পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশ অর্থনৈতিকভাবে মধ্য আয়ের দেশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষের আয় এবং ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। সরকারের পক্ষ থেকে হরহামেশা এমন দাবী করা হচ্ছে। দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, প্রতিবছরই বাড়ছে জাতীয় উন্নয়ন বাজেটের আকার। কিন্তু সে সব প্রবৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ছে না রাজস্ব আহরণের হার। তাহলে বাজেট ঘাটতি ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের খরচ আসছে কোথা থেকে? এ প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই এসে যায়। গত অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। বাজেটের ঘাটতি পুরণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি এবং ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে সরকার। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে গত অর্থবছরে সর্বোচ্চ সাড়ে ২৬ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করেছে সরকার। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণের ফলে বেসরকারী বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। সামগ্রিক অর্থনীতির উপর এর বিরূপ প্রভাব অব্যাহত রয়েছে। এহেন বাস্তবতায় রাজস্ব আয় বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে গত কয়েক বছর ধরেই আয়কর বাড়াতে সরকার এবং এনবিআরের নানামুখী উদ্যোগ দেখা গেলেও বাস্তবে এর তেমন প্রতিফলন দেখা যায়নি।
গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে আয়কর দেন মাত্র ১ শতাংশ মানুষ। সাম্প্রতিক হিসেবে দেশের প্রায় ৪ কোটি মানুষকে মধ্য আয়ের সারিতে অন্তভর্’ক্ত হলেও এদের মধ্যে আয়কর শনাক্তকরণ নম্বর(টিআইএন) গ্রহণ করেছেন মাত্র ৪৬ লাখ। তবে এদের অর্ধেকের বেশি আয়কর দেন না। এহেন বাস্তবতায় আয়কর প্রদানে সক্ষম ব্যক্তিদের কাছ থেকে আয়কর আদায় ও আয়কর রিটার্ন দাখিলে বাধ্য করার উপায় নিয়ে ভাবছে এনবিআর। দেশ অর্থনৈতিকভাবে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, সামাজিক নিরাপত্তাসহ উন্নয়ন বাজেটের আকার বাড়ছে এমনতাবস্থায় আয়কর প্রদানে সক্ষম ব্যক্তিরা আয়কর প্রদানে উৎসাহী বা স্বচ্ছ না হলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন-অগ্রগতি ব্যহত হতে বাধ্য। প্রকাশিত তথ্য অনুসারে দক্ষিণ এশিয়ায় জিডিপি অনুপাতে রাজস্ব আদায়ের হার সবচেয়ে কম বাংলাদেশের। যেখানে নেপালের রাজস্ব আদায়ের হার ২৩ শতাংশ, বাংলাদেশের তা সাড়ে ৮ শতাংশ। মধ্য আয়ের দেশের দাবীদার বাংলাদেশের জন্য এটা বেমানান ও অগ্রহণযোগ্য। আগামী দুই বছরের মধ্যে সরকার জিডিপি ও রাজস্ব আয়ের অনুপাত ১০-১২ শতাংশে উন্নীত করার পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বলে জানা যায়। তবে প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায়ে এনবিআরের ব্যর্থতা ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক বাস্তবতার স্বচ্ছতাও পর্যালোচনার দাবী রাখে।
চলমান অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেই ব্যাংক থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার, যা সামগ্রিক লক্ষ্যমাত্রার ৪৫ ভাগ। পরবর্তি তিনমাসে এ ধারা অব্যাহত থাকলে ইতিমধ্যেই ঋণগ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করার কথা। এভাবেই বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। আর বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ও ঋণপ্রবাহ ব্যাহত হলে সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসৃজন ও উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়তে বাধ্য। আয়কর ও ভ্যাট প্রদানে সক্ষম অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যেমন আয়কর ও ভ্যাট দিতে গড়িমসি এবং ক্ষেত্র বিশেষ ফাঁকিবাজি করছে, একইভাবে আয়কর প্রদানে উদ্বুদ্ধকরণ, সহজিকরণ ও মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা ও গাফিলতিও অস্বীকার করার উপায় নেই। দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক চালচিত্র তথা বিনিয়োগ, আমদানি-রফতানি, মূল্যস্ফীতি ও সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতার কথাও বিবেচনায় রাখতে হবে। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে ভ্যাট আদায়ে স্বচ্ছতা ও মনিটরিং নিশ্চিত করতে অর্থবাজেটের শুরুতেই ইলেক্ট্রনিক ফিসকেল ডিভাইজ(ইএফডি) সংযোজনের কথা থাকলেও গত ৫ মাসেও তা সম্ভব হয়নি। লক্ষাধিক ই্এফডিে মেশিন সংযোজনের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে তিন মাস আগে ১৫ দিনের মধ্যে সরবরাহের শর্ত দিয়ে ১০ হাজার ইএফডি মেশিন ক্রয়ের আদেশ দেয়ার কথা জানা গেলেও এখনো এসব মেশিন সংযোজন না হওয়ার দায় এনবিআরকেই বহন করতে হবে। আয়কর প্রদান একটি সমন্বিত উদ্যোগের বিষয়। প্রত্যাশিত আয়কর আদায় নিশ্চিত করতে হলে প্রথমত: জনগনের মানসিকতার ইতিবাচক পরিবর্তন প্রয়োজন। সেই সাথে দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। জনগণের মধ্যে হতাশা ও বঞ্চনাবোধের জন্ম হলে তারা স্বাভাবিকভাবেই আয়কর প্রদানে নিরুৎসাহিত বোধ করবে। ব্যবসায় বাণিজ্য ও বিনিয়োগে মন্দা এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা দূর করার মধ্য দিয়েই কেবল আয়কর আদায়ের প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত করা সম্ভব। সেই সাথে আয়কর দাতাদের হয়রানি ও বিড়ম্বনা দূর করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।