Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সংসদে ইনু মেনন মমতাজ আউল বাউল

মন্তব্য প্রতিবেদন

রাজনৈতিক ভাষ্যকার | প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশে শীত মৌসুমে আবহমানকাল থেকে মানুষ নানা রকম বিনোদনের আয়োজন করে। ভাটি অঞ্চলে এটি হয় পানির সময়। যখনই চাষবাস শেষে নতুন ধান ঘরে ওঠে, মানুষের হাতে কাজকর্ম তেমন থাকে না, তখন মানুষ চিত্ত-বিনোদনের জন্য নানা রকম আয়োজন করে। এসবই যতক্ষণ শরিয়তের সীমা চরমভাবে লঙ্ঘন না করে ততক্ষণ সাধারণত আলেমসমাজ তেমন কিছু বলেন না।
মানুষের স্বাভাবিক চাহিদার দিকে খেয়াল করে অল্পস্বল্প দোষত্রুটি তারা অনেক সময় উপেক্ষা করেন। খুব মুত্তাকী পরহেজগার বুজুর্গ আলেমগণ সব সময়ই মন্দ বিষয়কে প্রতিবাদের মধ্যে রাখেন। পীর মাশায়েখগণ যথা সম্ভব প্রতিহতও করেন। যার ফলে হাজার বছর ধরে এদেশে ইসলাম অবিকৃতভাবে টিকে আছে। জনগণকে দেয়া সুযোগের মধ্যে কিছু বদলোক সব সময়ই সীমালঙ্ঘন করে। তাদের কিছু কাজ থাকে চরম সমাজবিরোধী, যা ভদ্র লোকেরা সমর্থন করেন না।

সমাজের রুচিশীল ও নীতি নৈতিকতাসম্পন্ন মানুষ এসবের বিরোধিতা করেন। যেমন এক সময় ঘেটো গান চালু ছিল অর্থাৎ নৌকায় করে ভাটি বাংলার গ্রামে গ্রামে একদল লোক গান বাজনার আসর করত। যেহেতু তারা ঘাটে ঘাটে নেমে আসর বসাত তাই মানুষ তাদের চিনত ঘাটু বলে। চলিত ভাষায় বলা হত ঘেটো। অন্য বানানে ঘেটু। এখানে একরকম বালকদের ব্যবহার করা হত।
কারণ তখনো কোনো মুসলিম মেয়ে গান বাজনায় আসেনি। ভদ্র হিন্দুরাও পুরুষদের সাথে নিজেদের মেয়েদের নৌকায় রাত কাটাতে ও ঘাটে ঘাটে ঘুরতে দিত না। তখন নাটকে মেয়ের ভূমিকায় থাকত ঘেটু বালক। কোনো কোনো রাজা জমিদার বা বিত্তশালীরা এদের সাথে বিকৃত যৌনাচার করত। লেখক হূমায়ুন আহমেদ তার এক সিনেমায় এ ইতিহাসটি বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।

আরেকটি বিনোদন ছিল যাত্রাপালা। যেখানে গান-বাজনা ও অভিনয়ের পাশাপাশি ধিকৃত অনেক অশ্লীল নৃত্য, জুয়া এমনকি দেহ ব্যবসাও থাকত। তখন গ্রাম বাংলায় নাটকের কলা-কুশলীকে স্বাভাবিক অর্থে নটরাজ নাট্যকার নট ও নটী বলা হলেও সাধারণ মানুষ নটী বলতে বুঝত দেহপসারিণীকে। এখনো দেশের বহু অঞ্চলে বেশ্যা বা পতিতাদের নটী বলা হয়।
যদিও নটী অর্থ নাটকের অভিনেত্রী কিন্তু তাদের দিয়ে বহু সময় দেহব্যবসা করানো হতো বলে সাধারণ মানুষ বেশ্যাকেও নটী বলে। সাধারণ বিনোদন যখন সীমালঙ্ঘন করে যৌন উত্তেজক নগ্ন নৃত্য আর দেহব্যবসার পর্যায়ে চলে গেল তখন সাধারণ সমাজ একে আর পছন্দ করত না। ভাবত উঠতি বয়সী কিশোর কিশোরী ও যুবা তরুণের চরিত্র ধ্বংস হতে পারে এ যাত্রাপালা দেখে।

এসময় গ্রাম বাংলায় ফল ফসল ছাড়াও বাড়ি ঘরে ছিঁচকে চুরি বেড়ে যেত। যাত্রা দেখার খরচ যোগাতে বখাটে ছেলেপেলেরা চুরি করত। স্বামীরা স্ত্রীর গহনা চুরি করত। অনেক সম্পন্ন ব্যবসায়ী ও গৃহস্থ পর্যন্ত যাত্রার মেয়েদের পেছনে নিজের সর্বস্ব হারিয়েছে। অনেক সংসার ভেঙে গেছে। এসবই বাংলার অতিক্রান্ত ইতিহাস। যাত্রাপালা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং ধীরে ধীরে উঠে যাওয়ার পেছনে এর ভেতরকার নিকৃষ্ট রূপটিও কম দায়ী নয়।
এর বাইরে বাংলাদেশে তেমন কোনো অন্যায় অশ্লীলতা ছাড়াই গণমানুষের হালকা আনন্দ বিনোদনের মাধ্যম ছিল বৈচিত্র্যময় বহু কথা কবিতা ও সুর। বাজনা ছাড়া পল্লীগীতি, নদীর মাঝির প্রাণখোলা ভাটিয়ালি, উত্তর বঙ্গের গাড়িয়ালদের ভাওয়াইয়া, আধ্যাত্মিক ও মরমী নানা সংগীত, মুর্শিদী, বিচ্ছেদ, মারফতী ইত্যাদি হাজারো গানের দেশ এ সুন্দর প্রকৃতির বাংলাদেশ।

