পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
একজন শিক্ষক কেমন হবেনÑ এসব বিষয় নিয়ে প্রচুর গবেষণা হয়েছে। সেসব গবেষণা থেকে বেরিয়ে এসেছে শিক্ষকের দায়িত্ব ও গুণাবলীর কথাও। খুব সাধারণভাবে বোঝালে, যিনি কাউকে একদিনের জন্যও কোন বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করলে তিনি তার শিক্ষক। শিক্ষক, শিক্ষা ও শিক্ষার্থী শব্দগুলো পারস্পরিক নির্ভরশীল ও একে অপরের সাথে ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কযুক্ত। শিক্ষকবিহীন শিক্ষা যেমন কল্পনা করা যায় না তেমনি শিক্ষার্থীবিহীন শিক্ষাও অর্থহীন। শিক্ষক তার কাছে আসা শিক্ষার্থীদের জীবনে বেঁচে থাকার, জীবন যুদ্ধে জয়ী হবার মন্ত্র শিখিয়ে দেন। তিনি শিক্ষার্থীদের মনের আবেগ নিয়ন্ত্রণের দীক্ষা দেন। তিনি চান যেন তার শিক্ষার্থী জীবনের সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে বিজয়ী হয়। আবার একজন শিক্ষককে বলা হয় আজীবন ছাত্র। জ্ঞান অšে¦ষণে তার তৃষ্ণা অপরিসীম। নিজে না শিখলে অন্যকে কী শেখাবেন? তাই তো তাকে পড়তে হয়, জানতে হয় এবং জানাতে হয়। এই জানানোর কাজটি হচ্ছে শিক্ষকতা জীবনের সব থেকে পরিশ্রমী এবং কঠিন কাজ। কারণ, তার জানানোর কাজটি সফল হয়েছে কি না তা বুঝতে পারাও একটি বড় দক্ষতার ব্যাপার। একজন শিক্ষক হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যার মধ্যে পরামর্শক হওয়ার ও শিক্ষা সহায়ক ব্যক্তি হওয়ার যোগ্যতা থাকবে। সত্যি কথা বলতে, একদিক থেকে শিক্ষক একজন সত্যিকারের অতি মানব, যার থাকে সহজেই আকৃষ্ট করার ক্ষমতা। আবার একদিক থেকে শিক্ষক খুব সাধারণ একজন মানুষ, যে তৈরি করে অসাধারণ সব মানুষ। শিক্ষকতা কোন পেশা নয়, বরং একটি সেবা। সমাজে অনেক সেবামূলক কাজ রয়েছে। এর মধ্য শিক্ষকতা অন্যতম। শিক্ষকতা হচ্ছে একটি ব্রত, সে ব্রত দিয়ে শিক্ষক তার ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটায়। শিক্ষকের এই কাজটির সফলতা ও ব্যর্থতার মধ্যে রয়েছে দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ।
বছরের পর বছর পাস করিয়ে রেজাল্ট ভালো করাতে পারলেই কিন্তু শিক্ষকের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। বরং দায়িত্ব তো প্রতিটি শিক্ষার্থীর মধ্যে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটানো, একজন শিক্ষকই যা আবিষ্কার করতে পারে এবং তা ব্যাবহারে পথ দেখাতে পারে। তবে বর্তমানে একাংশ শিক্ষকের কর্মকাÐে প্রায়ই এ পেশা সমালোচিত হয়। কিন্তু তাদের উদাহরণ থেকে সার্বিক মূল্যায়ন করাটা বোকামী। শুধু পেশায় নিয়োজিত হলেই শিক্ষক হওয়া যায় না। শিক্ষক হতে হলে তার সম্পর্কিত গুণাবলী অর্জন করতে হবে। শুধু পোশাকে বা পেশায় শিক্ষক হয়ে কি লাভ? বাবা মা যেমন সন্তানের বুকের ভেতর বেঁচে থাকে ঠিক তেমনি করেই শিক্ষক বেঁচে থাকে তার শিক্ষার্থীর মধ্যে। শিক্ষক হিসেবে একজন মানুষ কখন সফল তা নির্ণয় করা তার চাকরির বয়সের উপর নির্ভর করে না। বরং সেই শিক্ষক কতজন শিক্ষার্থীর ভেতর নিজের আদর্শ প্রভাবিত করতে পেরেছে, কতজনকে মানুষ হওয়ার সঠিক পথ দেখাতে পেরেছে তার উপর নির্ভর করে। শিক্ষক বেঁচে থাকে শিক্ষার্থীর মধ্যে। মানুষ হওয়ার সেই মন্ত্র একমাত্র শিক্ষকের ভেতরেই থাকে। একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষক সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করার সুযোগই পাওয়া উচিত নয়। কারণ, প্রকৃত শিক্ষক কোনদিন একজন শিক্ষার্থীর জীবনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এমন কিছু করে না। শিক্ষকতা পেশায় থাকলেই কি প্রকৃত শিক্ষক হওয়া যায়? এটাও এক ধরনের প্রাণান্ত চেষ্টার ফল। শিক্ষক এবং সমাজের অন্য পেশার মানুষের সাথে পার্থক্য রয়েছে। অনেকে যা পারে, শিক্ষক সেটা পারে না। তাকে এত এত গুণের সমাবেশ ঘটাতে হয় যে একজন অতিমানবেরও বুঝি এত ক্ষমতা থাকে না।
