পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
এ বিষয়ে কাশ্মীরি লেখক (তিনি ইসলামপন্থী বলে আমার মনে হয়েছে) অধ্যাপক শেখ সওকত হোসেনের বক্তব্য এখানে তুলে ধরা যায়। তিনি এক নিবন্ধে লিখেছেন, ‘বিশ শতকের প্রথমার্ধে শেখ মুহাম্মদ আবদুল্লাহ ছিলেন অত্যাচারী রাজার শোষণের বিরুদ্ধে কাশ্মীরের জনগণের সংগ্রামের প্রতিনিধি। আর শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ্বে, সাংস্কৃতিক আগ্রসন ও গণতান্ত্রিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনের প্রতিনিধিত্ব করেছে জামায়াতে ইসলামীর মতো সংগঠন। অর্থাৎ, ভারতীয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে কাশ্মীরি মুসলমানদের প্রতিরোধে জামায়াতে ইসলামীর শক্ত অবদান রয়েছে। এই জামায়াতে ইসলামী কাশ্মীরে কিভাবে প্রতিষ্ঠা ও বিকশিত হলো তাও এখানে সংক্ষেপে বর্ণনা দেওয়া জরুরি। ‘বিশুদ্ধবাদী’ ইসলামী এই দলটিকে ১৯৪০-এর দশকে কাশ্মীরে প্রতিষ্ঠা করেন মাওলানা সা’দ উদ্দিন নামে এক স্কুল মাস্টার। সর্বত্রই দলটি স্থানীয় জনপ্রিয় সুফি সংস্কৃতির বিরোধী। ফলে মাওলানা সা’দ উদ্দিনের জনসভাগুলোতে সাধারণত লোকজন আসত না। এসব সামাজিক বাধা এড়িয়ে তিনি ৩/৪ জন লোকের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতেন। এভাবেই, জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীরের একটি শক্ত অবস্থান সৃষ্টি হয় দলটির। মার্কসিস্ট গবেষক ড. সাজাদ পাডের বলেছিলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী হলো একটি ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক (Socio-Politico-Religious) সংগঠন।’ ১৯৮৪ সালে এই মাওলানা দল থেকে অব্যাহতি নেন। অত্যন্ত ঠান্ডা মাথার ওই মাওলানার অব্যাহতির পরই দলটি স্বেচ্ছায় অথবা পরিস্থিতির চাপে ভারত বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এবং যখনই সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হয় দলটির কর্মীরা সেই পক্ষে ঝুঁকে পড়ে। এই বক্তব্য থেকেও স্পষ্ট, যদিও সশস্ত্র দলে যোগ দেওয়ার বিষয়ে কর্মীরা স্রোতের সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। কিন্তুু, ভারতের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে দলটির অগ্রগণ্য ভূমিকা নি:সন্দেহ।
কেবল জামায়াতের কথা বললেই ইসলামী রাজনীতির প্রসঙ্গ শেষ হয় না। কারণ, কাশ্মীরের রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার করেছে এমন গোষ্ঠী শুধু জামায়াতই নয়। বলতে গেলে সকলেই ধর্মকে মিশিয়েছেন কাশ্মীরে। ‘অসাম্প্রদায়িক’ শেখ আবদুল্লাহও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। শেখ আবদুল্লাহ ও তার দল ন্যাশনাল কনফারেন্স সম্পর্কে ৯০-এর দশকের জেঅ্যান্ডকে-রাজ্যের গভর্নর জাগমোহনের উক্তিটি এখানে উল্লেখযোগ্য। তিনি লিখেছেন, ‘এমনকি শেখ আবদুল্লাহ ও তার দলকে জামায়াতে ইসলামীর জমজ বোন বলা হয়ে থাকে। কাশ্মীরের ইসলামীকরণের ক্ষেত্রে স্পষ্ট হতে আরও একটি পরিবার সম্পর্কে ধারণা নেওয়া জরুরি। তাহলো, মৌলবি ইউসুফ শাহ পরিবার। ইউসুফ শাহ ছিলেন কাশ্মীরের ঐতিব্যবাহী জামে মসজিদের খতিব, যাকে কাশ্মীরি ভাষায় বলা হয় মীরওয়াইজ বা প্রধান বক্তা। কয়েকশ বছর ধরেই ওই পরিবার কাশ্মীরের প্রধান ধর্মপ্রচারকের আসনে আসীন। একে অনেকে তুলনা করেছেন ‘দারাই লামা’র ইসলামী সংস্করণ হিসেবে। আর মীরওয়াইজের বয়ানের কেন্দ্র যে জামে মসজিদটি, সেটিও প্যাগোডা আকৃতির কারণে অনেকেই তাকে কাশ্মীরিদের বৌদ্ধ সংস্কৃতির লিগ্যাসি বলে মনে করেন।
বহু বছরের পুরনো হলেও মীরওয়াইজ পদের এই বিশেষ গুরুত্ব কাশ্মীরে প্রতিষ্ঠা পায় আফগান শাসক আহমদ শাহ আবদালীর সময়ে, যিনি দিল্লির আলেম হজরত শাহ ওয়ালি উল্লাহ’র বিশুদ্ধবাদী ইসলামী চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। ফলে, কাশ্মীরের জামে মসজিদে প্রতিষ্ঠিত মীরওয়াইজ পরিবার মূলত শরিয়তভিত্তিক ইসলামী প্রচারের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবেই পরিচিত। বিখ্যাত আরব সাংবাদিক মুহাম্মদ আসাদ কাশ্মীরে এসে এই ইউসুফ শাহের আতিথেয়তা গ্রহণ করেছিলেন ১৯৩৪ সালে। হাদিস গ্রন্থ বুখারির ইংরেজি অনুবাদক মুহাম্মদ আসাদ। তিনি সেই অনুবাদের কাজও করেছিলেন কাশ্মীরে বসে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।