এদেশের শত শত নদী, অসংখ্য ফুল পাতা পাখি, খোলা আকাশ, নির্মল বাতাস, সরল প্রাণ মানুষ, আল্লাহর অপার করুণার দান প্রকৃতি মানুষের মনে ভাবের উদয় ঘটায়। সে তার এবাদত ভক্তি ভাব ভালোবাসা বিচ্ছেদ মিলন বিরহ সুখ-দুঃখ হাসি-কান্না প্রভৃতির অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করে, কবিতার রূপ দেয়, ছন্দ ও সুরের মালা গাঁথে। এই হচ্ছে লোক সংস্কৃতি। এ বিষয়গুলো সোজা দুই ভাগ। এক ভাগ জায়েজ আরেক ভাগ শরিয়তে নাজায়েজ।
কথা যেমন জায়েজ, আবার মিথ্যা কথা, অশ্লীল কথা, আল্লাহ রাসূলবিরোধী কথা, শরিয়তবিরোধী কথা, অন্যের মানহানিকর কথা নাজায়েজ। গানও এমন। ভালো গান জায়েজ হলে মন্দ গান মন্দ কথার মতই নাজায়েজ। দ্বিতীয়ত অবৈধ বাজনার ব্যবহার ও নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশার মাধ্যমে অশালীন আবহ তৈরি নাজায়েজ। দেহতত্ত¡, নারী-পুরুষ বয়াতির লড়াই, অশ্লীল ইঙ্গিতপূর্ণ পালাগান ইত্যাদির নামে প্রচ্ছন্ন যৌনতার চর্চা হারাম।
কবির লড়াইয়ের নামে অভিনয় করেই দু’পক্ষ এমনসব কথা বলে যার কোনো কোনো বাক্য মানুষকে ইসলামের আওতা থেকে বের করে দেয়। বিচারগানে আল্লাহর বিপক্ষে কেউ কেউ এমন মন্তব্য করে যাতে সে আর এক মুহূর্তও মুসলমান থাকে না। অভিনয়ের জন্য কথা বলেও গায়ক কবি বা বয়াতি নাউজুবিল্লাহ কাফের হয়ে যায়।
এর পাশাপাশি তাদের কেউ কেউ নিজের ধারণা অনুযায়ী গানের কথাগুলোকে কোরআন হাদিসের চেয়েও বড় মনে করে। যে কোনো একটি বাণীকে কোরআনের আয়াত বলে দাবি করে। মনগড়া কথা বলে দাবি করে এটি বোখারী শরিফের হাদিস। মহানবী সা.সহ বহু নবী রসুল, পীর আউলিয়া ও বুজুর্গ ব্যক্তিগণের নামে মিথ্যা ঘটনা আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে বলে সমাজের মানুষকে বিভ্রান্ত করে।

সেসব বাজে কথার ভিত্তিতে সংশোধনকারী আলেম ওলামা, ইমাম খতিব, পীর মাশায়েখ, চেয়ারম্যান মেম্বার, প্রশাসন ও সাধারণ শ্রোতাদেরকেও অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। অশ্রাব্য মন্তব্য করে। মূর্খের মতো বিজ্ঞ আলেমদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়। অথচ এ ব্যক্তিটি হয়ত প্রকৃত মুসলিমই নয়। সে গোপন বাউল ধর্মের অনুসারী। অপবিত্র ও চরিত্রহীন। মাদকসেবী ব্যভিচারী লম্পট ব্যক্তি। এ দৃশ্যও বাংলাদেশে প্রচুর আছে।
যুগে যুগে বাংলার মানুষ কত হামদ নাত, মুর্শিদী, মারফতী ও নির্দোষ পল্লীগীতি, পালাগান, জারিগান গেয়েছেন। মানুষ রাত জেগে এসব শুনেছে। ধর্মের দিকে ঝুঁকেছে। আল্লাহ রাসূলের মহব্বতে চোখের পানি ফেলেছে। এখানে তো কোনো নষ্টামি বেশরা কাজকর্ম মাদক জেনা ব্যভিচার হয়নি। এসব লোকজ ঐতিহ্য বহু যত্মে মানুষ লালন করেছে। লাখো মানুষ মনের আবেগে এসব গুণগুণ করে থাকে। আশেকরা চোখের পানিতে মক্কা মদীনার মহব্বত প্রকাশ করে।

