Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফেসবুক নিয়ে ভাবা দরকার

এনায়েত আলী বিশ্বাস | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

ফেসবুক সামাজিক যোগাযোগের একটা উপায়। এর মাধ্যমে যে কোনো বার্তা খুব দ্রুতই ছড়িয়ে পড়তে পারে। মানুষ ইন্টারনেট এবং সামাজিক মাধ্যমগুলো ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, কেনাকাটা সব কিছুই হাতের মধ্যে পেয়ে যাচ্ছে। ফেসবুক এখন অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ বা জানা ও জানানোর অন্যতম মাধ্যম। ফেসবুক যেমন জনপ্রিয় হয়েছে, তেমনি ফেসবুক উন্মাদনা এখন চরমে। এর ব্যবহারকারীদের মধ্যে ভালোর চেয়ে খারাপের সংখ্যাই বেশি। আর এ কারণে ফেসবুকে ভুয়া তথ্য দেবার কারণে দেশে-বিদেশে নানা অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। কারা ফেসবুকে ভুয়া তথ্য দিয়ে গুজব ছড়ায়, কারা ফেসবুক আইডি হ্যাক কারে মিথ্যা তথ্য দেয় তা বের করা কঠিন কিছু ব্যাপার নয়। এ তথ্যটা সকল ফেসবুক ব্যবহারকারীর জানা দরকার। কতজন জানেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। আর এই অজানার কারণে অথবা জেনেশুনেও ভুয়া খবর প্রচার করে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায় এক শ্রেণির মানুষ। ভুয়া খবরের অন্যতম মাধ্যম হয়ে পড়েছে ফেসবুক। উন্মুক্ত এ মাধ্যমে যা ইচ্ছা তাই পোস্ট করা যায় বলে সুযোগ নিয়ে দুষ্টরা ভুয়া কথা ছড়ায়, বিভ্রান্তি ছড়ায়। এ নিয়ে দেশে ইতোমধ্যে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে ঘেছে। গুজবের কারণে রামুর বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা, ভোলার বোরহানউদ্দিনে নৃশংস ঘটনা, ব্রাহ্মবাড়িয়ার নাসিরনগরে,রংপুরের গংগাছড়াসহ আরো অনেক জায়গায় এমন ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া গলা কাঁটা,ছেলে ধরা,লবণ নিয়ে গুজব এমনি ধরণের ঘটনা ঘটছে অনবরত। সরকার ইচ্ছা করলে ফেসবুক বন্ধ করে দিতে পারে। কিন্তু তা করছে না বলে এক শ্রেণির মানুষের স্পর্ধা বেড়েই চলেছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের যেমন তথ্য অধিকার আইনের আওতায় আনা হয়েছে,তেমনি ফেসবুককে আইনের আওতায় আনা উচিত। কারণ ফেসবুক হ্যাক করে দুষ্টুচক্র মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করছে। একারণে ফেসবুক নীতিমালা প্রণয়ন ও গণমাধ্যমে তা প্রচারের ব্যবস্থা করা দরকার। ফেসবুক হেল্প সেন্টারও চালু করা দরকার। পূর্ণ নাম-ধাম-ঠিকানা ভেরিফাইয়ের ব্যবস্থা রেখে ফেসবুক আইডি খোলার নিয়ম চালু করলে ভুয়া ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সহজে সনাক্ত করা সম্ভব হবে। সবার ফেসবুক পেজের কভার ফটোতে আইসিটি আইনের সংক্ষিপ্ত শাস্তির বিধান রাখা বাধ্যতামূলক করা দরকার।

