Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

যেখানে শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে চীন

পাকিস্তানের দুর্গম কারাকোরাম সড়ক-শেষ পর্ব

এনপিআর | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

কারাকোরাম মহাসড়কের কাছের একটি শহরে, ৪৫ বছর বয়সী ক্রীড়া তত্ত¡াবধায়ক কাজী ইসহাক মনে করেন মহাসড়কটির উন্নয়ন সেই এলাকায় পর্যটন বাড়াবে। সেখানে কাছের একটি বড় মাঠে ছেলেরা হকি, ক্রিকেট এবং ফুটবল খেলছিল।
পাকিস্তানের গ্রামাঞ্চলে মেয়েরা সাধারণত বাইরে খেলাধুলা করে না; তারা খুব কমই বাইরে বের হয়। নতুন এই মহাসড়ক তাদের জীবনযাত্রার রীতিনীতি পরিবর্তন করতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইসহাক জোর দিয়ে বলেন, ‘আমাদের সংস্কৃতিতে কোন প্রভাব পড়বে না।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের অঞ্চলের মহিলারা পর্দা পালন করেন।’
চীনের কাছাকাছি এলাকায় কারাকোরাম সড়কে কয়েকটি ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কারণ, সড়ক অবরোধ করে রেখেছিল ইয়াকের একটি পাল। তাদের পালক সুহাইল আব্বাস জানান, তিন বছর আগে একটি চীনা সংস্থা রাস্তার এই অংশটি মেরামত শুরু করার পর থেকে তার ভাগ্য বদলে গেছে। তিনি হেসে বলেন, ‘মাংস কেনার মতো সামর্থ্য এখন সেখানকার মানুষের আছে।’
আব্বাস জানান, স্থানীয়রা পর্যটন থেকে অর্থোপার্জন করছে এবং আরও ইয়াক কিনছে। এই বছর, তিনি ৫০০ ইয়াক দিয়ে শুরু করেছিলেন এবং ৩২টি বাদে সব বিক্রি করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘লোকেরা ইয়াক পছন্দ করে কারণ তারা ঘাস ব্যতীত অন্য কিছু খায় না।’ তার কথা ২৩ বছর বয়সী একজন গরীব রাখালের চেয়ে বরং একজন আধুনিক কসাইয়ের মতো শোনায়। রাস্তার কাজ শুরু হওয়ার আগে, তিনি বছরে গড়ে ১৫টি ইয়াক বিক্রি করতেন এবং চা ও রুটি খেয়ে জীবন ধারণ করতেন।
এই কর্মব্যস্ততা নিকটবর্তী সীমান্ত শহর সোস্টে স্পষ্টত দেখা যায়, স্থানীয় স্থল বন্দর থেকে খালাস করা আমদানিকৃত চীনা সামগ্রী পরিবহণ করতে পাকিস্তান জুড়ে কার্গো ট্রাক আসে। কয়েক ডজন পুরুষ বাইরে বসে ছিলেন। তারা বাক্সগুলো তুলে দেয়ার কাজ পেতে বসে ছিলেন। এই কাজে তারা প্রতিদিন প্রায় ১ ডলার করে পান। ২৯ বছর বয়সী কাস্টমস কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল জানান, যখন তিনি ছোট ছিলেন তখন সেই এলাকায় কেবল একটি দোকান ও একটি হোটেল ছিল। তিনি বলেন, ‘সেখানে কেবলমাত্র বাস ছিল, চীন থেকে হজ যাত্রীদের নিয়ে পাকিস্তানে আসত।’ চীন থেকে পাকিস্তান হয়ে যাওয়া হজযাত্রীদের বেশিরভাগ ছিলেন উইঘুর মুসলিম, যারা এখন আর আসেন না। তিনি চীনের সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন-পীড়নের ব্যাপারে ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে মন্তব্য করেন।
খুঞ্জেরব পাসের দিকে বেঁকে যাওয়া অংশে, সরু বাঁকের মধ্যে দিয়ে চালানোর সময় যানবাহনগুলো রাস্তায় পড়ে থাকা পাথরখÐ এড়িয়ে চলতে হয়। অনেক মিনিভ্যান এই রুটে চলাচল করে, সেগুলোর ছাদে স্যুটকেস গাদা করে থাকে, এগুলো চীনে পড়ালেখা ও ব্যবসার উদ্দেশ্যে যাওয়া পাকিস্তানীদের সীমান্তে পৌঁছে দেয়। পর্যটকরা সেখানে সেলফি তোলার জন্য পোজ দেয়।
