পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
অবশ্য, শরীয়ত আর তরিকতের মধ্যে বিরোধ সেখানে অব্যাহত ছিল। জামে সমজিদ থেকে মাত্র মাইল খানেক দূরে অবস্থিত অপর একটি প্রতিষ্ঠান খানকাহ-ই-মওলা ছিল তরিকত-পন্থীদের আস্তানা। ডোগরা শাসনামলে এই দুই পক্ষের মধ্যকার দ্বদ্ব প্রকাশ্যে আসে। এমনকি সেটা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায়। ফলে, সে সময় মহারাজা ডিক্রি জারি করে শ্রীনগরের মসজিদগুলোকে দুই পক্ষের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে দিয়েছিলেন।
মীরওয়াইজ পরিবারই কাশ্মীরে প্রথম ইসলামিয়া হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করে। বলা হয়ে থাকে, ডোগরা মহারাজারা ওই মৌলবিকে আস্থায় রেখেছিলেন। তিনি ছিলেন অভিজাত আলেম। শেখ আবদুল্লাহ রাজনীতিতে আসার শুরুতে এই মৌলবির পৃষ্ঠপোষকতা পান। ১৯৩১ সালে যখন শেখ আবদুল্লাহ যুবসমাজের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তখন এই মৌলবির নেতৃত্বে ভাগ বসে। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। ১৯৩১ সালে মুসলিম সম্প্রদায়ের আন্দোলন শুরুর সময়ে শেখ আবদুল্লাহ স্কুল মাস্টার ছিলেন। আন্দোলন দমাতে তাকে গ্রামে বদলি করা হয়। আবদুল্লাহ তখন খনকায় গিয়ে চাকরি ছাড়ার ঘোষণা দেন। বিপরীতক্রমে, ইউসুফ শাহকে মহারাজার পক্ষ থেকে ৬০০ রুপি মূল্যের একখানা ওয়াজিফা উপহার দেওয়া হয়। মীরওয়াইজ মহারাজার কৌশল বুঝতে না পেরে তা গ্রহণ করেন। আবদুল্লাহও এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে মীরওয়াজের বিপরীতে নিজেই জননেতা হয়ে ওঠেন শেখ আবদুল্লাহ তখন জামে মসজিদের বিপরীতে তরিকতপন্থী খানকাহ-ই-মওলায় আশ্রয় পেয়েছিলেন। খানকাহ-ই-মওলায় শেখ আবদুল্লাহ সূরা আর রাহমান তেলাওয়াত করতেন। আর মহারাজার বিরুদ্ধে বক্তৃতা করতেন। অন্যদিকে জামে মসজিদে ইউসুফ শাহ দিতেন ইসলামী বয়ান। খানকাহ-ই-মওলা ছিল কিছুটা সুফি ঘরানার বা তরিকতপন্থী। পরে অবশ্য শেখ আবদুল্লাহ হজরতবালেও তার রাজনৈতিক কার্যক্রমের বিস্তার ঘটান। কিন্তু জামে মসজিদে আবদুল্লাহ ও তার ন্যাশনাল কনফারেন্স প্রভাব সৃষ্টি করতে পারেনি। মৌলবি ইউসুফ শাহ কাশ্মীরে জিন্নাহকে সমর্থন করেছিলেন। ১৯৪৪ সালে জিন্নাহকে কাশ্মীরে আমন্ত্রণ করেছিলেন তিনি। উদ্দেশ্য ছিল আবদুল্লাহ ও চৌধুরী গোলাম আব্বাসের মধ্যে সমঝোতা করানো। কিন্তু, সমঝোতা হয়নি। জম্মুর নেতা চৌধুরী গোলাম আব্বাস দেশভাগের আগে মুসলিম কনফারেন্স পুনর্গঠন করেছিলেন ইউসুফ শাহের সহযোগিতায়। পরে, ১৯৮৭ সালে চৌধুরী গোলাম আব্বাস, মীরওয়াইজ ইউসুফ শাহ, সাংবাদিক পন্ডিত প্রেমনাথ বাজাজসহ অনেকেই কাশ্মীর থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। ফলে, কাশ্মীরের একক ক্ষমতা রয়ে যায় আবদুল্লাহর হাতেই। আর অন্যরা পাকিস্তান শাসিত অংশে চলে যান। পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী হন চৌধুরী গোলাম আব্বাস। মৌলবি ইউসুফ শাহ চলে গেলে তার এক ভাতিজা আতিকউল্লাহ শাহ জামে মসজিদে নায়েব-এ মীরওয়াইজ হিসেবে কাজ চালিয়ে যান। তিনি মারা যান ১৯৬২ সালে।