আল্লাহর রাসুলের সান্নিধ্য কামনা করে। সাহাবী ও নবী বংশের প্রতি মমতার প্রকাশ করে। নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, জিকির ও এবাদতের জন্য সুরে ও গানে নিজের হৃদয়ের আকুতি প্রকাশ করে। নিজের আপন জনের বিচ্ছেদ ও বিরহ গানের সুরেই যুগে যুগে মানুষ ব্যক্ত করেছে। নাজায়েজ অনুষঙ্গ, নিষিদ্ধ বাজনা, মাদক, যৌনতা ও অশ্লীলতা মিলিত না হলে এমন কথা ও সুর নিষিদ্ধ নয়।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এসব কথা সুর ও গানের সুযোগে শত শত বছর ধরে বাংলাদেশে ইসলামবিরোধী বর্ণচোরা একটি গোষ্ঠী বিভিন্ন নামে ইসলাম মুসলমান কোরআন সুন্নাহ ও আকিদা বিশ্বাসের ওপর চরম আঘাত হানার প্রয়াস পায়। আর তাই আলেম ওলামাদের সাথে তাদের চরম শত্রুতা।

আলেমগণ জনগণের ঈমান ও চরিত্র রক্ষার জন্য এসব বেশরা ফকিরের বিরুদ্ধে জীবনভর সংগ্রাম করে এসেছেন। এ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে বুঝতে হবে। প্রশাসনকে বুঝতে হবে। স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বুঝতে হবে। তা না হলে মানুষ ধরতে পারবে না আলেম ও বেশরা ফকিরদের মধ্যে সমস্যাটা কী। ধর্মপ্রাণ মানুষ আর সংস্কৃতির দোহাই দেয়া চরিত্রহীন লম্পটদের মধ্যকার বিরোধটি কী।

এদেশের মানুষ বহুরকম গানের ভক্ত। রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল সংগীত, আধুনিক গান, লালনগীতি, বয়াতিদের নানা প্রকারের গান ইত্যাদি। কোনো গানের কলি যদি কোরআন সুন্নাহর বিরোধী হয় কিংবা অশ্লীল ইঙ্গিতবহ ও তরুণ-তরুণীদের নৈতিক অধঃপতনের কারণ হয় তাহলে কি আলেম ওলামারা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন ও প্রতিবাদী হবেন না?
এ বিষয়টি তো প্রশাসনকেও বুঝতে হবে। তাদের জেনেশুনে জ্ঞানী হতে হবে। ধর্ম সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সমানভাবে বুঝতে হবে। গানের নামে যেসব কথা কানে আসে অথচ তা মা বাবা পিতা কন্যা একে অপরের সামনে শুনতে পারা যায় না, এসব অসভ্য জানোয়ার গীতিকারদের গান উচ্চ স্বরে বাজিয়ে মানুষকে শুনতে বাধ্য করা কোনো সভ্য দেশের প্রশাসন বরদাশত করতে পারে না। আমাদের ধীরে ধীরে উন্নত ও সভ্য হতে হবে।
মানুষ তো কেবল ব্যবহারিক বিষয়গুলোই বুঝে। যারা সাধারণ বাউল তাদেরও এতটা গভীর ধারণা থাকে না কিন্তু গবেষকরা বিশেষজ্ঞরা অনেক বেশি জানেন ও বোঝেন। তারা শিকড়ের খবর রাখেন। তাদের দায়িত্ব থাকে মানুষ যেন অসভ্যতার গভীরে তলিয়ে না যায় তা লক্ষ্য রাখার আর মানুষকে সময় মতো সতর্ক করার। জাতিকে রক্ষা করার।

সম্প্রতি টাঙ্গাইলে জনৈক শরিয়ত বাউল চরম উগ্র ও নগ্ন ভাষায় দেশের সমস্ত আলেমসমাজকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে পঞ্চাশ লাখ টাকার চ্যালেঞ্জ দেয় যে, যদি কেউ বেশরা ফকিরদের গান বাজনা আর বাউলদের কীর্তিকলাপ জায়েজ নয় বলে প্রমাণ করতে পারে তবে সে এ টাকা প্রদান করবে। সে তখন মুখে আনা যাবে না এমন সব কথা ও গালমন্দ দেশের সব আলেমকে করে। স্থানীয় আলেমদের মামলায় শরিয়ত বাউলকে পুলিশ গ্রেফতার করে। প্রগতিশীল সমাজ-এর প্রতিবাদ করে।
আলেমদের জন্য তাদের দুঃখ না হলেও শরিয়ত বাউলের জন্য কলিজা ফেটে যায়। হাসানুল হক ইনু সংসদে শরিয়ত বাউলের জন্য বক্তব্য রাখেন। সাবেক মন্ত্রী ও এমপি বাউলের পক্ষে কথা বলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে-এর জবাব দিতে হয়। তাছাড়া একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তিনি বহু কিছু বোঝেন। বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী হিসেবে লোক সংস্কৃতি ও বাউল শিল্পীদের বিষয়ে তার জানাও আছে প্রচুর।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাউল গানের কোনো দোষ নেই। কিন্তু বাউল গানে যারা গান করে বা ব্যক্তিবিশেষ যদি কোনো অপরাধে সম্পৃক্ত হয় তাহলে আইন তার আপন গতিতে চলবে, আইন তার ব্যবস্থা নেবে। বাউল গান গাচ্ছেন বলেই তারা একেবারে সবাই অপরাধের ঊর্ধ্বে; আর কোনো অপরাধই তারা করেন না বা করেননি, এটি তো ঠিক না।’
২২ জানুয়ারি ২০২০ বুধবার বিকেলে একাদশ জাতীয় সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার দলীয় জোটের শরিক সদস্য হাসানুল হক ইনুর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদকে এ সব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

