Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তিনটি বইয়ে ভুলের সংশোধনী দিয়েছে এনসিটিবি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

চলতি শিক্ষাবর্ষে বিনা মূল্যে বিতরণ করা মাধ্যমিক স্তরের তিনটি বইয়ে ৯টি ভুলভ্রান্তির সত্যতা পেয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এ জন্য ভুলগুলো সংশোধন করে এনসিটিবির ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা গতকাল বলেন, এই সংশোধনীগুলো মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মাধ্যমে জেলা-উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হবে। তাঁরা বিদ্যালয়গুলোতে সরবরাহ করবে এবং শ্রেণিশিক্ষকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সংশোধন করে দেবেন।

এবার প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে নতুন বই হাতে পেয়েছে। আর অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে বই হাতে পেয়েছে। এর মধ্যে নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং পৌরনীতি ও নাগরিকতা বইয়ে এই ভুলগুলো হয়েছিল। পর্যালোচনায় দেখা যায়, পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রণয়ন করা বইগুলোর মধ্যে কোনো বইয়ে এখনো আগের ভুলভ্রান্তিগুলো রয়ে গেছে।
ভুলগুলোর মধ্যে নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বইয়ের ১৮১ পৃষ্ঠায় অবরুদ্ধ বাংলাদেশ ও গণহত্যাবিষয়ক অংশে প্রথম লাইনে বলা হয়েছিল, ‘২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশজুড়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী নির্যাতন, গণহত্যা আর ধ্বংসলীলায় মেতে উঠেছিল।’ প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানের বর্বর হানাদার বাহিনী ২৫ মার্চ রাত থেকেই নিরীহ বাঙালির ওপর হত্যাযজ্ঞ চালায়। এখন সংশোধনীতে বলা হয়েছে, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশজুড়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী নির্যাতন, গণহত্যা আর ধ্বংসলীলায় মেতে ওঠে।’

একই বইয়ের ২০০ পৃষ্ঠায় একটি অংশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা নিয়ে বলা হয়েছিল, ‘মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে গঠিত বাংলাদেশ সরকারের প্রেসিডেন্ট ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের সরকারব্যবস্থার ধরন কী হবে, এই সম্পর্কে তখনো কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরদিনই ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিসভায় দীর্ঘ আলোচনার পর “অস্থায়ী সংবিধান আদেশ” জারির মাধ্যমে দেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রবর্তন করেন। ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধান বিচারপতি আবুসাদাত সায়েমের নিকট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। একই দিনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী।’

অথচ প্রকৃতপক্ষে ওই সময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে শপথ পড়িয়েছিলেন ওই সময়ের নতুন প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। সংশোধনীতেও এখন প্রকৃত তথ্যটি উল্লেখ করা হয়েছে।
একই বইয়ের ২০২ পৃষ্ঠায় আরেকটি সংশোধনীতে সংবিধান প্রণয়ন ১৯৭২-এর পটভূমি অংশের প্রথম অনুচ্ছেদের পর নিচের লেখা যুক্ত করতে বলা হয়েছে। তা হলো, ‘সংবিধান প্রণয়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শিক অবস্থান প্রতিফলিত হয়েছিল। সংবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর সার্বক্ষণিক দিকনির্দেশনা ছিল। তিনি সংবিধান কমিটিকে বিভিন্ন মৌলিক বিষয়ে প্রত্যক্ষ নির্দেশনা দিয়েছিলেন।’