পরে মীরওয়াইজ হল মৌলবি মোহাম্মদ ফারুক। তিনিও পারিবারিক ধারা অব্যাহত রাখেন। ১৯৬৩ সালে হযরতবালের মুঈ-মুকাদ্দাস চুরির প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু হয়। তখন আওয়ামী অ্যাকশন কমিটি গঠিত হয়। তার নেতা ছিলেন মীরওয়াইজ মোহাম্মদ ফারুক। ওই সময়ে এই নতুন মীরওয়াইজকে মোকাবিলার জন্যই নেহরু শেখ আবদুল্লাহকে জেলখানা থেকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন বলে কথিত আছে। তখন কাশ্মীরের রাজনীতি আবদুল্লাহকেন্দ্রিক একমেরু অবস্থা থেকে আবারও দ্বিমেরু অবস্থায় (মীরওয়াইজ বনাম আবদুল্লাহ) ফেরত যান। কিন্তু মীরওয়াইজ সেই অবস্থা ধরে রাখতে পারেননি। ওই ষাটের দশকেই জামায়াতে ইসলামী নানা সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শক্ত অবস্থান সৃষ্টি করে। ফলে, আবদুল্লাহর জন্য মীরওয়াইজ ঐতিহ্যবাহী প্রতিপক্ষ হলেও মৌলিক প্রতিপক্ষ হয়ে পড়ে জামায়াত এবং তার রাজনৈতিক শাখার নেতা সৈয়দ আলী শাহ গিলানী।
মীরওয়াইজ পরিবারের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর স্থায়ী সমঝোতা হয়নি। কারণ, জামায়াত কখনও মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে বংশপরস্পরা সমর্থন করেনি। তবে, কাশ্মীরের রাজনীতিতে ভারতবিরোধী জনমত তৈরিতে এবং শেখ আবদুল্লাহর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে মীরওয়াইজ আর জামায়াতের মধ্যে ঐক্য হয়েছে বারবার। ১৯৮৭ সালের নির্বাচনেও মীরওয়াইজের আওয়ামী অ্যাকশন কমিটি জামায়াতের নেতৃত্বে ইউনাইটেড মুসলিম ফ্রণ্টকে (এমইউএফ) সমর্থন করে। পরে সশস্ত্র সংগ্রামের দিকে যখন কাশ্মীরি তরুণেরা ঝুঁকে পড়ে তখন এই মৌলবি পরিবারটি ছিল দ্বিধান্বিত। মীরওয়াইজ ফারুক সে অবস্থায় রিমোটকন্ট্রোলড রাজনীতিকের মতোই দ্বিধান্বিত অবস্থান নেন। ১৯৯০ সালে মোহাম্মদ ফারুক নিহত হন। তখন তার ছেলে ওমর ফারুক আসীন হন মীরওয়াইজ পদে।
২০০০ সালের পর কাশ্মীরে সশস্ত্র আন্দোলন স্তিমিত হয়। অলপার্টি হুরিয়াত কনফারেন্স নামে স্বাধীনতার দাবিদার প্রায় ৩৩টি দল একসঙ্গে হয়। সৈয়দ আলী গিলানী তার নেতা হন। মীরওয়াইজ ওমর ফারুকের নেতৃত্বে হুরিয়াতের একাংশ এখন হুরিয়াত (এম) বলে পরিচিত। তিনি এখনও কাশ্মীরের স্বাধীনতাপন্থী রাজনীতিকদের মধ্যে প্রভাবশালী। স্মার্ট এই মৌলবির ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে গোটা মুসলিম বিশ্বে। এখনও জুমা ও ঈদে তিনি তেজস্বী বয়ান করেন জামে মসজিদে। মাঝে মধ্যেই নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে সেখানে অংশ নিতে আরোপ করা হয় বিধিনিষেধ। প্রতিবার ঈদের নামাজের পর জামে মসজিদ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় মুসল্লিদের। সৈয়দ আলী গিলানীর নেতৃত্বে অপর অংশ হুরিয়াত (জি) নামে পরিচিত। এই গিলানী অংশই জনপ্রিয়তা ও প্রভাবের দিক থেকে শীর্ষস্থানীয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।