বাস্তবে বিভিন্ন কারণে আমাদের দেশের শিক্ষক সমাজ আজ প্রশ্নে সম্মুখীন। সার্টিফিকেটের জোরে যে কেউ শিক্ষকতা পেশায় ঢুকে পড়ছে। কিন্তু সেই ব্যক্তি শিক্ষক হিসেবে কেমন তা যাচাই করার কোন উপায় নেই। একজন শিক্ষক অবশ্যই সৎ ও নৈতিক চরিত্রের অধিকারি হবে। কিন্তু সার্টিফিকেট মেধার মূল্যায়ন করলেও মনুষ্যত্বের মূল্যায়ণের ক্ষমতা রাখে না। ফলে শিক্ষকতা পেশায় থেকেও অনেকে নানা অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ছে। এজন্য শিক্ষক সমাজের প্রতি আঙুল উঠছে। শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন স্কেল দরকার, কারণ শিক্ষকদের দায়িত্ব অন্য সব পেশা থেকে ভিন্ন। তাছাড়া শিক্ষকতা হলো সেই পেশা যেখান থেকে দেশের মেধা তৈরি হয়। ফলে আর সব পেশার সাথে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। তাই এই পেশার সাথে জড়িত মানুষগুলো আলাদা বেতনস্কেল দাবি করতেই পারে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিক্ষকতা পেশায় কারা আসে? এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় মেধার ভিত্তিতে যদি ভাগ করা হয় তাহলে উচ্চ মেধা সম্পন্ন ছাত্রছাত্রীরা কমই শিক্ষকতা পেশার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। প্রথম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা তাদের স্বপ্নকে বেঁধে রাখে বিসিএস, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বা এরকম কোন পেশায়, যেখানে প্রচুর টাকা কামানো পাশাপাশি রয়েছে সামাজিক সম্মান। এরপরের মেধাবী রয়েছে তারা, যারা প্রথম শ্রেণিতে না পড়লেও দ্বিতীয় শ্রেণির মেধাবী। তারা ন্যূনতম দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি খোঁজে। এরপর যারা থাকে তারা অন্য পেশার সাথে শিক্ষকতা পেশায় আসে। এখন কথা হলো, কেন রাষ্ট্রের সব থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বা মাধ্যমিক এমন কি কলেজে আসতে অনীহ? কেন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়াতে বেশি আগ্রহী? এর একটাই অর্থ যে প্রাথমিক বা বেসরকারি স্কুল কলেজের চাকরি প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণির নয়। ফলে প্রথম শ্রেণি বা দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি খোঁজা একজন মেধাবী কেন শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেবে? অনেক উন্নত দেশেই শিক্ষকদের মর্যাদা সর্বাধিক। তাদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধাও বেশি। বড় বড় চাকরি ছেড়ে তাদের প্রধান লক্ষ্যই হয় শিক্ষকতা করা। এক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণির মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসে। কিন্তু আমদের দেশে এটা ঘটছে না। বড় বড় ইঞ্জিয়ার বড় বড় দালানকোঠা, বিল্ডিং তৈরি করে। তবে এসবের থেকেও যা আজ বেশি দরকার, তা হলো মানুষ। একমাত্র শিক্ষকরাই সে কাজটি করতে সক্ষম।
লেখক:শিক্ষক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।