সম্পূরক প্রশ্নকর্তা ইনু বলেন, সম্প্রতি শরিয়ত বাউলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে আইসিটি আইনে। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা সাম্প্রতিককালে দেখছি; বাউলদের চুল কেটে দেয়া হচ্ছে, গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, ৭৫’এ বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর সামরিক শাসকরা এবং সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী যে বাংলাদেশে জবর-দখলের রাজনীতি করেছিল তারা এ দেশের বাউল-যাত্রাগান, পালাগান, এবং গান বাজনার সংস্কৃতি চর্চার ওপরে একটা আক্রমণ পরিচালনা করেছিল। তার রেশ এখনো চলছে। এ ব্যাপারে বিশ্ব ঐতিহ্যের বাউল সম্প্রদায়কে রক্ষা করার জন্যে আরো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সরকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে... (মাইক্রোফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন)।

প্রধানমন্ত্রী উত্তরে বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি উনি (ইনু) কী বলতে চাচ্ছেন। এখানে একটি কথা বলি আমি। আমরা বাউল গানকে বিশ্ব ঐতিহ্য করার উদ্যোগ নিয়েছি এবং অর্জন করেছি। ‘মাননীয় স্পিকার, আপনার মাধ্যমে আমি সংসদ সদস্যের কাছে জানতে চাই যে, বাউল গানের তো কোনো দোষ নাই। কিন্তু বাউল গানে যারা গান করে বা ব্যক্তিবিশেষ সে যদি কোনো অপরাধে সম্পৃক্ত হয় তাহলে আইন তার আপন গতিতে চলবে, আইন ব্যবস্থা নেবে।’
‘এটির সঙ্গে তো গানের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আর সংসদ সদস্য কী এ গ্যারান্টি দিতে পারবেন, যারা বাউল গাচ্ছেন, আর বাউল গান গাচ্ছেন বলেই তারা একেবারে সবাই অপরাধের ঊর্ধ্বে; আর কোনো অপরাধই তারা করেন না বা করেননি! এটি তো ঠিক না।’

যেহেতু তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিশ্চয়ই কোনো অপরাধের সঙ্গে সংযুক্ত বা অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাই আমি বলব, এরা এমন কোনো কাজ যেন না করে। আজকে যে বাউল গান বিশ্ব ঐতিহ্যে স্থান করে নিয়েছ সেটি যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। সে ব্যাপারে আমাদের সচেতন থাকা দরকার এবং তাদেরকেও সচেতন করা দরকার।’
এখনো যদি কেউ কিছু করে থাকে, এই ধরনের অপরাধ যদি কেউ করে। আমরা সেটা দেখব, কারা করছে এবং তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেব। কারণ অহেতুক কারো চুল কাটা বা গানে প্রতিবন্ধকতা করা এটি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

কুষ্টিয়ায় বাউল সম্প্রদায়ের থাকার জায়গায়টাকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই উন্নত করা হয়েছে জানিয়ে সংসদ নেতা আরো বলেন, ‘এটি কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে। সেখানে বাধা পেয়েছি আমরা। প্রথমবার যখন আমরা করতে গেলাম, তখন অনেকেই বাধা দিলো। ওই ঝুঁপড়ি-টুপড়ি করে, কাঁদা-মাটি ওভাবেই থাকবে।
তখন আমাদের মন্ত্রী ছিলেন ওবায়দুল কাদের। সংস্কৃতি বিষয়কটা তার হাতেই ছিল। এদেরকে অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তারপরে তাদেরকে খুব সুন্দরভাবে একটা পরিবেশ তৈরি করে দেয়া হয়েছে। বাউল গানের এই ঐতিহ্যকে রক্ষা করার জন্য। যে কারণে সেই উদ্যোগের ফলেই তো আজকে আমরা এ ঐতিহ্য পেয়েছি।’
বাংলাদেশের বাউল গান বিশ্ব ঐতিহ্য হয়েছে তবে এই গানের কিছু লোক যারা বিশ্বাস ও সংস্কৃতির দিক দিয়ে এদেশের ৯০ ভাগ মানুষের বিশ্বাস ও সংস্কৃতির সাথে মোটেও খাপ খায় না। এমনকি তারা এদেশের প্রচলিত কোনো ধর্মের অনুসারীও নয়। স্বতন্ত্র জীবনাচারের অধিকারী। তাদের সংশোধন ও তওবা ছাড়া তাদের জাতীয় ঐতিহ্য কিংবা বিশ্ব ঐতিহ্য বলে স্বীকার করা বাংলাদেশের জন্য হবে চরম লজ্জাকর।