চীন-পাকিস্তান অ্যাকসিসের লেখক অ্যান্ড্রু স্মল দাবি করেছেন, এখন পর্যন্ত এই রাস্তাটি সীমান্তের বাণিজ্য বাড়ানোর প্রত্যাশা প‚রণ করতে পারেনি। তার পরিবর্তে, হাইওয়ের মূল উদ্দেশ্য দুই দেশের মধ্যে ‘কৌশলগত অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা’। এবং সামরিক ক্ষেত্রে এর খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘ভারত সীমান্তে সৈন্যবাহিনীর সামরিক যান ও পরিবহনের গতিশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এটি ভারত থেকে তার নিয়ন্ত্রণাধীন বিতর্কিত অঞ্চলগুলিকে রক্ষা করতে পাকিস্তানের সক্ষমতা বাড়াবে।’ এই সড়কের সুদূর উত্তর দিকে বিরোধপূর্ণ কাশ্মীরের হিমালয় অঞ্চল অবস্থিত। সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় দিক থেকে আলাদা হলেও সেখানকার বাসিন্দারা নিজেদের কাশ্মীরি বলে পরিচয় দেয় না। এই অঞ্চলটিতে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যে তীক্র রেশারেশি, তা অন্য কোথাও দেখা যায় না।
সিপিসি’র পাকিস্তানি পরিচালক লিয়াকত আলী শাহ বলেছেন, চীন জিনজিয়াং প্রদেশে শিল্পায়নের ফলে বাণিজ্য আরও বাড়বে। সেখানকার কারখানাগুলো কারাকোরাম মহাসড়ক ব্যবহার করতে পারবে। এটিই একমাত্র রাস্তা যা দক্ষিণ পাকিস্তানি বন্দর গোয়েদারের সাথে চীনকে যুক্ত করেছে। গোয়েদার আরব সাগরের সাথে যুক্ত। শাহ বলেন, ‘ যখন এই অঞ্চলের বিকাশ ঘটবে, তখন অবশ্যই ব্যাবসা করার একাধিক কার্যকর উপায় তৈরি হবে।’
সোস্টের বাসিন্দা, ৪৫ বছর বয়সী শিক্ষক বিবি হালিমা (৪৫) আশা করছেন, আরও সমৃদ্ধি আসবে। তিনি বলেন, ‘কারাকোরাম মহাসড়ক এবং এখন সিপিইসি’র কারণে আরও বেশি কারখানা প্রতিষ্ঠিত হবে। আরও বেশি কাজের সুযোগ তৈরি হবে।’ তিনি স্মৃতিচারণ করেন যখন সোস্ট দূর্গম ও দরিদ্র ছিল। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রচুর সময় থাকত, আমি শিক্ষকতা শেষ করে এসে সবাই মিলে বসে গল্প করতাম। তিনি আরও বলেন, ‘আজ, মহাসড়কের সাথে, সময়ও মূল্যবান হয়ে গেছে। এখন নষ্ট করার মতো এক সেকেন্ড সময়ও নেই।’



 

Show all comments
  • তুষার আহমেদ ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ২:১৬ এএম says : 0
    খুব ভালো
    Total Reply(0) Reply
  • জহির ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ২:১৭ এএম says : 0
    এই দুই দেশকে এক সাথে কাজ করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • নাঈম ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ২:১৭ এএম says : 0
    পাকিস্তানকে নিজেদের স্বার্থের কথা মাথায় রাখতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • নাবিল ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ২:১৮ এএম says : 0
    উরুঘুয়ের মুসলমানদের ব্যাপারে পাকিস্তানের উচিত চিনের সাথে কথা বলা
    Total Reply(0) Reply
  • আকাশ ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ২:১৯ এএম says : 0
    বাংলাদেশেও তারা বিনিয়োগ করতে কিন্তু ......................
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