Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিটি নির্বাচনে সরকারি দলের বিপুল বিজয়

| প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন গতকাল সম্পন্ন হয়েছে। বেসরকারী ফলাফলও জানা গেছে। মানুষের ধারণার ব্যতিক্রম হয়নি ফলাফলে। উত্তর ও দক্ষিণে সরকারী দলের মেয়র প্রার্থী ছিলেন যথাক্রম আতিকুল ইসলাম ও ফজলে নূর তাপস। তারা বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। তাদের নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী হয়েছেন বিএনপির যথাক্রমে তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন। কাউন্সিলর পদে বেশিরভাগ বিজয়ী হয়েছেন সরকারী দলের প্রার্থী। বিজয়ী দুই মেয়রসহ নির্বাচিত কাউন্সিলরদের আমরা স্বাগত জানাই। বহুল আলোচিত এ নির্বাচন কেমন হয়েছে, এই প্রশ্নে সরকারী দলের তরফে বলা হয়েছে, অতীতের যে-কোনো সিটি করপোরেশন নির্বাচনের চেয়ে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক হানিফ বলেছেন, গত ১০০ বছরে এরকম অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন আর কখনো দেখা যায়নি। পক্ষান্তরে বিএনপির পক্ষে বলা হয়েছে, নির্বাচনী আচরণবিধির ব্যাপক লংঘন ছাড়াও অনিয়ম, জালিয়াতি ও জবরদস্তি হয়েছে। এর প্রতিবাদে দলটি একদিন হরতালের ডাক দিয়েছে। দল নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের মতে, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হলেও নানারকম অনিয়ম হয়েছে। নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল ধারণার চেয়েও কম। নির্বাচন ব্যাপক অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ হয়নি, যা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পূর্বশর্ত। তারা লক্ষ্য করেছেন, নির্বাচনে বিরোধীদলের উপস্থিতি ও তৎপরতা ছিল অত্যন্ত কম। ইভিএম বিভ্রাট, ইভিএম ব্যবহারের পদ্ধতি দেখিয়ে দেয়ার নাম করে ভোটারের ভোট দিয়ে ফেলা, প্রকাশ্যে ভোট দিতে বাধ্য করা, সংবাদিকদের বাধাদান ও তাদের ওপর হামলা, বিরোধীদলের প্রার্থীদের এজেন্টদের ঢুকতে না দেয়া কিংবা ঢোকার পর বের করে দেয়া ইত্যাদি ঘটনা ঘটেছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
নির্বাচনে যা কিছু অনিয়ম ও অপকর্ম লক্ষ্য করা গেছে, তার দায় সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন কমিশনের ওপরই বর্তায়। নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর থেকে আচরণবিধি লংঘনের যত অভিযোগ করা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন তাতে কর্ণপাত করেনি। বিরোধীদলের পক্ষ থেকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার দাবি জানানোর পরও নির্বাচন কমিশন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। ইভিএম ব্যবহার নিয়ে বিরোধীদল প্রবল আপত্তি উত্থাপন করলেও নির্বাচন কমিশন তা গ্রাহ্য করেনি। বরং অনেকটা জেদ করে ইভিএম ব্যবহার করেছে। ইভিএমকেন্দ্রিক যেসব অনিয়ম ও অভিযোগ উঠেছে ইভিএম’র ব্যবহার না হলে সেগুলো উঠতো না। ইভিএম ব্যবহারের ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন সবচেয়ে বেশি এগিয়ে, অথচ ইভিএম বিভ্রাটের শিকার তিনিও হয়েছেন। ইভিএমএ তার আঙলের ছাপ মেলেনি। পরে পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়ে তিনি ভোট দিয়েছেন। ভোট কক্ষে ইভিএম ব্যবহারের পদ্ধতি দেখিয়ে দেয়ার জন্য নিয়োজিত যুবকরা কারা, এ প্রশ্ন সঙ্গতকারণেই উঠেছে। সরকারী দলের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করায় প্রতীয়মান হয়েছে, তারা সরকারী দলের লোকজন। ভোটের ক্ষেত্রে তাদের হস্তক্ষেপমূলক অন্যায় কাজের দায় কি নির্বাচন কমিশন এড়াতে পারবে? আমরা বলতে বাধ্য হচ্ছি, নির্বাচন কমিশন অতীতের মত এ নির্বাচনেও সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। ব্যর্থ হয়েছে ইভিএম। নির্বাচনকেন্দ্রিক ভয়ভীতি-শংকা, ভোটারদের অধিকাংশের ভোট বয়কট ইত্যাদি সব কিছুর জন্য নির্বাচন কমিশন দায়ী। