গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
ফেনী জেলার সোনাগাজীতে ২০০৩ সালে মাকে বেঁধে রেখে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ১৩ বছরের মেয়েকে গণধর্ষণের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় ১৮ বছর ধরে পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি লাতু মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩।
সোমবার রাতে রাজধানীর মেরুল বাড্ডা এলাকা থেকে অলি নবী ওরফে লাতু মিয়াকে (৫৫) গ্রেপ্তার করা হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, ২০০৩ সালের ১৩ মে গভীর রাতে সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের একটি বাড়ীতে ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে বিধবা মা ও ১৩ বছরের মেয়েকে জোর করে টেনে হিঁছড়ে বাইরে নিয়ে এসে মাকে বেঁধে রেখে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হত্যার ভয় দেখিয়ে আটকে রেখে মায়ের সামনেই মেয়েকে লাতু মিয়া, ফারুক, জাহাঙ্গীর আলম ও কাশেম মিলে গণধর্ষণ করে।
এই ঘটনায় ভিকটিমের মা বাদী হয়ে পরদিন সোনাগাজী থানায় ২০১৩ সালের ১৩ মে মো. ফারুক, জাহাঙ্গীর আলম, আবুল কাশেম ও মো. লাতু মিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ২০০৩ সালের ১৩ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষে দীর্ঘ ১৯ বছর পর এবছরের ১৪ জুলাই আদালত জাহাঙ্গীর আলম, আবুল কাশেম ও মো. লাতু মিয়াসহ অভিযুক্ত তিন আসামীর বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমানিত হওয়ায় মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন। একই সঙ্গে প্রত্যেক আসামীকে ২ লাখ টাকা জরিমানা এবং মো ফারুকের বিরুদ্ধে অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত না হওয়ায় মুক্তি দেন।
গ্রেপ্তার আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক জানায়, ঘটনার সময়ে সোনাগাজী এলাকায় মো. ফারুক এর নেতৃত্বে লাতু, জাহাঙ্গীর আলম ও কাশেমসহ আরও অনেকে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, গ্রাম্য সালিশ বিচারে হস্তক্ষেপ, নিরীহ মানুষকে হয়রানি করে অর্থ উপার্জন, ভূমি দখল, জলমহাল দখল, খাস জমি দখল, এলাকায় গ্রুপিং সৃষ্টি করে ফায়দা নেয়া, বিবদমান বিষয়ে উসকানী দেয়া, এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির জন্য সশস্ত্র মহড়া দেয়া, অসহায় নারীদের উত্যক্ত করাসহ তারা নানা অপকর্ম করে বেড়াত।
উক্ত ঘটনার ভিকটিমের পিতা শিশু বয়সে মারা যাওয়ার পর ভিকটিমের বিধবা মা কষ্টে দিন যাপন করছিলেন। তারা বিভিন্ন সময়ে ভিকটিম ও তার মাকে কুপ্রস্তাব দিত। কিন্তু তাদের কুপ্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় ২০০৩ সালের ১৩ মে গভীর রাতে তারা চারজন মিলে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটায়।
র্যাব জানায়, ঘটনাটি পরদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে এলে তারা আত্মগোপনে চলে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে তারা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কিছুদিন জেল খাটার পর জামিনে বের হয়ে লিতু, জাহাঙ্গীর ও কাশেম পলাতক জীবন শুরু করে। সেসময়ে মামলার আসামী ফারুক নিয়মিত বিজ্ঞ আদালতে হাজিরা দিত। জামিনে বের হওয়ার পর মামলা তুলে নেয়ার জন্য তারা ভিকটিম ও ভিকটিমের মাকে ভয় ভীতি প্রদর্শন করে।
লাতু মিয়ার জীবন বৃত্তান্ত
গ্রেপ্তার লাতু মিয়ার কোন দৃশ্যমান পেশা নেই। সে নিরক্ষর। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চুরি, ডাকাতিসহ নানা অপকর্মে জড়িত ছিল। তার নামে ফেনী ফুলগাজী থানায় একটি ডাকাতি ও গণধর্ষণ মামলাসহ তিনটি মামলা রয়েছে।
লাতু মিয়ার পলাতক জীবন
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, ২০০৩ সালে গণধর্ষণের ঘটনার পর তার পলাতক জীবন শুরু হয়। ওই ঘটনার পর সে চট্টগ্রামে গিয়ে রিক্সা চালক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ শুরু করে। কিন্তু কোন কায়িক পরিশ্রম তার ভালো লাগত না। তারপর সে চুরি ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়ে। একটি ডাকাতির ঘটনায় সে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হাতে গ্রেপ্তার হয়ে জেল খাটে। জামিনে বের হয়ে সে গোপনে তার বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের বাসায় অতিথি হিসেবে জীবন যাপন করত।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, সে মাঝে মাঝে তার নিজ বাড়িতে এসে গোপনে তার স্ত্রী সন্তানের সাথে দেখা করত এবং তাদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে যেত। তারপর সে কিছুদিন সিলেটে মাজার এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। একপর্যায়ে সে ঢাকায় এসে হকার হিসেবে ফুটপাতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি করত। ওই পেশায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে পড়ার আশংকা থেকে সে দারোয়ানের চাকরী নেয়। পলাতক সময়ে সে নিজেকে অলি নবী হিসেবে পরিচয় দিত। মামলার রায়ে মৃত্যুদন্ডের আদেশ হওয়ার পর সে ঢাকায় একটি মাজারে আত্মগোপন করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।