পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
জানুয়ারি মাসের শুরুতে প্রকাশিত নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এবং যাত্রীকল্যাণ সমিতির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সড়কে মৃত্যু বেড়েছে। সমিতির হিসাবে ২০১৯ সালে পাঁচ হাজার ৫১৬ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন সাত হাজার ৮৫৫ জন। আহত হয়েছেন ১৩ হাজার ৩৩০ জন। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে সড়কে প্রাণহানি বেড়েছে ৮ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ। যাত্রীকল্যাণ সমিতির হিসাব মতে, গত ১৮ জানুয়ারি, শনিবার এক দিনে সারাদেশে সড়কে মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের, আহত হয়েছে ৪৩ জন। তার আগের দিন সড়কে নিহত হয়েছেন ১৮ জন। জানুয়ারি মাসে দিনে গড়ে প্রাণ হারাচ্ছেন ১৮ জন।
সড়কে হঠাৎ প্রাণহানি বেড়েছে। সম্প্রতি সিলেট, যশোর, ঝিনাইদহে পিকনিক ও বিয়ের একাধিক গাড়ি দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। উৎসবের সময় সারা পৃথিবীতেই সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। অন্যান্য দেশে তা নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। বাংলাদেশে তার অভাব রয়েছে। পিকনিক ও বিয়ের গাড়ি গান বাজিয়ে বেপরোয়া চলে। এতে দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণে কোনো পদক্ষেপ নেই। তবে, ঘন কুয়াশা ও শীতের সকালে ফাঁকা রাস্তায় বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোও এর কারণ হতে পারে। ঘন কুয়াশায় দুর্ঘটনা এড়াতে ‘ফগ লাইট’ জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। ফগ লাইট ঠিক না থাকলে আইনানুযায়ী জরিমানা হওয়ার কথা। গাড়ির ফিটনেস পাওয়ার কথা নয়। এখানে বড় ধরনের কিছু লুকিয়ে আছে, তা না হলে ‘ফগ লাইট’ কার্যকর নয়, এমন গাড়িও সড়কে বিনা বাধায় চলছে, দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। দেখার যেন কেউ নেই।
শীতের সকালে নছিমন, করিমন, ভটিভটি, মটর বাইক, ইজিবাইকের মতো অবৈধ যানবাহনে দুর্ঘটনা ঘটছে বেশি। কারণ, ঠান্ডায় হাত অবশ হয়ে থাকায় চালক ঠিক সময়ে ব্রেক কষতে পারছেন না। এসব গাড়ির ব্রেক আছে নামকাওয়াস্তে। এসবের মধ্যে গাড়ির ফিটনেসতো দূরের কথা, ড্রাইভারদের লাইসেন্স, প্রশিক্ষণ কিছুই নেই। বৈদ্যুতিক চার্জে চলা ইজিবাইক, সিএনজি অটোরিক্সা এদেরতো সড়কে বের হবার কথা নয়। অথচ দেশের এমন কোন রাস্তা নেই যেখানে এসব অবৈধ যান চলছে না। এগুলো বন্ধ করতে না পারলে, দুর্ঘটনা বন্ধ করা একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়বে। বন্ধ করার দায়িত্ব প্রশাসনের। তাহলে কি প্রশাসন কিছু বলবে না। ইদানীং দোয়েল কার্ড, শাপলা কার্ড থাকলে শুধু সড়কে নয়, বরং মহাসড়কেও কেউ কিছু বলতে পারবে না এমনটাই বলে উঠেন অবৈধ গাড়ির অবৈধ চালকরা।
সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের পর, লক্কড়ঝক্কড়, অবৈধ, ফিটনেসবিহীন যেসব গাড়ি ধরা পড়ার ভয়ে রাস্তায় নামেনি, সেগুলো আবার ফিরে এসেছে- যা দুর্ঘটনার বড় কারণ। নতুন আইন কার্যকরের পর পুরোনো মোটরযান অধ্যাদেশ এখনো রহিত আছে। নতুন আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। প্রশাসনও নিরুপায়; কারণ, সড়ক পরিবহন আইনের প্রয়োগ শুরু হলে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা ফের আন্দোলনে নামতে পারে, একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে পারে।
