২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
সারা বিশ্বের প্রায় ১০ কোটি লোক শ্বাসনালীর সচরাচর সমস্যা-হাঁপানি বা এ্যাজমায় আক্রান্ত। এদের ৯০% এরও বেশি অত্যাধুনিক চিকিৎসা পায় না এবং প্রতি বছর অনেক রোগী মারা যায় । যদিও এ মৃত্যুর ৮০% প্রতিরোধ করা সম্ভব, যদি আধুনিক চিকিৎসা ও ডাক্তারের তদারকির মাধ্যমে এ্যাজমা নিয়ন্ত্রণের শিক্ষা দেয়া যায় ।
এ্যাজমা ব্যাপারটা কি : এ্যাজমা বা হাঁপানি আসলে শ্বাসনালীর অসুখ। যদি কোন কারনে শ্বাসনালীগুলো অতিমাত্রায় সংবেদনশীন (হাইপারসেনসিটিভ) হয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন ধরনের উত্তেজনায় উদ্দীপ্ত হয় তখন বাতাস চলাচলের পথে বাধার সৃষ্টি হয়, ফলে শ্বাস নিতে বা ফেলতে কষ্ট হয় ।
এ্যাজমা রোগের প্রধান উপসর্গ বা লক্ষনগুলো হলোঃ বুকের ভেতর বাশির মতো সাঁই সাঁই আওয়াজ, শ্বাস নিতে ও ছাড়তে কষ্ট, দম খাটো অর্থাৎ ফুসফুস ভরে দম নিতে না পারা, ঘন ঘন কাশি, বুকে আঁটসাট বা দম বন্ধ ভাব, রাতে ঘুম থেকে উঠে বসে থাকা, বছরের বেশির ভাগ সময় ঠান্ডা সর্দি লেগে থাকা, নাকে চুলকানি এবং অসহনীয় হাঁচি।
কেন হয়? : জেনেটিক ও পরিবেশগত এলার্জির কারনে কারও কারও বেশি হয়ে থাকে। ঘর-বাড়ির ধুলো ময়লায় মাইট, জিবানু, ফুলের বা ঘাসের পরাগ রেণু, পাখির পালক, জীব-জন্তুর পশম, ছত্রাক, কিছু কিছু খাবার, কিছু কিছু ওষুধ, নানা রকম রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদি থেকে এলার্জি জনিত এ্যাজমা হয়ে থাকে।
কাদের হতে পারে এ্যাজমা বা হাঁপানি : যে কোন বয়সের নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর যে কারো হতে পারে। যাদের রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের হাঁপানি আছে তাদের এ রোগ হবার আশঙ্কা প্রবল। আবার দাদা-দাদীর থাকলে (বাবা-মা’র না থাকলেও) নাতি-নাতনী বা তাদের ছেলেমেয়েরা এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। পিতৃকুলের চেয়ে মাতৃকুল থেকে হাঁপানিতে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা বেশি থাকে। তবে এ্যাজমা বা হাঁপানীর মূল কারণ কিন্তু এলার্জি ।
প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা: রক্তের বিশেষ বিশেষ পরীক্ষাঃ বিশেষত রক্তে ইয়োসিনোফিল ও সিরাম আইজিই।
স্কিন প্রিক টেস্টঃ এই পরীক্ষায় রোগীর চামড়ার উপর বিভিন্ন এলার্জেন দিয়ে পরীক্ষা করা হয় এবং এই পরীক্ষাতে কোন কোন জিনিসে রোগীর এলার্জি আছে (এ্যাজমার জন্য দায়ী) ধরা পড়ে।
বুকের এক্স-রেঃ হাঁপানি রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসা শুরু করার আগে অবশ্যই বুকের এক্স-রে করে নেয়া দরকার যে অন্য কোন কারনে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কিনা ।
স্পাইরোমেট্রি বা ফুসফুসের ক্ষমতা দেখাঃ এই পরীক্ষা করে রোগীর ফুসফুসের অবস্থা সম্পর্কে সঠিক ধারণা করা যায় ।
সমন্বিতভাবে এ্যাজমা বা হাঁপানীর চিকিৎসা হলোঃ
এলার্জেন পরিহারঃ এ্যাজমা বা হাঁপানির হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার সবচেয়ে সহজ পন্থা হলো, যে এলার্জি থেকে শ্বাসকষ্ট হয় তা যতদুর সম্ভব এড়িয়ে চলা। তাই এ্যাজমা রোগীদের প্রথমেই এলার্জি টেস্ট করে জানা দরকার কোন ধরনের এলার্জি দিয়ে শ্বাসকষ্ট হয় ।
ওষুধ প্রয়োগঃ নানা ধরনের এ্যাজমার ওষুধ আছে বাজারে। ডাক্তার দেখিয়ে প্রয়োজন মতো ওষুধ ব্যবহার করে রোগী সুস্থ থাকতে পারেন ।
এলার্জি ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপিঃ এলার্জি দ্রব্যাদি এড়িয়ে চলা ও ওষুধের পাশাপাশি ভ্যাকসিনও এ্যাজমা রোগীদের সুস্থ থাকার অন্যতম চিকিৎসা পদ্ধতি । এলার্জি ভ্যাকসিনের মূল উদ্দেশ্য হলো যে এলার্জেন দিয়ে এ্যাজমা বা হাঁপানীর সমস্যা হচ্ছে সেই এলার্জেন স্বল্পমাত্রায় প্রয়োগ করা হয়, যা পরবর্তিতে ঐ এলার্জেন দিয়ে রোগী শ্বাসকষ্টে বা এ্যাজমাতে যেন আক্রান্ত না হয়। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। আমেরিকান একাডেমী অব এলার্জি এ্যাজমা এন্ড ইমুনোলোজী, ইউরোপিয়ান একাডেমী অব এলারগোলজী এন্ড ক্লিনিক্যাল ইমুনোলোজী, ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব পেডিয়াট্রিক্স এলার্জি এন্ড ক্লিনিক্যাল ইমুনোলোজী, ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব এলারগোলোজী এন্ড ক্লিনিক্যাল ইমুনোলোজী, জাপানিজ সোসাইটি অব এলারগোলজী, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এলার্জি এন্ড ইনফেকসিয়াস ডিজিস একত্রিত হয়ে এলার্জি সৃষ্টিকারী দ্রব্যাদি বা এলার্জেনের বিরুদ্ধে প্রতিষেধকমূলক এলার্জেন ইমুনোথেরাপি বা ভ্যাকসিনের ব্যবহারের দিকনির্দেশনা তৈরি করেন।
এলার্জিজনিত এ্যাজমা বা হাঁপানির ক্ষেত্রে এই ভ্যাকসিন অত্যন্ত কার্যকারী বলে অভিমত প্রকাশ করেন বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। এই ভ্যাকসিন পদ্ধতির চিকিৎসাকে এলার্জিজনিত এ্যাজমা রোগের অন্যতম চিকিৎসা বলে অভিহিত করেন। এটাই এ্যাজমা রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি সুস্থ থাকার একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি।
আগে ধারণা ছিল এ্যাজমা একবার হলে আর সারে না। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসা ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। প্রথম দিকে ধরা পড়লে এলার্জিজনিত এ্যাজমা রোগ একেবারে সারিয়ে তোলা সম্ভব। অবহেলা করলে এবং রোগ অনেক দিন ধরে চলতে থাকলে নিরাময় করা কঠিন হয়ে পড়ে।
বর্তমানে এলার্জি জনিত এ্যাজমা রোগের ভ্যাকসিনসহ উন্নত চিকিৎসা আমাদের দেশেই হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।