পবিত্র লাইলাতুল বরাত
![img_img-1722054725](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678112525_editorial-inq.jpg)
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পবিত্র ঈদুল ফিতর সমাগত। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামীকাল বা তার পরদিন দেশে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। মুসলিম উম্মাহর দু’টি প্রধান ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে ঈদুল ফিতর একটি। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কর্তৃক ঘোষিত পুরস্কারের প্রত্যাশায় এই ঈদ অনেক বেশি মহিমান্বিত ও আনন্দঘন। সিয়াম সাধনার পাশাপাশি জাকাত ও ফিতরা আদায় শেষে ঈদের জামাত থেকে পাপ-পঙ্কিলতামুক্ত হয়ে প্রফুল্লমনে ঘরে ফেরার অনাবিল আনন্দ এই ঈদের বিশেষ সওগাত। পবিত্র কোরআন নাজিলের এই মাসে কষ্টকর রোজা পালন, তারাবির নামাজসহ অতিরিক্ত ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের প্রয়াস, প্রতিটি ফরজ ও নফল ইবাদতের অতিরিক্ত ফজিলত এবং হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ লাইলাতুল কদরে গোনাহমাফের অনন্য সুযোগ ইত্যাদি অভিব্যঞ্জনায় রোজা এবং ঈদুল ফিতর ধর্মপ্রাণ মুসলমানের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যবহ ও আধ্যাত্মিক সুষমায় মন্ডিত।
সাধারণ আনন্দ- উৎসব ও ঈদের আনন্দ- উৎসবের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। কেবল আনন্দ-উল্লাস নয়, ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে আল্লাহপাকের অনুগ্রহ, ক্ষমা ও সন্তুষ্টিলাভ এবং মানবকল্যাণের সুযোগ রয়েছে এর মধ্যে। কঠোর সিয়াম সাধনা, সংযম, দান-খয়রাত, পরার্থপরতা, ত্যাগ ও সার্বজনীন কল্যাণে আত্মনিবেদনের সমন্বয়ে ঈদ উৎসব অনেক বেশি বাস্তবিক শুভময়তা এবং পারলৌকিক মুক্তির প্রত্যাশায় ঋদ্ধ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন: ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলোখুশির ঈদ/তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাকিদ। আজ ভুলে যা তোর দোস্ত-দুশমন হাত মিলাও হাতে। দে জাকাত মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙ্গাইতে নিদ।’ ঈদের এই সার্বজনীন ও পারলৌকিক কল্যাণ, সাম্য-সৌহার্দ্যরে বার্তা প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানের হৃদয়ে ও কর্মে যথার্থভাবে প্রতিফলিত হলেই ঈদের অন্তর্নিহিত আহ্বান সফল ও সার্থক হবে। মুসলমানদের মধ্যে ধনী-দরিদ্র, বর্ণ-গোত্র, ভাষা, ভৌগোলিক অবস্থানগত পার্থক্য ও উঁচু-নিচুর ভেদাভেদের কোনো সুযোগ নেই। ঈদের নামাজের জামাতে সব ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে শামিল হয় মুসলমানেরা। তাদের সমাবেশ এবং হাতে হাত ও বুকেবুক মেলানোর দৃশ্য বেহেশতি ব্যাঞ্জনায় উদ্ভাসিত।
ঈদ আমাদের দেশে বরাবরই ব্যাপক আয়োজন, উদ্দীপনা ও উৎসবমুখরতার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়। আর্থসামাজিক অবস্থা নির্বিশেষে সকল মানুষই তাদের সাধ্যানুযায়ী ঈদ-উৎসবে শরীক হয়। বরাবরই প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার জন্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত মানুষ গ্রামে ছুটে যায়। একযোগে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের ঘরমুখীযাত্রায় পথেঘাটে এক ভিন্ন দৃশ্যের অবতারণা হয়। পথে পথে নানা দুর্ভোগ-বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হয় ঈদ যাত্রীদের। একদিকে পরিবহন ব্যবস্থায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রতিযোগিতা ও অতিরিক্ত যাত্রীবহনের ঝুঁকি, অন্যদিকে রাস্তায় রাস্তায় চাঁদাবাজি, যানজট ও রাস্তার বেহাল দশা মাথায় নিয়ে চলে ঈদযাত্রা। এবার পরিস্থিতি আগের তুলনায় কিছুটা সহনীয়। টিকিট নিয়ে ঝক্কি-ঝামেলায় পড়তে হয়েছে যাত্রীদের। আগের তুলনায় রাস্তাঘাটের অবস্থা প্রত্যাশার চেয়ে ভাল। তবে যানজট ভোগান্তি বাড়িয়েছে। চাঁদাবাজি-জুলুমবাজিও এবার কম । পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) রাস্তাঘাটে নিরাপত্তা বিধানের আশ্বাস দিয়েছেন। কর্মক্ষেত্রে ফেরার সময়ও এই স্বস্তি ও নিরাপত্তা যাতে বহাল থাকে সেটাই সকলের কামনা। কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণ ও ঢলে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে আকষ্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। বাড়িঘর ক্ষেত- খামার ডুবে গেছে। অপুরণীয় ক্ষতির মধ্যে পড়েছে ক্ষেতের ফসল। এই সব অঞ্চলের নদনদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত বছর হাওরাঞ্চলে বন্যায় লাখ লাখ মানুষ ফসল হারিয়ে নি:স্ব হয়ে পড়েছিল।তাদের ঘরে ঈদের আনন্দ ছিলনা। এবার বন্যাকবলিত সাত জেলার মানুষের অনেকের ঈদ উৎসবে মেতে ওঠা হয়তো সম্ভব হবেনা। এটা তাদের জন্য দু:খের, আমাদের জন্যও। তাদের জন্য আমাদের পূর্ণ সহানুভূতি রইল। কর্তৃপক্ষকে বন্যা পরিস্থিতির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিতে হবে। মানুষের দু:খ-কষ্ট ও বিপদাপদে পাশে দাঁড়ানো ইসলামের শিক্ষা। মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতরের শিক্ষাও তাই। মানুষের মধ্যে ইসলামের অহিংসা, ক্ষমা, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা জাগরিত হোক। সকল মানবিক দুর্বিপাক, কষ্ট ও যাতনাার অবসান হোক, সবার মধ্যে প্রকৃত ধর্মবোধ ও মূল্যবোধ, প্রীতি, সহানুভূতি সংহত হোক, পবিত্র ঈদ উপলক্ষে এটাই আমাদের আন্তরিক কামনা। ঈদ আনন্দময় ও উৎসবমুখর হোক, এই প্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ইনকিলাবের সকল পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, হকার, শুভানুধ্যায়ী ও দেশবাসীকে জানাই ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।