করেন তিনি।
পিলখানা হত্যাকান্ডের ১১ বছর পার হলেও এখনো স্বজনের চোখে শোকের অশ্রু। হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জন এখনো তাদের স্মৃতিতে উজ্জ্বল। তাই গতকাল সকাল থেকেই বনানী সামরিক কবরস্থানে জড়ো হয়েছেন পিলখানার ঘটনায় নিহত সেনা সদস্যের পরিবার। শোক, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় তারা স্মরণ করেন না-ফেরার দেশে চলে যাওয়া স্বজনদের। গভীর মমতায় ফুল ছড়িয়ে দেন তাদের শেষ স্মৃতিচিহ্নের ওপর।
অন্যদিকে যথাযথ মর্যাদায় গতকাল মঙ্গলবার বিডিআর বিদ্রোহে নিহত সেনা সদস্যদের হত্যাকান্ডের ১১তম শাহাদত বার্ষিকী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে বনানীস্থ সামরিক কবরস্থানে শহীদদের কবরে পুস্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শাহাদৎ বরণকারীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রেসিডেন্টের পক্ষে রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম শামীম উজ জামান, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত ও বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো.সাফিনুল ইসলাম। আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে। আইএসপিআর আরও জানায়, অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব এর পক্ষে অতিরিক্ত সচিবও পুষ্কস্তবক অর্পণ করেন। পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ স্যালুট প্রদান করেন। পরে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। এছাড়াও এদিন সকল সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় মসজিদে কোরআন খতমের ব্যবস্থা করা হয় এবং শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে সকল স্তরের সেনাসদস্যগণের উপস্থিতিতে মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত-এর আয়োজন করা হয়।
এদিকে বিজিবির জনসংযোগ কর্মর্তারা জানিয়েছেন, পিলখানা ট্রাজেডি দিবসে শহীদ ব্যক্তিবর্গের রুহের মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরসহ সকল রিজিয়ন, সেক্টর, প্রতিষ্ঠান ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় খতমে কোরআন, বিজিবি’র সকল মসজিদে এবং বিওপি পর্যায়ে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয। বজিবির সকল রেজিমেন্টাল পতাকা অর্ধনিমিত রাখা হয় এবং বিজিবি’র সকল সদস্য কালো ব্যাজ ধারণ করে। এছাড়া আজ বাদ আসর পিলখানার কেন্দ্রীয় মসজিদে কোরআনখানি ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
শহীদ মেজর মমিনুলের বোন জেবুন্নাহার সরকার বলেন, জন্মের পর সাদাকাতকে তার বাবাকে দেখার সুযোগ দেয়নি ঘাতকরা। পিলখানায় হত্যা করা হয় তাকে। সাদাকাতের কাছে বাবা শুধুই ছবি। তিনিও চূড়ান্ত বিচার নিয়ে সন্দেহের কণ্ঠে বলেন, পিলখানা হত্যাকান্ডের বিচারে প্রকৃত আসামিরা শাস্তি পাচ্ছে কিনা এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ মূল ষড়যন্ত্রকারীরা সামনে আসেনি।
শহীদ মেজর তানভীর হায়দার নূরের স্ত্রী তাসনুভা মাহা বলেন, আমার দুটি সন্তান। একজনের বয়স সাড়ে ছয় বছর, আরেকজনের সাড়ে নয় বছর। কিন্তু ওদের বাবার কোনো স্মৃতিই ওদের মনে নেই।
হত্যার দিনের সঙ্গে আজকের কোনো পার্থক্য নেই জানিয়ে কর্নেল মুজিবুল হকের স্ত্রী নেহরীন ফেরদৌসী বলেন, শহীদ সেনাদের কর্মকর্তাদের পরিবারের ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে। আচার-ব্যবহারের দিক থেকে ওদের যেকোনো অনুষ্ঠানে অন্যদের থেকে আলাদা করা যায়। কিন্তু ওরা খুঁজে বেড়াচ্ছে, কেন ওদের বাবাকে হত্যা করা হলো? উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে এই দিনে পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দফতরে শুরু হয় ‘বিডিআর বিদ্রোহ’। বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ওই বাহিনীর ৭৪ সদস্য নিহত হন। নিহতদের তালিকায় ছিলেন তৎকালীন বিডিআরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল। সামরিক কর্মকর্তা ছাড়াও বিডিআরের গুলিতে কয়েকজন বেসামরিক নাগরিকও নিহত হন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।