বাউল মতবাদ পৈতৃক কোনো ধর্ম নয়। ভারত এবং মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিবাদী ধর্ম এবং সামাজিক আন্দোলন থেকে এই মতবাদকে আবিষ্কার করার উৎস বলে মনে করা যায়। প্রাচীন এক ঐতিহ্য গুরু সূত্রস্য ও পরম্পরায় বাহিত এবং পরিবাহিত হয়ে বাউল তত্ত্ব বয়েই চলেছে। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ইহজাগতিক অমানবিক দর্শন, ধর্মীয় কথায় জড়িয়ে দেয়া কুসংস্কার অথবা সামাজিক অনৈতিক রীতি-নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী স্রোতের সম্মিলিত রূপই বাউল।
বৌদ্ধ, বৈদিক, বামাচারী সাধকের সাধনা, তন্ত্র, বৈষ্ণবতায় বা বৈষ্ণব সহজিয়া সাধকের ধ্যান বা জ্ঞানে বাউল মতবাদের জন্ম হয় নাই। মূলত লোক সমাজের প্রতিবাদ থেকে-এর জন্ম। প্রতিবাদের পরেও প্রতিবাদই একে পুষ্ট করে এবং বাঁচিয়ে রাখে। চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় দশম শতকের নাঢ় পন্ডিত এবং তার স্ত্রী নাঢ়ীকে বাউল মতের আদি প্রবক্তা মনে করেন।

বাউলদের উদ্ভব বা বিকাশ যেভাবেই হোক না কেন, বাংলাদেশের বাউলেরা দুই ধারায় দর্শন প্রচার করে থাকে। প্রথমত বৈষ্ণব সহজিয়া মতবাদ এবং দ্বিতীয়ত হলো মানবভজন মতবাদ। তবে এই দুই ধারার বাউলদের বিশ্বাস উপস্থিত এক জায়গাতে। “যা আছে ব্র‏‏‏হ্মান্ডে, তা আছে এই দেহ ভান্ডে”। অর্থাৎ প্রকৃতি এবং সৃষ্টি রহস্যের তাবৎ অনুচ্ছায়া আমাদের শরীরে বিদ্যমান।
আবার বাউলদের জীবন-যাপন দুই ধরনের। এরা এক হলো গৃহী, দুই হলো যোগী বা সন্ন্যাসী। অন্য বৈশিষ্ট্য যাই থাকুক না কেন সকল বাউলেরা সঙ্গীত সাধন করে থাকে। যোগী বা সন্ন্যাসী বাউলের দেখা মেলা ভার এখন এই দেশে। এ জন্য আমাদের সামাজিক নিরাপত্তার দুরবস্থা অনেকটা দায়ী। আমাদের দেশে গৃহী বাউলের সংখ্যা বেশি। এদের বসবাস আবার দেশের উত্তর এবং দক্ষিণ অঞ্চলেই বেশি।
হিন্দু কিংবা মুসলমান যে ধর্মের দাবিদার বাউলই হোক না কেন এদের মধ্যে ধর্মে কোনো পার্থক্য নেই। এরা যৌক্তিকতা পোষণ করে তবে বাহাস বা তর্ক নয়। শরিয়তপন্থীরা বাউলদের শক্রু। বাংলা ১৩ শতকের ত্রিশ দশকে বাউলেরা এদের দ্বারা প্রবল বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছিল। মুসলিম দাবিদার বাউলদের বলা হতো শরিয়ত অস্বীকারকারী ফকির, সংক্ষেপে বেশরা ফকির। যশোর, রাজশাহী এবং কুষ্টিয়াতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিজয় সরকার, পাগলা কানাই, গগণ হরকরা, লালন এবং কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের কারণে বাউল সাধন চর্চ্চা গতি পেয়েছিল।

কেউ কেউ মনে করেন, বিন্দু সাধনা থেকে বাউল ধারার উৎস এসেছে। অর্থাৎ বিন্দু সাধনাকে রূপান্তরিত করে এসেছে বাউল মতবাদ। বিন্দু, হাওয়া, নিরঞ্জন, প্রাণপাখি এমন এক শুটকীটের অনেক নাম। আবার ইড়া, পিঙ্গলানাড়ী, সুষমা এ সকলকে নিয়ন্ত্রণ করে বীর্য ক্ষমতাকে ধারণ করাই বাউল সাধনার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। তবে এই বিন্দুর সাথে আরো চারটি বিষয়কে সংযত পর্যায় রাখতে হয়। কিন্তু তা ইচ্ছে করলেই পরিত্যার্য নয়। তা হলো, রজঃ, মল, মূত্র এবং বীর্য।

বাউলদের মতে এগুলো হলো তাদের ভাষায় চারি চন্দ্র এগুলো বায়ু, পানি ও আগুনের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। বাউলেরা বিশ্বাস করেন এই বিষয়গুলো দিয়ে মানব শরীর গঠিত হয়। নাউজুবিল্লাহ তারা বীর্যকে খোদাও মনে করে। বাউল সংগীতের প্রতিটি পরিভাষা অশ্লীলতার প্রতীক। তারা অনেক গান এমন রচনা করে যা শুনলে মানুষ আধ্যাত্মিক বলে ভাববে কিন্তু মূলত এসবের দ্বারা তারা নারী অঙ্গ, পুরুষাঙ্গ, অবৈধ সঙ্গম, সাধন, মাছ শিকার প্রভৃতি শব্দ ও অর্থকে নিজেরা বুঝে নেয়। তাদের মতে সাধনার উপজীব্য বলতে এগুলো গুরুত্বপূর্ণও বটে।
বাউলধারা আরো মনে করে, দীর্ঘ জীবন এবং অসুখ-ব্যাধি থেকে রেহাই পেতে শরীরে সৃষ্ট জিনিস শরীর ফিরে পেলে তা সম্ভব হয়। রজঃ, মল, মূত্র এবং বীর্য এই চারি চন্দ্রের সমাহারে বাউলেরা ‘প্রেম ভাঙ্গা’ নামে পেঁপের বীজের মত দেখতে একধরনের বটিকা তৈরি করে এবং তা নিয়মিত মুখের মধ্যে দিয়ে রাখে। বাউলেরা বিশ্বাস করে এই বটিকার কারণে তাদের জটিল অসুখ-বিসুখ হয় না।

