Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইতিহাসগড়া হ্যাটট্রিকে পথহারা বাংলাদেশ

কাপালির রেকর্ড নাসিমের

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

কালো হতে বসেছিল রাওয়ালপিন্ডির আকাশ। আর মাত্র কয়েকটা ওভারের পথ। তারপরই দিন শেষের ঘোষনার অপেক্ষায় আম্পায়রা। ২ উইকেটে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১২৪ রান। প্রথম ইনিংসের তুলনায় ভালোই বলা চলে। কিন্তু এরপরই খেই হারিয়ে বসে তারা। নাসিম শাহর বোলিং তোপে পাঁচ ওভারের ব্যবধানে স্কোরবোর্ডে ২ রান যোগ করতেই নেই ৪ উইকেট! টেস্ট ইতিহাসে সর্বকণিষ্ঠ বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিকই তুলে নেন এই পেসার।

৪১তম ওভারে এসে হ্যাটট্রিক করে বসেন তিনি। ভাগ্যও ভালো ছিল নাসিমের। চতুর্থ বলটি নাজমুলের প্যাডে আঘাত হানে। পাকিস্তানিদের জোরালো আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলেও অধিনায়ক আজহার আলী রিভিউ নেন। কপাল খোলে সেখানেই। রিভিউ নিয়ে ৩৮ রানে অপরাজিত নাজমুলকে প্যাভিলিয়নে পাঠায় পাকিস্তান।

দিনের শেষ বেলা বলেই নাজমুলের আউটে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে তাইজুল ইসলামকে মাঠে নামায় বাংলাদেশ। কিন্তু আরেকবার তাইজুলের প্যাড খুঁজে নেন নাসিম। নাসিমকে এবার আবেদনও করতে হয়নি। আম্পায়ার নাইজল লং আঙুল তোলেন সরাসরি। হ্যাটট্রিক বল সামাল দেওয়ার জন্য যোগ্য ব্যক্তিই ক্রিজে ছিলেন। কিন্তু অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ হ্যাটট্রিক বল সামাল দিতে এসে খেললেন ভুল শট। ফুল লেংথের বলটি ড্রাইভ করতে গিয়ে ক্যাচ দেন সিøপে। হারিস সোহেল ক্যাচটি লুফে নিতে ভুল করেননি। রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামে নাসিম ও পাকিস্তান দলের উল্লাস আর দেখে কে! সবচেয়ে তরুণ ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট হ্যাটট্রিকে নাসিম দখল করলেন অলক কাপালির রেকর্ড। কাকতালীয় হলেও সত্য, ১৭ বছর আগে সেদিন বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান। ২০০৩ সালের সেই ম্যাচের ভেন্যুও এদেশেরই, পেশোয়ার।

অথচ গতকাল বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা ছিল বেশ ভালো। ২১২ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দলকে ইতিবাচক শুরু এনে দেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সাইফ হাসান। ৩৯ রানের ওপেনিং জুটিতে বেশ সাবলীলই দেখাচ্ছিল তাদের। অবশ্য ইনিংস লম্বা করতে পারেননি কেউই। সাইফ হাসানের বিদায়ে ভাঙে জুটি। এরপর খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি আরেক ওপেনার তামিম ইকবালও। ৫৩ রানে দুই ওপেনারকে হারানোর পর তৃতীয় উইকেট জুটিতে দৃঢ়তা দেখিয়েছিলেন শান্ত ও অধিনায়ক মুমিনুল।

কিন্তু এবারও সেই একই গল্প। আবারো উইকেটে সেট হয়ে ইনিংস না করতে পারার আক্ষেপ। তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে টাইগারদের ব্যাটিং। তবে বাংলাদেশ শিবিরে আরও বড় ধাক্কাটা দেন ইয়াসির শাহ। পাঁচ উইকেট হারিয়ে ধুকতে থাকা দল তখন তাকিয়েছিল মোহাম্মদ মিঠুনের ব্যাটে। আগেই ইনিংসেই দারুণ ধৈর্যশীল এক ইনিংসে টাইগারদের ম্যান রক্ষা করেছিলেন তিনি। কিন্তু এদিন ইয়াসিরের কিছুটা জোরের উপর রাখা বলে বোল্ড হয়ে গেলে বড় বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। এক প্রান্ত আগলে রেখে এখনও টিকে আছেন মুমিনুল। ৮৭ বলে ৩৭ রান করে অপরাজিত আছেন অধিনায়ক। ইনিংস পরাজয় এড়াতে চতুর্থ দিনে মুমিনুলের ব্যাটের দিকেই যে তাকিয়ে গোটা বাংলাদেশ।

তবে সকাল থেকে দারুণ বল করলেন বাংলাদেশের বোলারদের সবাই। মাত্র ১০৩ রানে পাকিস্তানের শেষ ৭ উইকেট তুলে নিয়ে সাড়ে চারশর আগেই স্বাগতিকদের থামান রুবেল হোসেন-আবু জায়েদ চৌধুরীরা। আগের দিন ১৭ ওভারে ছিলেন উইকেটশ‚ন্য। তৃতীয় দিন ৮ ওভার ৫ বলে নিলেন ৩ উইকেট। রুবেলের পাশাপাশি দারুণ বোলিং করলেন অন্যরাও। দ্বিতীয় সেশনে পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে অলআউট হয় ৪৪৫ রানে। লিড ২১২ রানের। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে করেছিল ২৩৩।