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা এবং নির্বাচন কমিশনার যথাক্রমে মাহবুব তালুকদার, মো: রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম ও ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব) শাহাদত হোসেন চৌধুরীকে নির্বাচন কমিশনের পূর্বাপর ব্যর্থতার জন্য একদিন না একদিন জাতির কাছে জবাবদিহি করতে হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, নির্বাচনে ৩০ শতাংশের কম ভোট পড়েনি। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, ২৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি। পর্যবেক্ষকদের অনেকে মনে করেন, ২০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি। এত কম ভোট পড়ার অর্থ, নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থা উদ্বেগজনক পর্যায়ে নেমে এসেছে। বিজ্ঞজনের মতে, এ আলামত গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত।
নির্বাচন নিয়ে এখন যতকিছুই বলা হোক না কেন, তাতে কোনো লাভ নেই। তবে নির্বাচনটা যদি আরো অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতো, অবাধ, সুষ্ঠু ও অনিয়মমুক্ত হতো তাহলে সবাই খুশী ও সন্তুষ্ট হতো। তাতে ফলাফল যা হয়েছে, হয়তো তাই হতো। ফলাফল যদি কিছুটা কিংবা পুরোটাও ব্যতিক্রম হতো, তাতে সরকারী দল ও সরকারের কি এমন ক্ষতি হতো? যা হোক, যোগ্য ব্যক্তিরা মেয়র-কাউন্সিলর হয়েছেন। উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন। সিটি করপোরেশন পরিচালনায় তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা আছে। আশা করা যায়, তিনি ভালোভাবেই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। দক্ষিণের মেয়র ফজলে নূর তাপসের সিটি করপোরেশন পরিচালনায় পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই বটে, তবে তিনি দু’ দু বার ঢাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের তিনি সদস্য। এছাড়াও তিনি আধুনিক শিক্ষিত তরুণ রাজনীতিক এবং ব্যারিস্টার। সিটি করপোরেশন পরিচালনায় তার ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই। এখন নির্বাচিত মেয়রদ্বয়ের দায়িত্ব পালনের পালা। তারা ভোটারদের অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে তাদের আন্তরিক, যত্নবান ও সচেষ্ট হতে হবে। পর্যবেক্ষকদের মতে, তারা যদি তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতির সিকিভাগও বাস্তবায়ন করতে পারেন, তবে ঢাকার চেহারা যেমন পাল্টে যাবে, তেমনি তারাও স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ঢাকার সমস্যার অন্ত নেই। যাতায়াত সমস্যা, যানজট সমস্যা, নিরাপত্তার সমস্যা ইত্যাদি যেমন আছে তেমনি এ নগরী বসবাসের অযোগ্য নগরীতে পরিণত হয়েছে। নোংরা, আবর্জনা ও বস্তির নগরী হিসাবেও এর অখ্যাতি কম নয়। বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, মশার উপদ্রব, উন্নয়নের নামে রাস্তার দুরবস্থায় নগরীর অধিবাসীারা রীতিমত অতীষ্ট। পরিস্থিতির এই প্রেক্ষাপটে, ঢাকাকে একটি বসবাসযোগ্য, পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ নগরী করা অত্যন্ত কঠিন চ্যালেঞ্জ। আমরা আশা করি, নবনির্বাচিত দুই মেয়র এই চ্যালেঞ্জে সফলকাম হবেন। আমরা তাদের সাফল্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিটি


আরও
আরও পড়ুন