Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সৌদি আরবসহ অন্যদেরও সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন

সৈয়দ ইবনে রহমত | প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৩২ এএম

মিয়ানমারে নির্যাতিত নিপীড়িত হয়ে বিতাড়িত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই বোঝা হয়ে আছে। নানা সংকট সত্তে¡ও মানবিক কারণে বাংলাদেশ প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে, ভরণপোষণ করছে। এখন নতুন খবর হচ্ছে, সৌদি সরকার বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী ৪২ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে আনতে চাপ দিচ্ছে। গত কয়েক বছরে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনায় তোলার পর বাংলাদেশকে একাধিক চিঠি দিয়ে বিষয়টি সমাধান করতে বলেছে সৌদি আরব। সম্প্রতি আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সম্মেলনের আলোচনাতেও এসেছে বিষয়টি। সর্বশেষ ঢাকায় গত ১২ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দুই দেশের যৌথ কমিশনের বৈঠকেও বিষয়টি তুলেছে সৌদি পক্ষ। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। সৌদি আরব মনে করে, বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে এসব রোহিঙ্গা আকাশপথে সে দেশে গেছে। তাই এদের বাংলাদেশকেই ফিরিয়ে নিতে হবে। জানা যায়, ২০১৯ সালের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশকে ৪২ হাজার রোহিঙ্গা ফেরানোর অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয় সৌদি আরব। বিস্তারিতভাবে সবার নাম-পরিচয় না থাকলেও কোন সময় থেকে এরা সৌদি আরবে রয়েছে, কীভাবে গেছে আর কী ধরনের পাসপোর্ট ব্যবহার করেছে, তা সৌদি আরব চিঠিতে জানিয়েছে। দেশটি এরই মধ্যে তিন লাখ রোহিঙ্গার ইকামা (বৈধ কাজের অনুমতিপত্র) দিয়েছে, তাদের বেশির ভাগই থাকেন মক্কা নগরী ও তার আশপাশে। যে ৪২ হাজার রোহিঙ্গাকে সৌদি আরব ফেরত পাঠাতে চায়, তাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ইকামাধারী রোহিঙ্গাদের পরিবারের সদস্য। এদের একটি বড় অংশ ২০১২ থেকে ২০১৪ সালের পর সৌদি আরব গেছে।

এটা সত্য যে, কিছু অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তির যোগসাজসে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশের পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছে এবং তারা সৌদি আরব বা অন্য কোনো দেশে গেছে এবং যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী হলেও তারা যে এদেশের নাগরিক নয়, বরং মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত দেশহীন, গৃহহীন এবং মানবাধিকার বঞ্চিত মানুষ- এটাও তো সত্য। আর সেটা সৌদি আরবসহ সারা পৃথিবীর মানুষই জানে। বাংলাদেশের ব্যবস্থার ফাঁক গলে রোহিঙ্গারা সৌদি আরব গেছে বলে তাদেরকে আবার আমাদেরই ফেরত নিতে হবে, এর কোনো যৌক্তিকতা নেই। বরং, সৌদি আরবসহ মানবাধিকারে বিশ্বাসী প্রতিটি দেশেরই উচিৎ এই রোহিঙ্গাদের সসম্মানে তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারের রাখাইনে পূর্ণ নাগরিক অধিকার দিয়ে পুনর্বাসনে সহায়তা করা। বাংলাদেশসহ যেসব দেশে রোহিঙ্গারা উদ্বাস্তু হিসেবে বসবাস করছে তাদেরকেই এক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। সম্প্রতি জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের ১১ লাখের বাইরে পাকিস্তানে দুই লাখ, থাইল্যান্ডে এক লাখ, মালয়েশিয়ায় ৫৯ হাজার, ভারতে ৪০ হাজার, যুক্তরাষ্ট্রে ১৩ হাজার, ইন্দোনেশিয়ায় ১১ হাজার, নেপালে ২০০ জন রোহিঙ্গা নাগরিক উদ্বাস্তু হিসেবে বসবাস করছে। সৌদি আরবেও আছে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা, পাশাপাশি মিয়ানমারের বৃহৎ প্রতিবেশী চীনেও কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা নাগরিক উদ্বাস্তু হিসেবে বসবাস করছে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলো যথাসময়ে একটি প্ল্যাট ফরমে দাঁড়িয়ে জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালালে আজ লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা নাগরিককে মাতৃভূমি ছেড়ে অন্য দেশে পরবাসী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হতো না। কিন্তু এখনো সময় শেষ হয়ে যায়নি, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর পক্ষ থেকে দেশহীন এই মানুষগুলোর জন্য করার আছে অনেক কিছুই। সে ক্ষেত্রে ওআইসির প্রভাবশালী সদস্য দেশ হিসেবে সৌদি আরবেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে। বিশেষ করে, গত ২৩ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের পর আন্তর্জাতিক নেতৃত্বের সামনে নতুন সুযোগ এসেছে। তারা এখন মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি করানোর ব্যাপারে নতুনভাবে তৎপর হতে পারেন।

