পবিত্র লাইলাতুল বরাত
![img_img-1722039907](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678112525_editorial-inq.jpg)
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পবিত্র ঈদুল ফিতর সমাগত। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামীকাল বা তার পরদিন বাংলাদেশে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। মুসলিম উম্মাহর দু’টি প্রধান ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে ঈদুল ফিতর একটি। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কর্তৃক ঘোষিত পুরস্কারের প্রত্যাশায় এই ঈদ অনেক বেশি মহিমান্বিত ও আনন্দঘন। সিয়াম সাধনার পাশাপাশি জাকাত ও ফিতরা আদায় শেষে ঈদের জামাত থেকে পাপ-পঙ্কিলতামুক্ত হয়ে প্রফুল্ল মনে ঘরে ফেরার অনাবিল আনন্দ এই ঈদের বিশেষ সওগাত। পবিত্র কোরআন নাজিলের এই মাসে কষ্টকর রোজা পালন, তারাবির নামাজসহ অতিরিক্ত ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের প্রয়াস, প্রতিটি ফরজ ও নফল ইবাদতের অতিরিক্ত ফজিলত এবং হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ লাইলাতুল কদরে গোনাহ মাফের অনন্য সুযোগ ইত্যাদি অভিব্যঞ্জনায় রোজা এবং ঈদুল ফিতর ধর্মপ্রাণ মুসলমানের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যবহ ও আধ্যাত্মিক সুষমাম-িত।
সাধারণ আনন্দ উৎসব ও ঈদের আনন্দ উৎসবের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। কেবল আনন্দ-উল্লাস নয়, ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে আল্লাহপাকের অনুগ্রহ, ক্ষমা ও সন্তুষ্টি লাভ এবং মানব কল্যাণের সুযোগ রয়েছে এর মধ্যে। কঠোর সিয়াম সাধনা, সংযম, দান-খয়রাত, ত্যাগ-স্বার্থপরতা ও সার্বজনীন কল্যাণে আত্মনিবেদনের সমন্বয়ে ঈদ উৎসব অনেক বেশি বাস্তবিক শুভময়তা এবং পারলৌকিক মুক্তির প্রত্যাশায় ঋদ্ধ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন: ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ/তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাকিদ। আজ ভুলে যা তোর দোস্ত-দুশমন হাত মিলাও হাতে। দে জাকাত মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙ্গাইতে নিদ।’ ঈদের এই সার্বজনীন ও পারলৌকিক কল্যাণ, সাম্য-সৌহার্দ্যরে বার্তা প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানের হৃদয়ে ও কর্মে যথার্থভাবে প্রতিফলিত হলেই ঈদের অন্তর্নিহিত আহ্বান সফল ও সার্থক হবে। মুসলমানদের মধ্যে ধনী-দরিদ্র, বর্ণ-গোত্র, ভাষা, ভৌগোলিক অবস্থানগত পার্থক্য ও উঁচু-নিচুর ভেদাভেদের কোনো সুযোগ নেই। ঈদের নামাজের জামাতে সব ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে শামিল হয় মুসলমানেরা। তাদের সমাবেশ এবং হাতে হাত ও বুকে বুক মেলানোর দৃশ্য বেহেশতি বাঞ্ছনায় উদ্ভাসিত।
ঈদ আমাদের দেশে বরাবরই ব্যাপক আয়োজন, উদ্দীপনা ও উৎসবমুখরতার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়। আর্থসামাজিক অবস্থা নির্বিশেষে সকল মানুষই তাদের সাধ্যানুযায়ী ঈদ-উৎসবে শরীক হয়। বরাবরই প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার জন্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত মানুষ গ্রামে ছুটে যায়। একযোগে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের ঘরমুখী যাত্রায় পথেঘাটে এক ভিন্ন দৃশ্যের অবতারণা হয়। পথে পথে নানা দুর্ভোগ-বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হয় ঈদ যাত্রীদের। একদিকে পরিবহন ব্যবস্থায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রতিযোগিতা ও অতিরিক্ত যাত্রীবহনের ঝুঁকি, অন্যদিকে রাস্তায় রাস্তায় চাঁদাবাজি, যানজট ও রাস্তার বেহাল দশা মাথায় নিয়ে চলে ঈদযাত্রা। এবার পরিস্থিতি আগের তুলনায় স্বস্তিদায়ক। টিকিট নিয়ে তেমন বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি ঈদযাত্রীদের। আগের তুলনায় রাস্তাঘাটের অবস্থা ভালো। যানজট আছে তবে অসহনীয় নয়। ঈদকে সামনে রেখে ঢাকা-চট্টগ্রাম চারলেন ও জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চারলেন খুলে দেয়া হয়েছে। এটি প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়, যথার্থই ঈদ উপহার হয়েছে। চাঁদাবাজি-জুলুমবাজিও এবার কম। অন্তত ৯ দিনের টানা ছুটি পেয়েছে সরকারী কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। ঘরে ফেরার ক্ষেত্রে এটা বড় একটা সুবিধা এনে দিয়েছে। ঈদযাত্রা সহজ, নিরাপদ ও স্বস্তিকর করার জন্য গৃহীত কার্যব্যবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর ধন্যবাদ প্রাপ্য।
ঈদের প্রাক্কালে দেশবাসীর মন হঠাৎই দুঃখ, শোক ও বিষণœতায় ভরে গেছে। রাজধানী গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসীদের নজিরবিহীন হামলায় দেশী-বিদেশীসহ ২০ জন নাগরিক ও দু’জন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। ছয় সন্ত্রাসীও যৌথ উদ্ধার অভিযানে নিহত হয়েছে। এর আগে এত বড় সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেনি। ইসলামের নামে যারা এই হামলা ও হত্যাকা- ঘটিয়েছে, তারা বিভ্রান্ত ও বিপথগামী। তাদের এই অমার্জনীয় অপকর্ম ও অপবাদের নিন্দা জানানোর আমাদের ভাষা নেই। দেশের মানুষ একদিকে শোকে মুহ্যমান, অন্যদিকে উদ্বিগ্ন ও বিচলিত। এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা যাতে না ঘটে, কেউ না ঘটায়, সেটাই সকলের একান্ত প্রত্যাশা। মানুষের মধ্যে ইসলামের অহিংসা, ক্ষমা, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা জাগরিত হোক, সন্ত্রাস অবসিত হোক, সবার মধ্যে প্রকৃত ধর্মবোধ ও মূল্যবোধ সংহত হোকÑএই পবিত্র উপলক্ষে এটাই আমাদের আন্তরিক কামনা। ঈদ আনন্দময় ও উৎসবমুখর হোক, এই প্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ইনকিলাবের সকল পাঠক, লেখক, সাংবাদিক, হকার, শুভানুধ্যায়ী ও দেশবাসীকে জানাই ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।