পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন প্রতিরোধে একটি আইন ২০১৩ সালে প্রণয়ন করা হলেও, এর প্রয়োগ নেই বললেই চলে। এই আইনে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় বিচারের কথা বলা থাকলেও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না ভুক্তভোগী পরিবার। মামলা দায়ের করার পর বিচারের পরিবর্তে পরিবারকে দেওয়া হচ্ছে হুমকি। এ কারণে পুলিশের নির্যাতনের বিরুদ্ধে ভ‚ক্তভোগী পরিবারগুলো বিচার প্রত্যাশা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। পুলিশ নির্যাতনে আহত হলেও ভ‚ক্তভোগীরা মামলা করেন না। তবে এসব ঘটনায় পুলিশের বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি অনেক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে বলে পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের চাকরিচূ্্যত, পদোন্নতি স্থগিত ও পদাবনতের মত শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, উত্তরা পশ্চিম থানা ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনা দুইটি তদন্তেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মৃত্যুর অভিযোগটি হচ্ছে আত্মহত্যা। তবে তার আত্মহত্যায় কারো প্ররোচনা রয়েছে কি না- সে বিষয়টি আমি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। তদন্ত রিপোর্ট পেলে সে অনুযায়ি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও শালিস কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ি, ২০১৯ সালে সারাদেশে পুলিশের হেফাজতে ১৬ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এদের মধ্যে গ্রেফতারের পূর্বে নির্যাতনের ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। গ্রেফতারের পর শারিরীক নির্যাতনে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। থানার হাজতখানায় ২ জন আত্মহত্যা করেন। বাকি ২ জন নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন প্রমাণিত হলে শাস্তি হিসেবে নূন্যতম ৫ বছরের কারাদন্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। এছাড়া নির্যাতনের ফলে মৃত্যু হলে যাবজ্জীবন কারাদন্ড অথবা অর্থদন্ড হতে পারে।
গত ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার হাজতে আবু বক্কর সিদ্দিক বাবু (৩৫) নামে একজন আসামি মারা যান। পুলিশের ভাষ্য, ওই আসামি হাজতের গ্রীলের সঙ্গে চাদর পেচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তবে গ্রীলের সঙ্গে চাদর পেঁচিয়ে আত্মহত্যার বিষয়টি মানতে রাজি নন নিহত বাবুর সহকর্মীরা। বাবু বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) ফ্লোর ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে একজন নারী ডিজিটাল নিরাপত্তা ও নারী নির্যাতন আইনে মামলা করেছিলেন। ওই মামলাতেই গত ১৮ জানুয়ারি রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বাবুর মুত্যুর ঘটনার বিচার চেয়ে এফডিসি’র সহকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। ঘটনাটি তদন্তে পুলিশের পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গত ১৬ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ গাড়ি চালক আলমগীর হোসেনকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে যায়। ওই দিন রাতে থানায় রেখে রাতভর মারপিট করা হয়। থানা থেকে মুক্তি পেতে তার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবি করা হয়। পরে তার কাছ থেকে ৮০ পিস ইয়াবা উদ্ধার দেখিয়ে মাদক আইনে একটি মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় পুলিশ তাকে আদালতে পাঠায়। আদালতে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর সময় তিনি পড়ে যান। তার দুই পা’য়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কারাগারে আলমগীর অসুস্থ হয়ে পড়লে ১৯ ডিসেম্বর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গত ১৬ জানুয়ারি ঢাকার আদালতে মৃতের স্ত্রী আলেয়া বেগম বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি তপন চন্দ্র সাহা, এসআই মো. মিজানুর রহমান, এএসআই নামজুল ও মো. সোহাগকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার বাদী অভিযোগ করেন, পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর থেকে অজ্ঞাত মোবাইল ফোন নম্বর থেকে মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, মামলা তুলে না নিলে, তার পরিনতি স্বামীর মতই হবে। ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর নরসিংদীতে জেলা ডিবি পুলিশের হেফাজতে ইউসুফ মিয়া (৩৫) নামে এক আসামির মৃত্যু হয়। ওই বছরের ৪ নভেম্বর নরসিংদীর ঘোড়াশালে ৫ টি স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি হয়। এ ঘটনা মাধবদীর বিরামপুর এলাকা থেকে ইউসুফ মিয়া ও রোকসানা বেগম নামে দুই জনকে গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে ইউসুফ ডাকাতির কথা স্বীকার করে। ডাকাতির মালামাল উদ্ধার করতে গেলে ইউসুফ মিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর সময় রাস্তায় তার মৃত্যু হয়।
২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জ সদর থানা পুলিশের হেফাজতে ৪৫ হাজার টাকার চেক ডিজঅনার মামলার আসামি ফারুক মিয়ার (৪৮) মৃত্যু হয়। ওই দিন গভীর রাতে পুলিশ বাসায় অভিযান চালিয়ে ফারুককে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। ঘণ্টা দুয়েক পর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে ফারুক অসুস্থ। তাকে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। ফারুকে ভাই আব্দুল মতিন হাসপাতালে গিয়ে ফারুকের লাশ দেখতে পান। তার শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। পাশাপাশি দুই হাতের কনুই ও দুই পায়ের আঙ্গুল থ্যাঁতলানো ছিল। ঘটনার পর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিষয়টি তদন্ত করে পুলিশ জানায় যে, ফারুককে আটকের সময় পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে একটি উচু দেয়াল টপকানোর চেষ্টা করেন। এসময় তিনি আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং এতে তিনি অসুস্থ হয়ে মারা যায়।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা, পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে মৃত্যুর ঘটনায় যারা বিচার চাচ্ছেন, সরকারের উচিত তাদেরকে আইনি সুরক্ষা দেওয়া। আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যে কাজটুকু তাদের করার কথা, সেই কাজটুকু যেন করেন। কেন তারা আগ বাড়িয়ে মানুষকে মেরে ফেলার মত ঘটনা তারা ঘটাবেন-এ কাজটুকু কিন্তু অত্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের কাজ হয়েছে। যারা এর বিচার চাইছেন, তাদেরকে সরকার যেন যথাযথ সুরক্ষা দেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।