২০৩ পৃষ্ঠায় সংবিধানের বৈশিষ্ট্যবিষয়ক একটি অংশে ভুল করে বলা হয়েছিল, পঞ্চম ভাগে জাতীয় সংসদ। এখন সংশোধনী দিয়ে বলা হয়েছে, ‘পঞ্চম ভাগে আইনসভা’ হবে।
বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে তিনটি ভুলের সংশোধনী দিয়েছে এনসিটিবি। এই বইয়ের ৬ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছিল, ’৫৪ সালের নির্বাচনে ৪টি দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। তাতে বইয়ে ৪টি দলের নামও দেওয়া হয়েছিল। এখন সংশোধনীতে বলা হয়েছে, ’৫৪ সালের নির্বাচনে ৫টি দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। দল পাঁচটি হলো আওয়ামী লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি, নেজামে ইসলাম, গণতন্ত্রী দল ও পাকিস্তান খেলাফতে রব্বানী পার্টি।

একই বইয়ের ১৬ পৃষ্ঠায় ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ ক্যাম্প ও পিলখানা ইপিআর ক্যাম্প বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। যা হবে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস ও পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর। সংশোধনীতে তা উল্লেখ করা হয়েছে।
একই বইয়ের ২৮ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছিল, ‘সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ এ সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য।’ এখানে সংশোধনীতে লেখা হয়েছে, ‘সাধারণ মানুষের মৌলিক মানবাধিকার সংরক্ষণ এ সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য।’ আগে ভুল করে ‘মানবাধিকার’ শব্দটি বাদ পড়েছিল।

পৌরনীতি ও নাগরিকতা বইয়ে দুটি ভুল সংশোধন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৭ পৃষ্ঠায় হওয়া একটি ভুলের সংশোধন দিয়ে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কাজ’–এর ১ ক্রমিকের অনুচ্ছেদে প্রতিস্থাপিত হবে...‘প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রের প্রধান। সরকারের সকল শাসনসংক্রান্ত কাজ তাঁর নামে পরিচালিত হয়। তিনি প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত তাঁর সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ পরিচালনা করেন। তিনি মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের নিয়োগ করেন। রাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের (মহা হিসাবরক্ষক, রাষ্ট্রদূত ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা) নিয়োগের দায়িত্বও প্রেসিডেন্টের। প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগসমূহের সর্বাধিনায়কতা প্রেসিডেন্টের উপর ন্যস্ত। তিন বাহিনীর (সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী) প্রধানদের তিনিই নিয়োগ দেন।’

একই বইয়ে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কাজের বিষয়েও একটি সংশোধনী দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কাজ’-১ ক্রমিকের অনুচ্ছেদটি প্রতিস্থাপিত হবে...‘প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদের প্রধান। প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্বে সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়। তিনি মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যা নির্ধারণ করেন ও মন্ত্রীদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করেন। তিনি যেকোনো মন্ত্রীকে তাঁর পদ থেকে অপসারণের পরামর্শ দিতে পারেন।’



 

Show all comments
  • Abdur Razzak Roni ১৮ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:০৪ এএম says : 0
    আমি প্রতিবছর বিনা পয়সায় একটি অথবা দুটি বইয়ের বানান সংশোধনের কাজ করতে রাজি আছি, তবুও আমি চাই শিক্ষার্থীদের কাছে নির্ভুল বই পৌঁছাক।
    Total Reply(0) Reply
  • Shahjahan Bikram ১৮ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:০৪ এএম says : 0
    · পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাটাই ভুলে ভরে আছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Zillur Rahaman ১৮ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:০৪ এএম says : 0
    সৃজনশীল পদ্ধতি এমনিতেই লেজেগোবরে অবস্থা। তাদেরকে যদি ভুলে ভরা নকল লেখার বই ধরিয়ে দেই, তবে ভবিষ্যতে কি হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়! সবাই চাই জিপিএ-৫ কিন্তু যারা জিপিএ-৫ পায় আসলে তারা নিজেরাও এর মর্মার্থ বুঝে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Mahfuz Ahmed ১৮ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:০৫ এএম says : 0
    জরুরী ভিত্তিতে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড’-এর প্রতিটি বই, যারা প্রকৃতার্থেই বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও ইসলামিক স্কলার; তাদের দিয়ে রিভাইজ ও রি-এডিট শেষে পুনঃমুদ্রণের আহ্বান জানাই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