পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
এই রাজনৈতিক দলটি এখন নির্বাচনী রাজনৈতিক কর্মকান্ডে নেই। কোনো নির্বাচনে তাদের দলের মূল-সদস্যরা (রুকন) ভোট দেন না। তাদের রুকনের সংখ্যা হাজার পাঁচেক। আর অসংখ্য সাধারণ কর্মী ও সমর্থক রয়েছে। তারা নানা সামাজিক কর্মকান্ডে অংশ নেন। ১৯৮৮ সালে নিষিদ্ধ হওয়ার পর তারা ফালাহ-এ আম নামে এক ট্রাস্ট গঠন করে বিভিন্ন স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা শুরু করে। তাছাড়া, নানাবিধ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চালাচ্ছে ‘ইসলামী-সামাজিক’ কার্যক্রম। সৈয়দ আলী শাহ গিলানী ‘আজাদিপন্থী বা সেপারেটিস্ট’ দল তেহরিক-ই-হুরিয়াতের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এখনও কাশ্মীরের একটা বড় সংখ্যক স্বাধীনতাকামী জনসংখ্যা মনে করেন, জামায়াতে ইসলামী জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীরের লক্ষ লক্ষ মানুষের আজাদি আন্দোলনের রক্ত দিয়ে হাত ধুয়ে ঘরে উঠেছে। অধ্যাপক শেক সওকত হুসাইন লিখেছেন, জামায়াতের মধ্যে একটা প্রবণতা লক্ষণীয়, যারা জামায়াতকে ‘রেডক্রসের’ ইসলামী সংস্করণ হিসেবে চালিয়ে নিতে চায়। তারা বিপন্নদের সেবা করবে। কিন্তু, নিজেরা সংঘাতে জড়াবে না। কায়েমী স্বার্থের সঙ্গে তারা কোনো ঝামেলায় জড়াতে চায় না। এই প্রবণতাকে ইতিমধ্যে জীবন ও সম্পদ খুইয়ে সর্বহারা কর্মীদের সঙ্গে প্রতারণা বলেও মনে হয়। অনেকে মনে করেন, ভারতের বিভিন্ন সংস্থার নির্যাতন ও আক্রমণের কাছে জামায়াতে ইসলামী অসহায় ছিল। তাই তারা পরিস্থিতির শিকার। আবার অনেকেই মনে করেন, ১৯৯০-এর দশকে সশস্ত্র সংগ্রামে কর্মী ও রুকনদের পাঠিয়ে দিয়েই জামায়াতে ইসলামী ভুল করেছে। কারণ, ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে আজাদির জন্য লড়তে কী পরিমাণ শক্তি প্রয়োজন, আন্তর্জাতিকভাবে কারা তাদের কোনো ধরনের সহায়তা দিচ্ছে, কে প্রকাশ্যে তাদের পক্ষে কথা বলবে এগুলোর হিসাব না করেই জামায়াত সশস্ত্র সংগ্রামে নিয়োজিত করেছে অসংখ্য কর্র্মীকে। অন্যান্য স্বাধীনতাকামী গ্রুপ যেমন জম্মু কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রণ্টের জেকেএলএফ) আদর্শ হচ্ছে জাতীয়তাবাদ। কিন্তু জামায়াতের আদর্শ হচ্ছে ইসলাম। স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র বড় এই দুটি গ্রæপের আদর্শিক ভিন্নতা ও তাদের স্বাধীনতা প্রাপ্তির জন্য বাধা হয়ে কাজ করেছে বলে অনেকে মনে করেন।
মজার বিষয় হলো, ১৯৪৭ সাল থেকে উপমহাদেশের সব জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে জামায়াতের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ এবং স্রোতের বিপরীতে। জামায়াত সচারাচর এটা অস্বীকার করেছে। আবার কখনো স্বীকার করেছে। ১৯৪৭’র দেশ বিভাগের মাধ্যমে মুসলমানদের আলাদা ভূখন্ড পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে মাওলানা মওদুদীর প্রশ্ন ছিল, নতুন পাকিস্তান কী ইসলামী দেশ হবে? তাহলে নেতৃত্বকে ইসলামী হতে হবে। জামায়াতে ইসলামী সব সময় চেয়েছে পাকিস্তানের নেতৃত্ব ও ব্যবস্থাকে ইসলামীকরণ করতে। সেখানে কখনও সফল হয়েছে, কখনও হয়নি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ প্রশ্নেও তাদের অবস্থান ছিল একই। তাদের প্রত্যামিথ ইসলামী পাকিস্তান যদিও পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত ছিল না, তবুও তারা পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ গড়ার বিরোধিতা করেছে। পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে দলটি। স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির পরও তারা অব্যাহত চেষ্টা করেছে বাংলাদেশকে ইসলামী বাংলাদেশে পরিণত করতে। জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীরের