পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা নিয়ে এখন দিন-রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য মনোমুগ্ধকর নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তাদের প্রতিশ্রুতি এমন যে, তাদের নির্বাচিত করা হলে ঢাকা শহরকে তারা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নগরীতে পরিণত করবেন। বাস্তবতা হচ্ছে, প্রার্থীদের এই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির জোয়ারে এখন রাজধানীর সেবা কার্যক্রম ভেসে যাচ্ছে। নগরসেবা স্থবির হয়ে পড়েছে। সিটি করপোরেশনের সেবাকাজ বন্ধের উপক্রম। ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করা ও মশা নিধন কার্যক্রম থেকে শুরু করে অন্যান্য সেবার কাজ প্রায় বন্ধ এবং উচ্ছেদকৃত জায়গা পুনরায় দখলে চলে গেছে। প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণার ঢামাঢোলে নগরসেবা ঢাকা পড়ে গেছে। অথচ নির্বাচনে রানিং মেয়রসহ অনেক কাউন্সিলর প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। দেখা যাচ্ছে, নিয়মিত সেবার কাজের চেয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় তাদের সব মনোযোগ। ফলে নগরবাসী এখন অনেকটাই সেবাবঞ্চিত অবস্থায় রয়েছে। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেন সিটি করপোরেশনের সকল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা নির্বাচন করছেন এবং এ নিয়ে তারা ব্যস্ত হয়ে পড়ায় সেবার কাজ করতে পারছেন না। তাদের কাছে সেবার আগে নির্বাচন মুখ্য হয়ে পড়েছে। তাদের মনোভাব এমন, নির্বাচনে যারা জিতে আসবেন, তারা এসে কাজ শুরু করবেন, তার আগে সেবা বন্ধ থাকবে। সিটি করপোরেশন যে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান এবং তা সকল পরিস্থিতিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেবা অব্যাহত রাখবে, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তরা যেন তা ভুলে বসে আছেন।
প্রতিষ্ঠান তার নিয়মিত কাজ করবে, এটাই স্বাভাবিক। এর নেতৃত্বে কে আসবে বা যাবে, এজন্য কাজ থেমে থাকতে পারে না। দুঃখের বিষয়, সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তার কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। করপোরেশনের সকলেই যেন ‘আগে নির্বাচন, পরে সেবা’ এমন মনোভাব নিয়ে বসে আছে। প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত যেসব কাজ তা শ্লথ হয়ে গিয়েছে। নির্বাচন করছে মেয়র প্রার্থীরা। তাদের মধ্যে যিনি নির্বাচিত হবেন, তিনি এসে তার দায়িত্ব বুঝে নেবেন। তার মানে এই নয়, তাকে ছাড়া পুরো সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়বে। তিনি এলে কার্যক্রম শুরু হবে, তাহলে করপোরেশনের বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা আছেন কেন? এবারের নির্বাচনে দুই সিটির একটিতে সিটিং মেয়র রয়েছেন। ঢাকার উত্তরের মেয়র পদত্যাগ করে নির্বাচন করছেন। দক্ষিণেও মেয়র বহাল রয়েছেন। তাহলে নগরবাসী নিয়মিত সেবা থেকে বঞ্চিত হবে কেন? পর্যবেক্ষরা বলছেন, উত্তরের মরহুম মেয়র আনিসুল হক অবৈধ দখল উচ্ছেদসহ যে সকল যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, সে কাজগুলো এখন ম্লান হয়ে পড়েছে। উচ্ছেদকৃত জায়গা দখল হয়ে গেছে। অন্যান্য সেবার মান নিম্নগতির দিকে। দক্ষিণেও একই পরিস্থিতি লক্ষ্যণীয়। ফুটপাত থেকে শুরু করে সড়ক অবৈধ দখলে চলে গেছে। যথাযথ সেবার মান বলতে কিছু নেই। অথচ নগরীকে বেহাল অবস্থায় রেখেই চলছে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির ফোয়ারা। নগরবাসী প্রার্থীদের কাছ থেকে এমন ফুলেল প্রতিশ্রুতি অতীতেও পেয়েছে, ভোটও দিয়েছে, তবে তাদের এ প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন খুব কমই দেখেছে। রাজধানীর মূল সমস্যা যানজট, অপরিচ্ছন্নতা, দূষণ ইত্যাদি। এসব সমস্যার সমাধান দেখা তাদের সৌভাগ্য হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই নগরবাসীর কাছে প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি তুষ্টিকর ও রঙিন ফানুস হয়েই রয়েছে। যে প্রতিশ্রুতি রক্ষা এবং বাস্তবায়ন করা যায় না, তা যে অর্থহীন, এটা নগরবাসী বুঝে গেছে। তাদের কাছে সিটি করপোরেশন নির্বাচন করতে হবে তাই করা হচ্ছে-এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ উন্নত বিশ্বে সিটি নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। এমনকি জাতীয় নির্বাচনের চেয়েও এ নির্বাচনকে এগিয়ে রাখে। কারণ, এর সাথে নগরবাসীর উন্নত জীবনযাপন এবং সেবার বিষয়টি ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। আমাদের দেশে এর ব্যতিক্রম দেখা যায়। এখানে সিটি নির্বাচনে প্রার্থীরা নগরবাসীর সেবার অসংখ্য প্রতিশ্রুতি দিলেও তার সিকিভাগও কার্যকর করে দেখাতে পারে না।
দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। অথচ রাজধানীর চিত্র দেখলে যে কারো পক্ষে তা বিশ্বাস করা কঠিন। এটা ভাবা যায় না, উন্নয়নশীল একটি দেশের রাজধানী বছরের পর বছর ধরে শোচনীয় অবস্থায় থাকছে। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নগরী, বসবাসের অযোগ্য ও অসভ্য নগরী হিসেবে পরিচিতি নিয়ে চলছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কার্যকর কোনো পদক্ষেপই দেখা যায় না। নগরীকে বাসযোগ্য করে তোলা এবং নাগরিকদের মানসম্মত সুযোগ-সুবিধা দেয়ার দায়িত্ব নির্বাচিত মেয়র এবং কাউন্সিলরদের হলেও তা তারা দিতে সক্ষম হননি। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে আসন্ন নির্বাচনে নির্বাচিত মেয়ররা তা দিতে কতটা সক্ষম হবেন, এ নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে সন্দেহ বিরাজ করা অমূলক নয়। তবে বছরের পর বছর ধরে রাজধানী অবাসযোগ্য হয়ে থাকবে তা কাম্য হতে পারে না। নির্বাচিত মেয়রদেরই এক্ষেত্রে মূল দায়িত্ব পালন করতে হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা যেভাবে স্বপ্নের মতো প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, আমরা আশা করব, এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তব রূপ দিতে তারা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করবেন। তাদের প্রতিশ্রুতি যাতে কথার কথায় পরিণত না হয়, তা তারা মনে রেখে অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।