বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
১৯৭১ সালের ২৮ মে। জুমার নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার চানগাছা গ্রামের মুসল্লিরা। এমন সময় হামলা চালায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। কৌশলে ডেকে নেয় ৯ গ্রামবাসীকে। পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে চালানো হয় ব্রাশফায়ার। খোঁচানো হয় রাইফেলের বেয়নেট দিয়ে। শহীদ হন আটজন। গুলিবিদ্ধ হয়েও সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান একজন। পাকিস্তানি সেনারা গ্রামে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে।
ইনকিলাবের কাছে সেদিনের সেই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে শিউরে ওঠেন ৭৫ বছর বয়সী আবদুল বারেক ওরফে মালু মিয়া। যিনি শরীরে গুলির চিহ্ন নিয়ে বেঁচে আছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী জয়নাল আবেদীন মেম্বার, হাসান আলী, সুয়া মিয়া, মজিদ আলীও তুলে ধরেন নির্মমতার চিত্র। তারা জানান, সেদিনের ঘটনায় নিহত আটজনের পরিবার আজও পায়নি শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি, স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও মেলেনি সরকারি সহযোগিতা।
বুড়িচংয়ের মোকাম ইউনিয়নের চানগাছা গ্রাম। সে সময়ের বৃহৎ ময়নামতি সেনানিবাস ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাছাকাছি এলাকা এটি। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর গ্রামটিতে প্রায়ই আসত পাকিস্তানি সেনারা।
ওই গ্রামের সুজত আলীর ছেলে আবদুল বারেক স্মৃতিচারণ করে বলেন, পাকিস্তানি সেনারা গ্রামে প্রবেশের পর তারা ভেবেছিলেন কিছু কিনতে হয়তো সেনারা এসেছে। কিছু সময় পরই তাকেসহ বছর উদ্দিনের ছেলে আব্দুল জব্বার, আব্দুল জব্বারের ছেলে শব্দর আলী, আলী মিয়ার ছেলে ফুল মিয়া, আম্বর আলীর ছেলে আব্দুল খালেক ও দুলু মিয়া, আব্বাস আলীর ছেলে তাজুল ও আয়েত আলী, রৌশন আলীর ছেলে আলী আহাম্মদকে কৌশলে ডেকে নেয়। এরপর তাদের চানগাছা পূর্বপাড়ার তাজুল ও আয়েত আলীর বাড়ির পেছনে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে। পরে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিতের চেষ্টা চালায়। পরে ১৪ আগস্ট পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ওই গ্রামে আরও একবার হানা দিয়েছিল।
চানগাছা পশ্চিম পাড়ার হুমায়ুন কবীর বলেন, ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তার বাবা মকবুল হোসেন ও চান মিয়ার ছেলে আবদুল হান্নান বাড়িতে ফিরে স্বজনের সঙ্গে দেখা করে যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। রাজাকারদের তথ্যে হামলা চালায় পাকিস্তানি সেনারা। মকবুল ও হান্নানকে ধরে নিয়ে মুকসত আলী মেম্বারের বাড়ির সামনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে।
শহীদ পরিবারের সদস্য আলী আহাম্মদের ছেলে সুয়া মিয়া, তৈয়ব আলী ও আব্দুল মজিদ, শব্দর আলীর ছেলে সাহেব আলী, ফুল মিয়ার ছেলে শরবত আলী, চারু মিয়া, হামিদ আলী, তাজুল ইসলামের নাতি সাবেক ইউপি সদস্য লোকমান হোসেন, বর্তমান ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন জানান, ১৯৭১ থেকে ৯১ সাল পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে কেউ নিহতদের স্বজনের খোঁজে চানগাছায় আসেননি। এরপর কখনও মুক্তিযোদ্ধা, কখনও সাংবাদিক পরিচয়ে কেউ কেউ এলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। লোকমান হোসেন জানান, চানগাছা কবরস্থান উন্নয়নে গতবছর জেলা পরিষদে আবেদন করলে দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। সে টাকায় কবরস্থানের দু’দিকের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ হয়। শহীদ পরিবারের সদস্যরা সবাই কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। আর্থিক অবস্থা শোচনীয় হওয়ায় অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটে তাদের। সেদিনের নিহতদের পরিবারের সদস্যরা শহীদ পরিবারের স্বীকৃতির দাবি জানান। রাষ্ট্রীয় অনুদান ও পরিবারের সদস্যদের যোগ্যতা অনুসারে চাকরির ব্যবস্থার দাবি জানান তারা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।