আঁটসাঁট বোলিংয়ে এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। এদিনও দ্বিতীয় ওভারে রাহীর বলে সিøপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বাবর আজম। আগের দিন ফিফটি করা আসাদ শফিক যোগ করেন আর ৫ রান। তাকে কট বিহাইন্ড করেন আরেক পেসার ইবাদত হোসেন। উইকেটকিপার মোহাম্মদ রিজওয়ানকে ফিরিয়ে রুবেল পান প্রথম উইকেট। ডানহাতি পেসার এরপর এলবিডবিøউ করেন ইয়াসির শাহকে।

লাঞ্চের আগে ৭৮ রান তুলতে পাকিস্তান হারায় ৪ উইকেট। এক প্রান্ত আগলে রেখে পাল্টা আক্রমণে ফিফটি করেন হারিস। বিরতির পর আর বেশিক্ষণ টেকেনি পাকিস্তানের ইনিংস। শাহিন শাহ আফ্রিদিকেও এলবিডবিøউয়ের ফাঁদে ফেলেন রুবেল। বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামকে ছক্কায় ওড়াতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ দেন হারিস। ১০৩ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় তিনি করেন ৭৫ রান। আর নাসিম শাহকে রান আউট করে স্বাগতিকদের ইনিংস গুটিয়ে দেন সাইফ হাসান।
রুবেল ও আবু জায়েদ নেন ৩টি করে উইকেট। তাইজুল ২টি ও ইবাদত নেন একটি উইকেট।


স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-পাকিস্তান, ১ম টেস্ট ৩য় দিন
টস : পাকিস্তান, রাওয়ালপিন্ডি
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ২৩৩
পাকিস্তান ১ম ইনিংস (আগের দিন) ৮৭.৫ ওভারে ৩৪২ (মাসুদ ১০০, আজহার ৩৪, বাবর ১৪৩*, আসাদ ৬০; রাহী ২/৬৬, তাইজুল ১/১১১)
রান বল ৪ ৬
বাবর ক মিঠুন ব রাহী ১৪৩ ১৯৩ ১৮ ১
আসাদ ক লিটন ব ব এবাদত ৬৫ ১২৯ ৯ ০
হারিস ক তামিম ব তাইজুল ৭৫ ১০৩ ৭ ২
রিজওয়ান ক মাহমুদউল্লাহ ব রুবেল ১০ ২৩ ১ ০
ইয়াসির এলবি ব রুবেল ৫ ২১ ১ ০
শাহীন এলবি ব রুবেল ৩ ১২ ০ ০
আব্বাস অপরাজিত ১ ২৬ ০ ০
নাসিম রানআউট ২ ৭ ০ ০
অতিরিক্ত (বা ১, লেবা ৩, নো ২, ও ১) ৭
মোট (অলআউট, ১২২.৫ ওভারে) ৪৪৫
উইকেট পতন : ১-২ (আবিদ), ২-৯৩ (আজহার), ৩-২০৫ (মাসুদ), ৪-৩৪২ (বাবর), ৫-৩৫৩ (আসাদ), ৬-৩৭৪ (রিজওয়ান), ৭-৪১৫ (ইয়াসির), ৮-৪২২ (শাহীন), ৯-৪৪২ (হারিস), ১০-৪৪৫ (নাসিম)।
বোলিং : এবাদত ২৫-৬-৯৭-১, রাহী ২৯-৪-৮৬-৩, রুবেল ২৫.৫-৩-১১৩-৩, তাইজুল ৪১-৬-১৩৯-২, মাহমুদউল্লাহ ২-০-৬-০।
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস রান বল ৪ ৬
তামিম এলবি ব ইয়াসির ৩৪ ৫৬ ৬ ০
সাইফ বোল্ড নাসিম ১৬ ২৫ ৪ ০
শান্ত এলবি ব নাসিম ৩৮ ৮৭ ৩ ১
মুমিনুল ব্যাটিং ৩৭ ৮৭ ৪ ০
তাইজুল এলবি ব নাসিম ০ ১ ০ ০
মাহমুদউল্লাহ ক হারিস ব নাসিম ০ ১ ০ ০
মিঠুন বোল্ড ইয়াসির ০ ১২ ০ ০
লিটন ব্যাটিং ০ ১ ০ ০
অতিরিক্ত (ও ১) ১
মোট (৬ উইকেট, ৪৫ ওভারে) ১২৬
উইকেট পতন : ১-৩৯ (সাইফ), ২-৫৩ (তামিম), ৩-১২৪ (শান্ত), ৪-১২৪ (তাইজুল), ৫-১২৪ (মাহমুদউল্লাহ), ৬-১২৬ (মিঠুন)।
বোলিং : শাহীন ১১-২-৩৫-০, আব্বাস ১১.৪-৫-২০-০, নাসিম ৮.২-২-২৬-৪, ইয়াসির ১১-২-৩৩-২, আসাদ ৩-০-১২-০
*তৃতীয় দিন শেষে

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হ্যাটট্রিক


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