আশার কথা হচ্ছে, গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলায় গত ২৩ জানুয়ারি ঘোষিত অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অভ জাস্টিস (আইসিজে) রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর গণহত্যার মতো সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমারকে আদেশ দিয়েছে। একই সাথে বিগত সহিংসতার প্রমাণ সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়াও রাখাইনে এখন যে রোহিঙ্গারা আছে, তাদেরকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য মিয়ানমারকে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দিয়েছে। মিয়ানমারের সর্বোচ্চ নেতা অং সান সু চি তার দেশের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করলেও জাতিসংঘের এই সবোর্চ্চ আদালত রোহিঙ্গা মুসলমানদের গণহত্যা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য মিয়ানমারের গৃহীত ব্যবস্থাগুলো রায়ের চার মাসের মধ্যে একটি রিপোর্ট আকারে আদালতের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। এরপর এই মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রতি ছয় মাস পর পর আদালতকে অগ্রগতি জানাতে হবে। দুঃখজনক হলেও এটা সত্য যে, তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমার আইসিজের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ প্রত্যাখ্যান করেছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, ‘আইসিজের এ আদেশের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ছিল এই মর্মে ঘোষণা যে, এ মামলাটি আইসিজেতে চলতে পারে। কেননা, এ মামলাটি আইসিজেতে চলতে পারে না এ কথাটি বলার জন্যই স্বয়ং সু চি দ্রুততম গতিতে ছুটে গিয়েছিলেন হেগে। তিনি সম্ভবত তার কৌঁসুলিদের কাছ থেকে এ মর্মে ভ্রান্ত উপদেশ পেয়েছিলেন যে মামলাটি আন্তর্জাতিক আদালতে চলতে পারে না।’ যাহোক মামলাটি চূড়ান্তভাবে শেষ হতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। আর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ প্রত্যাখ্যান করলেও মামলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসার পূর্ব পর্যন্ত মিয়ানমার হয়তো সেদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ওপর আগের মতো দমন-পীড়ন নাও চালাতে পারে। কারণ, সেটা হলে আদালতের চূড়ান্ত রায়ে স্বাভাবিকভাবেই তার প্রভাব পড়বে। নিশ্চয় তারা সেটা প্রত্যাশা করবে না।

আইসিজের অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনাগুলো থেকে এটা আশা করা যায় যে, চূড়ান্ত আদেশেও গাম্বিয়ার প্রার্থিত আদেশসমূহ থাকবে, বিশেষত এই কারণে যে, অন্তর্বর্তীকালীন আদেশসমূহ হয়েছে ১৭ বিচারপতির সবার সর্বসম্মতিক্রমে। যেখানে মিয়ানমার, চীন, জাপানের বিচারকরাও আছেন। কিন্তু চূড়ান্ত রায়ের পর মিয়ানমার সেটা মানবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। যদিও জাতিসংঘ সনদের ৯৪ অনুচ্ছেদে এই মর্মে পরিষ্কার নির্দেশনা রয়েছে যে, প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রই আইসিজের রায় এবং আদেশ মানতে বাধ্য। সেই অর্থে আইসিজের আদেশ অমান্য করা মানেই হলো জাতিসংঘের সনদ লঙ্ঘন করা। তবে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় আদালতসমূহ যেমন তাদের রায় পুলিশ এবং অন্যান্য কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারে, আন্তর্জাতিক বিচারব্যবস্থায় তা সম্ভব নয়, কেননা সব রাষ্ট্রই সার্বভৌম বিধায় নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত ছাড়া কোনো প্রয়োগকারী বাহ্যিক কর্তৃপক্ষকে কোনো সার্বভৌম রাষ্ট্রে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে পাঠানো সম্ভব নয়। তা ছাড়া জাতিসংঘের কোনো পুলিশ বাহিনীও নেই আইসিজের রায় বাস্তবায়নের জন্য। তবে আইসিজের রায় অমান্য করার অর্থ জাতিসংঘের সনদ লঙ্ঘন করা বিধায় আইসিজের রায় অমান্য করার ঘটনা খুবই কম। ব্যতিক্রম ঘটনাও আছে, আইসিজে ১৯৮৪ সালে নিকারাগুয়ার পক্ষে রায় দিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সে রায় লংঘন করেছিল। ১৯৭৩ সালে ফ্রান্স আইসিজের অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে আণবিক পরীক্ষা চালিয়েছিল, ১৯৪৫ সালে আইসিজে যুক্তরাজ্যকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করার জন্য আলবেনিয়াকে নির্দেশ দিলেও আলবেনিয়া তা মান্য করেনি। তাই আইসিজের রায়ে মিয়ানমারকে চূড়ান্তভাবে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিয়ে রোহিঙ্গাদের পূর্ণাঙ্গ নাগরিক অধিকার দিয়ে প্রত্যাবসনের আদেশ প্রদান করলে তারা সেটা কতটা মানবে সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। কেননা, মিয়ানমার এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের সেদেশের নাগরিক বলেই স্বীকার করেনি। এই অবস্থায় তারা যদি শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে কার্যকর কোনো উদ্যোগ না নেয়, তাহলে বিষয়টি স্বয়ংক্রীয়ভাবে নিরাপত্তা পরিষদে উঠবে। আর বিগত দিনের অভিজ্ঞতায় বলা যায়, সেখানে চীন এবং রাশিয়ার মতো ভেটো ক্ষমতাধারী দুটি দেশ মিয়ানমারের পক্ষে শক্ত অবস্থানে থাকবে।