স্বাধীনতার প্রশ্নেও জামায়াতের অবস্থান একই দেখা গেছে। তারা সবসময়ই বলতে চেয়েছে, ইসলামের ভিত্তিতে চলবে জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীরের সমাজ। আর, স্বাধীনতাকামী জাতীয়তাবাদী অন্যান্য অনেকেই বলেছে, ইসলামের সঙ্গে স্বাধীন জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীরের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। এ কারণে হিজবুল মুজাহিদীন অনেক জাতীয়তাবাদী মুসলিম ও হিন্দু নেতাকে হত্যা করেছে বলেও জানা যায়। আবার বিপরীত ঘটনাও ঘটেছে। অসংখ্য। সেক্যুলার জেকেএলএফ-ই হিন্দুদের হত্যা শুরু করেছিল। জাতীয়তাবাদীরা সবসময়ই বলেছেন, গিলগিত, বালতিস্তান, লাদাখ, জম্মু এবং কাশ্মীর ভ্যালি নিয়ে মূল জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীরের একটি স্বাধীন জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠার কথা। সেখানে হিন্দু ও মুসলিম, বৌদ্ধ সবই থাকবে। জামায়াতের অবস্থান ছিল ইসলাম। জামায়াতের এক তরুণ নেতার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল ২০১৫ সালের মে মাসে। একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমি আমার পরিচয় দিয়েছিলাম। জানতে চেয়েছিলাম তাদের দলের অবস্থান কাশ্মীর প্রেক্ষিতে। তিনি জানিয়েছিলেন, ‘হিজবুল মুজাহিদীনকে জামায়াত সমর্থন করেছিল। তবে, এটা সুুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে না। হিজবুল মুজাহিদীনের প্রতিষ্ঠাতা সাঈদ সালাহউদ্দিন (আসল নাম সাইয়েদ ইউসুফ শাহ) এর সঙ্গে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কিছু নেতার সুসম্পর্ক ছিল (পরে জানতে পেরেছি তিনি জামায়াতের একটি জেলা পর্যায়ের নেতা ছিলেন) সেই সম্পর্কের সুবাদে হিজবুল নেতা প্রেস কনফারেন্সে দাবি করেন, আমরা জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতায় সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করছি। ইতোমধ্যে কাশ্মীরের যুবকদের মধ্যে বন্দুকের নলের প্রতি একধরনের বিশ্বাস তৈরি হয়েছিল। সুতরাং জামায়াত সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি হচ্ছে, দলটির কার্যক্রম সবসময়ই টপ-ডাউন ধরনের। উপরের সিদ্ধান্ত ছাড়া এর কর্মীরা কখনোই সিদ্ধান্ত নেয় না। সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার মতো একটা চরম সিদ্ধান্ত এ দলের প্রশিক্ষিত কর্মীরা নিজেরাই নিয়ে ফেলেছে এটা মানতে আমার দ্বিধা আছে। যদি তা হয়ই, তাহলে এটা স্পষ্ট যে, নব্বইয়ের দশকে জামায়াতের সাংগঠনিক কাঠামো দুর্বল ছিল। জামায়াতের ওই নেতার বক্তব্য অনুসারে, তখন পরিস্থিতি এমন ছিল যে, মনে হচ্ছিল, দ্রæতই কাশ্মীর স্বাধীন হয়ে যাচ্ছে। সরকার বলতে কিছু তখন ছিল না। চিফ মিনিস্টার ফারুক আবদুল্লাহ তখন দায়িত্ব ছেড়ে ‘পালিয়ে’ গিয়েছিলেন বলে কথিত আছে। কিন্তু, দ্রæতই ভারত সরকার পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। তখন আর কিছুই করার ছিল না। এ প্রসঙ্গে জাস্টিস জিএন গওহরের মন্তব্য খুবই মানানসই। তিনি লিখেছেন,
The Jama’t leadership was against armed revolt but, as the gun attained the seal of popularity, their ‘elected’ legislatorsl (in total five) resigned and associated themselves with this revolt, Within a month militancy swayed the public and the militant acquired the halo of the savior of the nation. A dominant section of Jamat-e-Islami felt attracted to the popularity of the gun and so a militant outfit, under the name of J&K Hizbul Mujahideen, took birth from the womb of JKLF. The state Jamat declared it as its military wing.
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।