তারা আরো বিশ্বাস করে, দীর্ঘস্থায়ী এবং জটিল রোগের হাত হতে রেহাই পেতে নারীদের বুকের দুধ নাকি পান করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এমনকি এই দুধ ও কিশোরীদের মাসিকের রক্ত পান করলে দীর্ঘ সময় যৌবনকে ধরে রাখা যায়। তবে আর যাই হোক বাউলদের জীবন চলে তাদের ভক্তিবাদ এবং দেহতত্তে¡¡র গান পরিবেশনা দিয়ে।
তাদের গানের শব্দ এবং সুরের মধ্যে লুকিয়ে থাকে তাদের ধর্ম জ্ঞান, বিশ্বাস, কর্তব্যসমূহ। বাউলদের গানের কথাগুলো বেশ দুর্বোধ্য। গুরুসাধনায় সফল হলে, তাঁরা এই গানের সাধনতত্ত¡ উপলব্ধি করতে পারেন। গুরু সাধনের মাধ্যমে শিষ্যের বিনির্মাণ সম্ভব। এই বিনির্মাণ হলে দেহ থেকে আত্মার মুক্তির উপায় হিসেবে তা বিবেচিত হয়।

সঙ্গিনী ছাড়া বাউলধারা একেবারেই মিছে। তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে অথবা নির্বাচিত সঙ্গিনী হিসেবে বাউল দর্শন বা তাদের ক্রিয়াকলাপসমূহ পালন করে থাকে। লোক ধর্মগুলোতে সন্তান জন্ম দেয়া যায়। বাউল ধারায় সন্তান জন্মের কোনো স্থান নেই। নিঃসন্তান সাধক বাউলেরা বাউল ধারায় পরম শ্রদ্ধেয়। বৈষ্ণব-বৈষ্ণমীদের সন্তান হলে আখড়া বাসের অধিকার থাকে না।
তবে কর্তাভজাদের সন্তান দেয়া অসাধুত্বের লক্ষণ না হলেও বাউলরা কিন্তু পতিকে ভজনা করেন, তবে সৃষ্টিকে করেন না। বাউলেরা বলে পৃথিবীর বাইরে কোনো সুখ-দুঃখ নেই। দেহ বহির্ভূত কোনো আল্লাহ নেই। দুই না হলে কোনো সৃষ্টি হয় না। বাউলেরা গৃহস্থ এবং ত্যাগীদের মধ্যবর্তী অবস্থানে থাকে। সন্তান, সম্পত্তি, ভোগবাদে তাদের অনীহা। তাদের অম্বিষ্ট সাধুত্ব এবং আত্মস্বার্থহীন মানবতা।

বাউলেরা মনে করেন ‘শ্বাস’ কে যদি নিয়ন্ত্রণ করা যায় তবে জীবনকে সবচেয়ে বেশি উপভোগ্য করা সম্ভব। নিজেদের শ্বাস কে ভিত্তি করে বাউলরা তাদের যৌন জীবনকে ভোগময় করে গড়ে তোলে। যৌন মিলনের সময় কখন কীভাবে নসারন্ধ্রের কোন পার্শ্ব দিয়ে শ্বাস প্রবাহিত হচ্ছে এবং পুরুষদের যে পার্শ্ব ব্যবহার হয় তখন নারীদের কোনো পাশে শ্বাস প্রবাহিত হয় কিংবা কোন পাশ ব্যবহার করা উচিৎ তার কৌশল ও ক্রিয়া কলাপের বিষয় রপ্ত করে নিতে হয়। যৌন বীর্যপাতের সময় শ্বাস প্রবাহ বন্ধ করে রাখতে হয়। এভাবে সময়ক্ষেপণ করে আবারও তারা যৌন কাজে লিপ্ত হয়ে থাকে। এতে দীর্ঘক্ষণ তারা যৌনতাকে উপভোগ করে। তবে পুরুষ বাউলেরা এক্ষেত্রে নিজেদের সাথে নারীদেরকে উপভোগ্য করে তোলে।