রোহিঙ্গাদের যথাযথভাবে প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারকে রাজি করানোর ব্যাপারে বিকল্প পথ একটাই, সেটি হলো কার্যকর কূটনৈতিক তৎপরতা। সেটাও হতে হবে বহুমুখী এবং বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে আরো বেশি কৌশলী। বিশেষ করে মিয়ামারের প্রতিবেশী, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের সমর্থনকারী, সেখানে বিনিয়োগকারী, তাদের সাথে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যিক সম্পর্কে থাকা দেশগুলোকে টার্গেট করে কার্যকর কূটনৈতিক তৎপরতাই পারে দেশটিকে রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক আচরণে রাজি করাতে পারে। দুঃখজনক হলেও এটা সত্য যে, রোহিঙ্গাদের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ বাংলাদেশ। অথচ, বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র ভারত, চীন এবং জাপানের অবস্থান মিয়ানমারের পক্ষে। এর পেছনে ভূ-রাজনীতি, মিয়ানমারের খনিজ সম্পদ, অর্থনৈতিক বিনিয়োগ একটি বড় ফ্যাক্টর। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই নতুন তৎপরতা শুরু করতে হবে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং স্থায়ী প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে ইতালিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর অব্যাহত সমর্থন প্রত্যাশা করেছেন। একই সাথে তিনি ইতালিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সমর্থনের জন্য ধন্যবাদও জানিয়েছেন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি ইতালিতে বাংলাদেশ এবং ইতালির প্রধানমন্ত্রী জিওসিপে কোঁতে’র মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে ৯ দফা যৌথ বিবৃতিতে ঘোষণায় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন পালাজো চিগিতে বৈঠক শেষে যৌথ ঘোষণায় আরো বলা হয়, উভয় পক্ষই রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়ে গত ২৩ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক আদালতের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন কামনা করেছেন। ইতালিসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর এ আহবানকে আমরা অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। কারণ, ‘এভরিথিং বাট আমর্স’ শীর্ষক অগ্রাধিকারমূলক শুল্ক নীতির আওতায় ইউরোপের বাজারে মিয়ানমার তাদের পণ্য রফতানির সুযোগ ভোগ করছে। সেক্ষেত্রে মিয়ানমারকে নিজ দেশের সকল নাগরিকের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে পরামর্শ দেওয়ার ব্যাপারে ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও দায়িত্ব রয়েছে। পাশাপাশি সৌদি আরব, ভারত, চীন, জাপান, রাশিয়ার মতো দেশগুলো যাতে রোহিঙ্গা সমস্যার প্রেক্ষাপট এবং এর গভীরতা অনুধাবন করে স্থায়ী সমাধানে আগ্রহী হয়, সে ব্যাপারে তাদের সাথে যোগাযোগ বাড়ানো প্রয়োজন। তারা যেন বাংলাদেশের সীমাবদ্ধতাগুলো বিবেচনায় নিয়ে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের রাখাইনে পুনর্বাসনে কার্যকর কিছু করার ব্যাপারে উদ্যোগী হয় সে ব্যাপারে তাদের রাজি করাতে হবে। এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা সফলতার মুখ দেখেছে, সে কথা বলার সুযোগ আসেনি। সে কারণেই রোহিঙ্গা ইস্যুতে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকে আমাদের পাশে যেভাবে পাওয়া প্রয়োজন ছিল, তাদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি, বরং উল্টো মিয়ানমারের পক্ষে তাদের দৃঢ় অবস্থান আমাদেরকে হতাশ করেছে। এ বিষয়টিও বিবেচনায় রেখে আগামী দিনের কূটনৈতিক কৌশল নির্ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে। সৌদি আরবকেও বোঝানোর অবকাশ আছে যে, ৪২ হাজার রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর মধ্যেই সমস্যার সমাধান নিহিত নেই। বরং, তাদেরকে নিজ দেশে পুনর্বাসনে তারা কীভাবে সহযোগিতা করতে পারে সে দিকেই নজর দিলেই কেবল প্রকৃত দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়া হবে।
[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন