বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও’র গাড়ি ভাঙচুর আটক ২৫
মাদারীপুর জেলার শিবচরের কুতুবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেনের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়দের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে শিবচর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিবচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের গাড়ি ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধরা।
সোমবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে বিক্ষোভ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। পরে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এলাকায় র্যাব, পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গতকাল সকালে ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি কাজী জিহাদুল কবির এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা নেয়া, প্রবেশপত্র ও সনদ বিতরণের সময় টাকা নেয়া, নিয়োগে দুর্নীতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবি জানায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এর আগে শনিবার সকালে বিদ্যালয়ে বিক্ষোভ-মানববন্ধন করে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করে শিক্ষার্থীরা। ওই সময় বিষয়টি দেখার আশ্বাস দেয় উপজেলা প্রশাসন। বিষয়টি নিয়ে কোন সুরাহা না হওয়ায় সোমবার বিকেলে আবার আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় জনগণ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বিকেলে কুতুবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ নিয়ে আলোচনায় বসেন শিবচর উপজেলা চেয়ারম্যান সামসুদ্দিন খান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামানসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা। এ সময় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করে দিলে প্রতিবাদ জানায় বর্তমান শিক্ষার্থী, সাবেক শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও বহিরাগতরা। শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে সেøাগান দেয়।
পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় ওসি আবুল কালাম আজাদকে ফোনে ঘটনাস্থলে আসতে বলেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন ওসি। কিন্তু বিক্ষুব্ধরা তাৎক্ষণিকভাবে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে সেøাগান দেয় ও বৈঠক রুমে দফায় দফায় হামলা চালায়। এ সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করলে পুলিশ পিছু হটে। উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধরা। পরিস্থিতির অবনতি দেখে ইউপি চেয়ারম্যান আতিক মাদবর তার লোকজন নিয়ে বিক্ষুব্ধদের ধাওয়া করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এরপর পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে। এ সময় বিদ্যালয়ের ৪ শিক্ষার্থী আহত হয়। রাতে মাদারীপুর পুলিশ লাইন থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গত ৩ দিন ধরে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের অপসারণ দাবি করে আসছিল। সোমবার বিকেলে উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা মাধ্যমিক অফিসারকে নিয়ে এলাকায় যাই। সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে সমঝোতা করার চেষ্টা করি। কিন্তু শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী প্রশাসনের আশ্বাস মেনে নেয়নি। পরে রাতে আমাদেরকে অবরুদ্ধ করার ঘোষণা দিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠি চার্জসহ ফাঁকা গুলি ছুড়ে।
উপজেলা চেয়ারম্যান সামসুদ্দিন খান তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা যখন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলাম না। তখন ওসিকে ফোন দিলেও সে দেড়/দু’ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে যায় এবং তার পুলিশিং কার্যক্রমও ছিল নিম্নমানের। যখন দুর্বৃত্তরা ইট ছুড়ে তখন ওসিসহ পুলিশ নিজেরাই সরে যায়। এ সুযোগে ওরা সরকারি দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে চালককে আহত করে। শেষে পুলিশ ফাকা গুলি ছোড়ে। এদিকে গতকাল সকালে ঘটনাস্থলে তদন্তে আসেন ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি জিহাদুল কবিরসহ শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তারা। পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল ছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তি, সাংবাদিকসহ অনেকের কাছ থেকে ঘটনার বর্ননা নেন। দুপুরে জেলা প্রশাসকের গঠিত ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লুৎফুন নাহার নাজীমের নেতৃত্বে কার্যক্রম শুরু করে।
ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি জিহাদুল কবির বলেন, গুরত্ব সহকারে ঘটনাটির তদন্ত চলছে। ওসিসহ পুলিশ মোতায়েন থাকার পরেও কেন সরকারি যানবাহনের ক্ষয়ক্ষতি হলো তা আমরা খতিয়ে দেখছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।