গোমাংস বাউল সমাজে নিষিদ্ধ। এই মাংস হিন্দু এবং মুসলমান বাউল সমাজে নিষিদ্ধ হওয়াতে উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক গাঢ় হয়েছে। নিষেধ সত্তে¡ও গঞ্জিকার অপ্রতিহত প্রভাব বাউল সমাজে পড়েছে। সাধুদের অন্ন, তেল এবং তামাক, গাঁজা সেবা দেয়া আবশ্যক। বাউলেরা মনে করেন, মদ বা তাড়ি খাওয়া বাউল সমাজের নৈতিক আপত্তি, এ নেশা মানুষকে উত্তেজিত এবং উশৃঙ্খল করে তোলে।
কিন্তু গাঁজা বা আফিং এর নেশা মানুষকে আত্মমগ্ন করে। গাঁজা প্রাকৃতিক নেশা। যা থেকে গাঁজা, ভাঙ্ , গঞ্জিকা, চারস তৈরী হয়। তা কাঁচা, শুকনো, শেকড় ও ডাল দিয়ে তৈরি হয়। তারা মনে করে সামাজিক উশৃঙ্খলা গাঁজা নেশা থেকে হয় না। (এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন “বাউল তত্ত্ব” ড. আহমদ শরীফ। “বাংলাদেশের বাউল সমাজ সাহিত্য ও সংগীত” ড. আনোয়ারুল করীম, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক লালন একাডেমী। “ব্রাত্য লোকায়ত লালন” সুধীর চক্রবর্তী।)

এরই মধ্যে রীতা বাউল নামক এক বয়াতি তার গানের পালার অংশ হিসাবে মহান আল্লাহ তায়ালাকে নাউজুবিল্লাহ “তুমি হইলা সবচেয়ে বড় শয়তান” এ ধরনের কথা বার বার বলেছে। ধর্মপ্রাণ মানুষের করা মামলায় পুলিশ তাকেও গ্রেফতার করে। অন্য এক মহিলা বয়াতি দেশের কয়েকজন আলেমকে অকথ্য ভাষায় গানের স্টেজে দাঁড়িয়ে গালাগালি করেছে। ছাপার অযোগ্য ও ভদ্র লোকের অশ্রাব্য এমন গালি পাড়ার মেয়ে লোকরাও দেয় কিনা সন্দেহ। তার বিরুদ্ধে কেউ মামলা করেনি, করলে সেও গ্রেফতার হত।

ইদানিং ইন্টারনেটের কল্যাণে এসব অনাচার দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আর কিছু লোকের কারণে সংসদেও ওঠে পড়ে। আরেক বাউল বলেছে, “গুরু আল্লাহর চেয়েও বড়”। তাকে অবশ্য গ্রেফতার করা হয়নি। এই বাউল বিশেষ একটি ধর্মাবলম্বী। মামলাকারীরাও এ নিয়ে চাপাচাপি করছেন না কারণ দুষ্ট বুদ্ধির লোকেরা এ মামলাটিকে অন্য কোন দিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করতে পারে। সাধারণ অপরাধকে সাম্প্রদায়িক রূপ দিতে পারে।

ইদানিংকার কিছু ঘটনায় নির্দোষ বাঙালি সংস্কৃতির সরলতাকে বিনষ্ট ও প্রশ্নবিদ্ধ করার একটি পাঁয়তারা লক্ষ করা যাচ্ছে। ৯০ ভাগ মুসলমানের ধর্মীয় অনুভ‚তিতে আঘাত দেয়ার পর সরকার আইনগত ব্যবস্থা নিলে জাতীয় সংসদে কখনো রাশেদ খান মেনন, কখনো ইনু আর কখনো লোকশিল্পী মমতাজ বেগম দাঁড়িয়ে পড়ছেন। সুযোগে তারা আলেম ওলামাদের একহাত নিচ্ছেন। অনেকের ধারণা হঠাৎ করে বয়াতিদের এভাবে ক্ষেপে ওঠার পেছনে নাস্তিক বাম শক্তির কোনো ইন্ধন আছে। যেমন নাস্তিক মুরতাদরা শাহবাগে জমে বসেছিল।
বর্তমানে দেশে স্থিতি বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীও দেশবাসীর আবেগ অনুভূতি অনুযায়ী প্রয়োজনে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিচ্ছেন। এ পরিস্থিতি একটি মহলের পছন্দ হচ্ছে না। তারা অপরাধীকে ঢেকে রেখে ধর্মীয়ভাবে আহত মুসলমানদের কলিজায়ই বারবার আঘাত হানছেন। বাউল সংস্কৃতির আসল ধারক-বাহক ও কঠিন বয়াতি নারী-পুরুষেরা যে ধরনের ব্যক্তিগত জীবন যাপন করে সেসব গবেষণা গ্রন্থে আছে। মানুষের সামনে যত কম বলা যায় ততই মঙ্গল। এরা তালাক না নিয়েই পাঁচ ছয় বার স্বামী বদল করে, প্রভাবশালী একজনের পরিচয়ে দেশজুড়ে বিচরণ করে বটে তবে ইচ্ছা হলেই সাধন সঙ্গী বা সঙ্গিনী বেছে নেয়। করে লাম্পট্য নাম দেয় সাধনা।