দুই মাসের বেশি সময় আগে আইন কার্যকর হলেও, নতুন আইনে অনলাইনে মামলা দায়েরে এখনও প্রস্তুত নয় পুলিশ। কয়েক বছর ধরে রাজধানীতে ‘পজ মেশিনে’ মামলা করছে পুলিশ। আইন কার্যকরের পর হাতে লেখা ¯িøপের মাধ্যমে মামলা শুরু হয়। আশার কথা হলো, নতুন আইনে কোন ধারায় কত জরিমানা করা হবে, তার তথ্য সংবলিত সফটওয়্যার হালনাগাদের কাজ শেষ হয়েছে। সফরওয়্যারটি ডাটা এনালিস্টরা ‘পজ মেশিনে’ ইন্সটল করার পর মামলা নেয়া সম্ভব হবে। তবে কবে নাগাদ ইন্সটল শেষ করে পজ মেশিনের মাধ্যমে মামলা করা সম্ভব হবে? এ বিষয় এখনো সন্দিহান সংশ্লিষ্টরা।
নতুন আইন প্রয়োগে শিথিলতার স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায় মামলার পরিসংখ্যান থেকে। আইন কার্যকরের আগে ট্রাফিক নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগে রাজধানীতে মাসে প্রায় দেড় লাখ মামলা দায়ের করতো ডিএমপি। জরিমানা আদায় হতো প্রায় সাত কোটি টাকা। আইন কার্যকরের পর নভেম্বর মাসে মামলার সংখ্যা ছিল হাজারের কম। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চিত্রও কাছাকাছি। ডিসেম্বর মাসে, বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৭৫০টি মামলা হয়েছে। নভেম্বরে মামলা হয় ৪৪৬টি। কিন্তু অক্টোবরে মামলা হয়েছিল ১ হাজার ২৩টি। কমেছে জরিমানাও। সচেতনতা সৃষ্টির জন্যই কি তাহলে এত বড় ছাড়? ঐদিকেতো সড়কে তাজা প্রাণগুলো ঝরে পড়ছে।
পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের আন্দোলনের শংকা এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ পুরোনো আইনের প্রয়োগযোগ্যতা হারিয়ে সড়কে বিশৃঙ্খলা বেড়েছে। আইন কার্যকরের পর প্রথম কয়েক দিন জরিমানার ভয়ে রাস্তায় গাড়ি সুশৃঙ্খলভাবে চললেও, আইনের প্রয়োগ না থাকায় আবার নৈরাজ্য ফিরে এসেছে। গাড়ির কাগজ হালনাগাদ করতেও বিআরটিএতে নেই ভিড়।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে গত বছর দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সাত বছর ঝুলে থাকার পর পাস হয় সড়ক পরিবহন আইন। এতে সড়কে আইন ভঙ্গে জরিমানা বেড়েছে ১০ থেকে হাজার গুণ। বেড়েছে কারাদন্ডও। আইনটিকে কঠোর আখ্যা দিয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা নভেম্বরের মাঝামাঝি কয়েকদিন সড়ক অচল করে রাখেন। এর পর আইনের তিনটি ধারার প্রয়োগ ৩০ জুন পর্যন্ত স্থগিত করা হয়।
শীতের তীব্রতা, অশিক্ষিত চালক, অবৈধ যান যাই হোক না কেন, জনসাধারণের ধারণা সড়কে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার প্রধান কারণ আইন প্রয়োগে দুর্বলতা। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সোচ্চার হলে, নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রয়োগ করতে পারলে, দেশের অবৈধ যান, লাইসেন্সবিহীন চালক, যত্রতত্র পার্কিং, যানঝট ইত্যাদি নিরসণ সম্ভব।
লেখক: শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।