পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আমি অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, ক্যানবেরা এবং মেলবোর্ন ঘুরে বেড়িয়েছি। এখানকার বাঙালিদের সাথেই শুধু নয়, শে^তাঙ্গ অস্ট্রেলিয়ানদের সাথেও ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশার সুযোগ হয়েছে। বেশ কয়েক বছর আগে ইউরোপের কয়েকটি দেশ সফরের সুযোগ আমার হয়েছে। আমেরিকা বলুন, ইউরোপ বলুন, আর অস্ট্রেলিয়া বলুন, কোথাও আমি বাংলাদেশের মতো পাইকারী হারে ধর্ষণ দেখিনি ও শুনিনি। গণধর্ষণের কোনো খবর আমার কানে আসেনি। আর ৪ বা ৬ বছরের শিশু ধর্ষণের কথাতো কল্পনাও করা যায় না।
পাশ্চাত্যের কথা এখানে আমি এ কারণেই এনেছি যে সেখানে সেক্স নিয়ে ভায়োলেন্স হয় না। বাংলাদেশে কোনো তরুণী বা গৃহবধুকে গণধর্ষণ করা হয় বা তারপর তাকে হত্যা করা হয়। এমনকি মাসুম শিশুকে পর্যন্ত ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। পশ্চিমা দেশগুলিতে পাস্পারিক সম্মতিতে যৌন মিলন হয় ঠিকই, তাই বলে সেখানে দেহ সম্ভোগের পর মহিলা বা শিশুকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় না।
প্রিয় পাঠক, এখানে আমি আমার একটি ব্যক্তিগত কৈফিয়ৎ দেওয়ার প্রয়োজন বলে মনে করি। ৪৫ বছরের বেশি হলো আমি সাংবাদিকতা করছি। ৪০ বছরের বেশি হলো কলাম লিখছি। কয়েক হাজার কলাম লিখেছি। কিন্তু প্রেম, সেক্স, এক কথায় নরনারীর সম্পর্ক নিয়ে খুব কমই লিখেছি। ৪৫ বছরে সাকুল্যে ১০টি নরনারী বিষয়ক কলাম বা নিবন্ধ লিখেছি কিনা সন্দেহ।
দুই
রবিবারে যে কলামটি লেখার কথা সেটি আজ শুক্রবারেই লিখছি। দেখুন, শুক্রবারে একটি দৈনিক পত্রিকায় তিনটি ধর্ষণের খবর ছাপা হয়েছে। তিনটি তিন স্থানে। প্রথম খবরটি দেখুন। ঘটনাটি ঘটেছে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলায়। এই উপজেলায় সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকে স্বামীকে বেঁধে এক গৃহবধুকে গণধর্ষণ করা হয়। বাড়িতে ঐ গৃহবধু তার দিনমজুর স্বামী ও স্কুল পড়–য়া দুই সন্তানকে নিয়ে থাকেন। বুধবার রাত ১২টার দিকে তার ঘরের সিঁধ কেটে ভেতরে ৭ থেকে ৮ ব্যক্তি ঢোকে। বিষয়টি টের পেয়ে স্বামী স্ত্রী দুই জনেই জেগে ওঠেন। তবে বাড়িটি ফাঁকা স্থানে হওয়ায় তাদের চিৎকারে কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে ঐ নারীর স্বামীর হাত পা বেঁধে পাশের ঘরে সন্তানদের কক্ষে লেপ দিয়ে পেঁচিয়ে আটকে রাখে ঐ দুর্বৃত্তরা। এর পর ঘটনাক্রমে ঐ ৫ ব্যক্তি গৃহবধুকে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার সকালে খবর পেয়ে পুলিশ ঐ গৃহবধুকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাদি হয়ে গৃহবধুকে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে আরো ৩ থেকে ৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে ধর্ষিতার স্বামী।
দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটেছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। রূপগঞ্জে এক টেক্সটাইল মিলে নারী শ্রমিককে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। শনিবার রাতে ঐ ঘটনা ঘটে। ধর্ষকের নাম জিন্নাহ। সে ঐ মিলের সুপারভাইজার। বুধবার রাতে নারী ও শিশু আইনে জিন্নাহর বিরুদ্ধে মামলা করে ঐ নারী। জিন্নাহর গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার সদর থানার একডালা এলাকায়। মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে যে ধর্ষণের শিকার ঐ নারী ঐ মিলে ৪ মাস ধরে কাজ করছে। দীর্ঘদিন ধরে একই মিলে সুপারভাইজার হিসাবে কাজ করে আসছে জিন্নাহ আলী। জিন্নাহ আলী প্রায়ই ঐ নারীকে কুপ্রস্তাব দিত। প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় সে তাকে চাকরি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিত। গত শনিবার ঐ নারী রাতে যখন কর্মরত ছিল তখন অভিযুক্ত সুপারভাইজার তাকে তৃতীয় তলায় ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে। রূপগঞ্জ থানার ওসি জানান, ঐ নারীকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য বৃহস্পতিবার সকালে পাঠানো হয়েছে। আর ধর্ষিতা নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আর একটি ঘটনা দিয়ে ঘটনা। সেই ঘটনাটি আরও লোমহর্ষক, আরও মর্মান্তিক। এই খবরটি গত বৃহস্পতিবার এক শ্রেণীর জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়েছে। ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, ১৩ বছর বয়সের এক কিশোরী কন্যার পিতা একজন ব্যবসায়ীর নিকট থেকে ৬ হাজার টাকা ধার করে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পিতা ধারের টাকা শোধ করতে ব্যর্থ হয়। ব্যবসায়ী তাকে বার বার তাগাদা দেয় তৎসত্বেও ঐ পিতা ধারের ৬ হাজার টাকা জোগাড় করতে ব্যর্থ হয়। তখন ঐ ব্যবসায়ী কন্যার পিতাকে বলে যে তার টাকা শোধ করতে হবে না, যদি তার ১৩ বছরের কিশোরী কন্যাকে সে ভোগ করতে দেয়। ঐ পিতা ব্যবসায়ীর ঐ কু প্রস্তাবে রাজী হয় এবং তার কন্যাকে ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দেয়। এর পর এক বছর ধরে ১৩ বছরের এক কিশোরী কন্যাকে এক মধ্য বয়সী লোক ভোগ করতে থাকে। এই ভয়ঙ্কর ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে। এর মধ্যে নির্যাতিতা ঐ কিশোরী ফাঁক পেয়ে থানায় যায় এবং তার ওপর পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা বর্ণনা করে। শিশুটির ধর্ষকের নাম আবুল হোসেন। সে মুরগীর ব্যবসা করে। ধর্ষিতা কিশোরীর অভিযোগ মোতাবেক পুলিশ ধর্ষক আবুল হোসেন এবং কিশোরীর পিতা উভয়কেই গ্রেফতার করে। ধর্ষক আবুল হোসেনকে থানায় এনে জেরা করা হলে সে এক বছর ধরে কিশোরীটিকে ধর্ষণের অভিযোগ স্বীকার করে। এক বছর ধরে ধর্ষণের এই ঘটনা ঘটে কিশোরীর বাড়িতে। ধর্ষণের আগে তাকে হুমকি ধামকি দেওয়া হতো। অনেক সময় হাইডোজের ওষুধ খাইয়ে আবুল হোসেন তার দেহ ভোগ করতো।
এই ধরনের ঘটনা আর কত বলবো? এমন সব ঘটনা মনে পড়ছে, সেগুলো না বলে পারছি না।
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ৬০ বছরের এক বৃদ্ধ ৮ বছরের এক শিশু তথা কিশোরীকে ধর্ষণ করেছে। অভিযুক্ত বৃদ্ধ থানায় ঝাউবাড়ি এলাকার এক বাড়ির মালিক। নাম হাজি সিদ্দিকী। ৮ বছরের ঐ কিশোরীটি তার বাড়ির ভাড়াটিয়া। খাবারের প্রলোভন দেখিয়ে ঐ বৃদ্ধ তাকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর শিশুটির রক্তক্ষরণ শুরু হয়। শিশুর মা তাকে প্রথমে মিটফোর্ট হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায়। এসব ছাড়া কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ১২ বছরের কিশোরীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। এই গণধর্ষণ কোন থানার আওতায় পড়েছে সেটি নিয়ে দুই থানার মধ্যে ঠেলাঠেলি হয়েছে।
এই পর্ব শেষ করব সূবর্ণচরের দুইটি গণধর্ষণ নিয়ে। মাত্র ১০/১২ মাস আগের ঘটনা। যারা নিয়মিত খবরের কাগজ পড়েন তারা এই খবর জানেন। ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের কয়েক দিন পরের ঘটনা। সূবর্ণচরে রাতের আঁধারে ঘরে প্রবেশ করে ৫/৬ জন পান্ডা। এরা শাসকদের বলে পত্রপত্রিকায় উল্লেখ রয়েছে। ঘরে ঢুকে ৪ সন্তানের জননীকে পাশের পাটক্ষেতে নিয়ে যায় এবং পালা করে একের পর এক ধর্ষণ করে। এর কয়েকদিন পর সেই একই সূবর্ণচরে জোর করে ঘরে ঢুকে ৬ সন্তানের জননীকে ধান ক্ষেতে নিয়ে ৮ জন ধর্ষণ করে।
পাঠক, এগুলো ঘটনার বর্ণনা দেওয়ার ইচ্ছা আমার ছিলোনা। তারপরেও দিলাম। কারণ, এই ধরনের হাজার হাজার ঘটনা সারা দেশে ঘটছে। কোন দেশে বাস করছি আমরা? এটা কি কোনো সভ্য দেশ? এটা কি আফ্রিকার জঙ্গল? স্থান কাল পাত্রভেদে নির্বিবাদে শুধুমাত্র যুবতী নয়, শিশুকেও গণধর্ষণের জন্যই কি লক্ষ্য প্রাণের বিনিময়ে দেশকে স্বাধীন করা হয়েছে? বিদগ্ধজনরা বলছেন, ধর্ষণ এবং গণধর্ষণ মহামারী আকার ধারণ করেছে। ইংরেজিতে যদি এটাকে ঝবীঁধষ ধহধৎপযু বা যৌন নৈরাজ্য বলা হয় তাহলে কি ভুল বলা হবে?
এর প্রতিবিধান কি? দ্রুত বিচার ও কঠোর শাস্তি। যে ব্যক্তির স্ত্রীকে ৬/৭ জন মিলে গণধর্ষণ করে, যে ব্যক্তির মাকে গুন্ডারা গণধর্ষণ করে, যে ব্যক্তির বোনকে বখাটে যুবকরা জোর করে উঠিয়ে নিয়ে ভোগ করে, সেই ব্যক্তিই জানে, এর মর্ম যাতনা কত গভীর। এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ছাড়া বিকল্প নেই।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।