পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিএনপি’র অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ঢাকা সিটির দুই অংশের মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচন ইতিমধ্যেই প্রচার-প্রচারণায় জমজমাট হয়ে উঠেছে। পুন:নির্ধারিত তারিখ হিসেবে ভোট গ্রহণের আর ৮ দিন বাকি। নির্বাচনী প্রচারনায় সব প্রার্থীর সমান সুযোগ ও নির্বাচনী বিধিমালা পালনে সবার সমান বাধ্যবাধকতা থাকলেও মাঠের বাস্তবতায় তা দেখা যাচ্ছে না। বেশীরভাগ এলাকায় সরকারী দলের প্রার্থীরা প্রভাব বিস্তারের ধারা অব্যাহত রেখে চলেছে। নির্বাচনী প্রচারের সময় ঢাকা উত্তরে বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের উপর প্রতিপক্ষ কাউন্সিলর প্রার্থীর নেতৃত্বে সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের ঘটনা ষড়যন্ত্রমূলক এবং নির্বাচনী মাঠ থেকে বিএনপিকে সরিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা বলে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। মঙ্গলবার তাবিথ আউয়ালের উপর হামলার পর বিএনপি’র পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে অভিযোগ করে নির্বাচনী পরিবেশ ক্রমে খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে। নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ খারাপের দিকে যাচ্ছে তাই নয়, নির্বাচনী মাঠে প্রার্থীদের প্রতিশ্রæতি এবং তাদের কর্মকান্ডের বাস্তবতায় কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ভোটের সামগ্রিক পরিবেশ এবং ভোটারদের আস্থাহীনতার সংকট দূর করার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
মূল ধারার গণমাধ্যমে কিছু নিয়ন্ত্রণ এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সেন্সরশিপ থাকলেও তথ্যপ্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে এখন আর কোনো তথ্যই গোপন বা চাপা দিয়ে রাখা সম্ভব নয়। নির্বাচনী মাঠের প্রার্থীরা একদিকে ক্লিন ঢাকা, গ্রীন ঢাকা, পরিচ্ছন্ন, পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ ঢাকা গড়ে তোলার প্রতিশ্রæতি দিচ্ছেন অন্যদিকে প্রায় সব প্রার্থীই নিজ নিজ এলাকায় হাজার হাজার পোস্টারে ছেয়ে ফেলছেন যার বেশিরভাগই ঢাকার পরিবেশ ও স্যুয়ারেজ সিস্টেমের জন্য জন্য মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টিকারী পলিথিনে মোড়ানো। পরিবেশ ও পয়ো:ব্যবস্থার জন্য পলিথিন নিষিদ্ধের আইন থাকলেও মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাদের পোষ্টারগুলোকে পলিথিনে লেমিনেশন করে রশিতে টানিয়ে পুরো ঢাকা নগরীকে মূলত পলিথিনে আচ্ছাদিত করে ফেলেছেন। অন্যদিকে ভোটের মাঠেই যদি প্রতিপক্ষ প্রার্থী ও সমর্থকদের সরকারি দলের সমর্থিত প্রার্থী ও সমর্থকদের হাতে আক্রান্ত-রক্তাক্ত হতে হয় নির্বাচনের পর তারা কিভাবে নিরাপদ ঢাকা গড়বেন সে বিষয়ে জনমনে সন্দেহ তৈরী হচ্ছে। নির্বাচনে সমান সুযোগ এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ না থাকলে ভোটের দিন মানুষ ভোট দিতে যাবে না। এই বাস্তবতা ইতিমধ্যেই প্রমাণীত। নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি ভোটার অনাস্থার ফলে মানুষ ভোটকেন্দ্রে যেতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়নে এ ধরণের বাস্তবতা অশনি সংকেত।
গত ৫ বছর ধরে বিশ্বের অন্যতম দূষিত ও বসবাসের অযোগ্য শহরের আন্তর্জাতিক তালিকায় শীর্ষ স্থানে থাকছে ঢাকা। যানজট এবং পানিজট ঢাকার অন্যতম নাগরিক সমস্যা। সামান্য বৃষ্টিতেই সারা শহর পানিবদ্ধ হয়ে পড়ার মূল কারণ অপরিকল্পিত ও অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং স্যুয়ারেজ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিনের ব্যাপক ব্যবহার। নগরবিদ ও পরিবেশবাদিরা পলিথিন নিষিদ্ধের দাবী জানিয়েছেন। ঢাকাকে বাসযোগ্য রাখতে চারপাশের নদীগুলোকে দখল ও দূষণ থেকে রক্ষার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রæতি দিয়ে ২০১৫ সালের সিটি নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা নির্বাচিত হলেও গত ৫ বছরে অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। ২০১৫ সালের সিটি নির্বাচনে ব্যাপক ভোট কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ ছিল। অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রামের একটি উপনির্বাচনে শতকরা প্রায় ২০ ভাগ ভোট পড়েছে বলে নির্বাচন কমিশন দাবী করলেও প্রকৃত ভোটদাতার সংখ্যা নিয়ে দ্বিমত বা সন্দেহ আছে। সাধারণ মানুষ ভোটদানে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকা এবং নির্বাচনের প্রার্থীদের অসহিষ্ণুতা ও নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি পালন না করার অভিজ্ঞতা, এ ধরণের আস্থাহীনতার জন্ম দিচ্ছে। একদিকে প্রার্থীরা পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশ বান্ধব ঢাকা গড়ে তোলার কথা বলছেন, অন্যদিকে নিজেরাই লাখ লাখ প্লাস্টিকের পোস্টারে ঢেকে দিয়ে বড় ধরনের পরিবেশগত হুমকি সৃষ্টি করছেন। ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ব্যাপক প্লাস্টিক দূষণ, শব্দদূষণ, নির্বাচনী আচরণ বিধি ও পরিবেশ দূষণের মাত্রা যথেচ্ছ লঙ্ঘন হলেও নির্বাচন কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভ‚মিকা প্রশ্নবিদ্ধ। বাসযোগ্য, আধুনিক পরিবেশ বান্ধব ও নিরাপদ ঢাকা গড়তে সৎ, দক্ষ ও সুযোগ্য মেয়র-কাউন্সিলর নির্বাচিত করার বিকল্প নেই। নির্বাচনকে নির্বিঘ্ন, নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব ও স্বচ্ছ করতে নির্বাচন কমিশন তাদের দায় এড়াতে পারে না। সচেতন ভোটার ও নগরবাসি নির্বাচন কমিশন, সরকার ও বিরোধীদলের প্রার্থীসহ নির্বাচনের সব পক্ষের ভ‚মিকা পর্যবেক্ষণ করছে। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে কোনো কিছুই গোপন করার সুযোগ নেই। অতএব নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সতর্ক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।