ফেসবুক নিয়ে শুধু আমাদের দেশ নয়,বিশ্বে বহু দেশ ভাবনায় পড়েছে। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও গুগলের মত বিশ্বখ্যাত তথ্য সংগ্রহ করার ব্যবসায়িক প্রক্রিয়াটি মানবাধিকারের জন্য হুমকি বলে দাবি করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটির বক্তব্য, বিনামূল্যে গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট খোলার সুবিধা দিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করার পর তাদের লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের মাধ্যমে আয় করা মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিরোধী। অ্যামনেস্টির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,ফেসবুক ও গুগল গ্রাহকদের যে সেবা দেয় সেটির জন্য বাস্তবিক তাৎপর্য থাকলেও এ জন্য প্রক্রিয়াগত মূল্য দিতে হয় ব্যবহারকারিদের। প্রতিষ্ঠান দু’টির নজরদারিভিত্তিক ব্যবসায়িক প্রক্রিয়া মানুষকে একটা নাজুক পরিস্থিতে ফেলে। সংস্থাটির মতে, বিশ্বব্যাপী নজরদারীর কারণে গুগল ও ফেসবুক এত বিশাল সংখ্যক তথ্য সংগ্রহ করেছে যা গ্রাহকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হতে পারে। তাদের ব্যবসায়িক মডেল ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নীতির জন্য হুমকি। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই দু‘টি প্রতিষ্ঠান অনলাইন জগতের প্রায় পুরোটা জুড়ে আধিপত্য বিস্তার করে আছে। মানুষের আধুনিক জীবনে তাদের ডিজিটাল পর্বে তাদের অপ্রতিদ্বন্দ¦ী ক্ষমতা দিয়ে কোটি কোটি মানুষের ব্যক্তিগত তথ্যের উপর আয় করছে তারা। এর ফলে এর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার গোপনীয়তার আধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে। এ যুগে অন্যতম মানাধিকার লঙ্ঘন এটি। এব্যাপারে সবদেশের সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জনানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানকর্তৃক এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার মানুষদের সুরক্ষা দেবার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু বিগত দুই দশক ধরে তাদের বিরুদ্ধে কোনো নীতি আরোপ করা হয়নি। অ্যামনেস্টির এই দাবী অস্বীকার করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। তারা বলেছে, তাদের এই ব্যবসায়িক মডেল একটি গুরুত্বপূর্ণ সেবা দেয়, যার মাধ্যমে সবাই মৌলিক মানবাধিকার চর্চা করতে পারে। সেখানে তারা মত প্রকাশের স্বাধীনতা উপভোগ করছে। ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী জাকারবার্গর সরকারকে তথ্য সংরক্ষণ নিয়ে নীতি বাস্তবায়নের আহবান জানিয়েছেন। তবে গুগলের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য দেওয়া হয়নি।

ফেসবুক মানুষের সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম বাহন হলেও কিছু মানুষের করণে যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন এর ব্যাপ্তি যেহেতু বেড়েছে এবং তথ্য প্রযুক্তির সাথে আমাদের থাকতেই হবে,তখন ফেসবুক সহ সামাজিক মাধ্যম নিয়েই আইটি বিশেষজ্ঞদের আরো বিস্তর ভাবতে হবে। এ ভাবনায় জনসাধারণ আইনশৃংঙ্খলাবাহিনী ও সরকারের ভূমিকা থাকবে। বিভ্রান্তির কৌশলকে তাৎক্ষণিক মোকাবেলা করে হ্যাকার সনাক্ত করণের ক্ষেত্রে সরকারকে তৎপর হতে হবে।

ফেসবুক পোস্ট বর্তমানে অনেকের কাছে একটা ঠাট্টা বা মজা করার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা বলে যে প্রবাদটি রয়ে গেছে সেটা বিশ্বের অন্য দেশে তেমন প্রয়োগ না ঘটলেও বাংলাদেশে এর প্রয়োগ বেশি। যুবকরা বিশেষ করে যাদের কোনো কাজ নেই বা চাকরি নেই তারা সব সময় নেটে পড়ে থাকে। এদের বেশির ভাগই ইন্টারনেট নিয়ে পড়ে থাকে। তারা কেউ কোনো বিষয় নিয়ে পোষ্ট করেলে অন্যেরা ভালোমন্দ বিবেচনা না করে তা শেয়ার করে। এ ছাড়া অন্যের পোষ্ট হ্যাক করে তারই পোষ্টে বিভ্রান্তিকর পোস্ট করে শুধু বিভ্রান্তি করে না, অনেক ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে বিরোধ সৃষ্টি করছে। এমন ঘটনার বিবরণ পূর্বেই উল্লেখ্য করেছি। এখন্ োএমনি শত শত পোস্ট দেওয়া হচ্ছে। তবে ক্ষতিকর পোষ্ট করা হয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট বিষয়ে। সামাজিক যোগাযোগ সহজলভ্য হওয়ায় মানুষ মুহূর্তে খবর পেয়ে যায়। এরই সঙ্গে রয়েছে অতিবাড়াবাড়ির আবেগ, অপপ্রচারের প্রয়াস। পুরো ঘটনা না জেনে উত্তেজক প্রতিক্রিয়া জানো হয়। এর ফলে সৃষ্টি হয় সংঘাত। এর জন্য অসচেনতা বেশি দায়ী। বেশকিছু অনলাইন পোর্টাল এই অপপ্রচারের হাতিয়ার হয়ে থাকে। অনুমোদনবিহিন এই অনলাইন সংবাদ মাধ্যমগুলো, যা ইচ্ছা তাই প্রকাশ করে যাচ্ছে।এতে বিভ্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এগুলোর প্রকাশনা বন্ধ করা দরকার। সেই সাথে ফেসবুকের নিয়ন্ত্রণ যদি সরকার করতে ব্যর্থ হয় তাহলে এর প্রচার বন্ধ করা দরকার।
লেখক: অধ্যাপক ও কলামিস্ট

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফেসবুক


আরও
আরও পড়ুন