কিন্তু একটি বিষয় বুঝে আসে না, যারা বাউল বা বয়াতি নয় তাদের কেন এত যন্ত্রণা। যেখানে প্রধানমন্ত্রী বললেন, বাউল বলে নয় কিংবা বয়াতি বলে নয় আইনত অপরাধী বলে কাউকে ধরা হতেই পারে। এতে সংস্কৃতি বা ঐতিহ্যের কী সর্বনাশটা হয়ে গেল?
আমাদের মনে হয়, অপরাধীর সমর্থন করায় এসব এমপিকেও আইনের সুযোগ থাকলে ধরা উচিত। দেশের আলেম ওলামা ও ৯০ ভাগ মানুষের ধর্ম বিশ্বাসের ওপর আঘাতে যাদের কিচ্ছু যায় আসে না, তাদের যত দুঃখ ও কান্না সবই সেই ঘৃণ্য অন্ধকার কানা গলির পচা বাসিন্দাদের জন্য। এদের মুখোশ জাতির সামনে উন্মুক্ত হওয়া উচিত। এদের তাদের পছন্দের জায়গায়ই ফেরত পাঠানো উচিত।

এ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার সঠিক অবস্থানের জন্য ধন্যবাদার্হ। প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে হবে। আইন অপরাধীর ক্ষেত্রে নিজস্ব গতিতে চলুক। লোক সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে কারো দ্বিমত নেই। দ্বিমত একচোখ কানা তথা কথিত প্রগতিশীলদের যারা অপরাধীর পক্ষ নেন, মজলুমের কথা ভুলে যান। ভাগ্যক্রমে সংসদে এসেছেন, আছেনও অনেক দিন ধরে। গোল বাঁধানো ছাড়া জীবনে তারা আর কোনো কিছু করেছেন বলে জাতি মনে করতে পারে না।



 

Show all comments
  • ফজলুল হক ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:২৯ এএম says : 0
    অনেক দিন পর একটা মনের মত লেখা পড়লাম। খুব ভালো লাগলো
    Total Reply(0) Reply
  • সেলিম উদ্দিন ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:২৯ এএম says : 0
    মহান আল্লাহ তায়ালা লেখককে উত্তম জাযাহ প্রদান করুক।
    Total Reply(0) Reply
  • জাফর ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:৩২ এএম says : 0
    ভাগ্যক্রমে সংসদে এসেছেন, তাই যা খুশি তাই বলছেন। কারণ এদের নিজেদের যোগ্যতায় আসতে হয়নি। এরা দেশের মানুষ ও তাদের চিন্তা চেতনা লালন করে না।
    Total Reply(0) Reply
  • সাব্বির ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:৩৩ এএম says : 0
    দেশের মুসলমানদেরকে এখনই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, না হলে আমাদের কপালে কি আছে তা আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন।
    Total Reply(0) Reply
  • শরীফ ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:৩৯ এএম says : 0
    এই বিষয়টি নিয়ে লেখার জন্য ইনকিলাবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • টুটুল ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:৪১ এএম says : 0
    দেশে কিছু কিছু বাউল শিল্পী আছেন, উনারা আল্লাহ ও রাসূল (স.) নিয়ে মনগড়া ফতোয়া দিয়ে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করেন। যেটা চরম অন্যায়।
    Total Reply(0) Reply
  • তানিয়া ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:৪১ এএম says : 0
    কিছু কিছু বাউল শিল্পীদের কারণে গানের প্রতি একটা ঘৃণা জন্মে যাচ্ছে ইসলামপ্রিয় মানুষের মনে।
    Total Reply(0) Reply
  • নিজাম ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:৪২ এএম says : 0
    ইনু-মেনন-মমতাজ-আউল-বাউল এদের নিয়ে কথা বলতেও রুচিতে বাধে
    Total Reply(0) Reply
  • শরিফুল ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৯:০৮ এএম says : 0
    প্রতিবেদনটি যতাযথ অর্থবহ।কবিরগান,বাউলগান এসব অনেক শিরকের কথা বলা হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Great. Thanks daily inqilab. ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৯:১৪ এএম says : 0
    Great and daily inqilab. Brave news
    Total Reply(0) Reply
  • Selim ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১০:২১ এএম says : 0
    ভাগ্যক্রমে সংসদে এসেছেন, আছেনও অনেক দিন ধরে। গোল বাঁধানো ছাড়া জীবনে তারা আর কোনো কিছু করেছেন বলে জাতি মনে করতে পারে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Faruk ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১১:২০ এএম says : 0
    অনেক দিন পর ভালো একটা লেখা নিয়ে এসেছে ইনকিলাব, ইনকিলাব কে এ লেখার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি । সামনের দিন গুলোতে আরও লেখা আনবার জন্য অনুরোধ করছি।।
    Total Reply(0) Reply
  • তানভীর ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:২০ পিএম says : 0
    সঠিকভাবে তথ্য তুলে ধরার জন্য লেখক করে অসংখ্য ধন্যবাদ। যারা গান গেয়ে বেড়ায় মুসলমানদের অনুভূতিতে আঘাত করে কিছু সংসদ সদস্য,যারা সঠিকভাবে নির্বাচন হলে জামানত হারাবেন তারা ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলে।
    Total Reply(0) Reply
  • Me habib ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ২:১৭ পিএম says : 0
    আমি ইনকিলাব নিউজটা প্রায় পড়ে থাকি কিছু কিছু সাংবাদিক দ্বীনের ব্যাপারে ভালো লেখালেখি করেন তাদের জন্য দোয়া রইল
    Total Reply(0) Reply
  • Super Men ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৫:২৭ পিএম says : 0
    ভালো লেখা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজনৈতিক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