পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
জনসংখ্যার সিংহভাগ মুসলিম। সমাজের নানা কর্মকান্ডে ইসলামের উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো। বিশেষত জনবহুল কাশ্মীর ভ্যালি ও জম্মুর মুসলিম অধ্যুষিত ৪/৫টি জেলায়। স্বভাবতই, সশস্ত্র ‘আজাদি সংগ্রামের’র সঙ্গে ইসলাম ও ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। সেক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীই আলোচনা পর্যালোচনার কেন্দ্র হওয়ার কথা। কারণ, এই দলটি দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশেই ইসলামী রাজনীতির প্রতিনিধিত্বের দাবিদার। বিশ্বব্যাপী রয়েছে তাদের আদর্শ ও কর্মসূচির প্রসার।
কাশ্মীরে স্বাধীনতা সংগ্রামে এই দলটির ভূমিকা নিয়ে জানার চেষ্টা ছিল সবিস্তারে। যা জানা গেছে তা হলো, দলটি ১৯৭২ সালে থেকে নিবৃাচনমুখী ছিল। প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে পাঁচটি আসনে জয় পেয়েছিল। ১৯৭৭-এর নির্বাচনে পেয়েছিল একটি আসন। ১৯৮৭ সালের নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিল ‘ইউনাইটেড মুসলিম ফ্রণ্টে’র ব্যানারে। সৈয়দ আলী শাহ গিলানীসহ ওই ফ্রণ্ট পাঁচটি আসনও পেয়েছিল। তবে, ১৯৮৭’র নির্বাচনে ভোট কারচুপির ঘটনায় নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি আস্থঅ হারিয়ে অন্য অনেকের মতো জামায়াতও বেছে নিয়েছিল অস্ত্রের পথ। তারপর থেকে তারা ভোটমুখী রাজনীতি থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়। ভারতের কাছে তারা তখন ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ বা ‘পাকিস্তানপন্থী’ দল হিসেবে চিহ্নিত হয়। ১৯৮৮ সালে নিষিদ্ধ ঘেষিত হয় দলটি। নির্বাচিত এমপিরা সৈয়দ আলী শাহ গিলানীর নেতৃত্বে পদত্যাগ করেন সংসদ থেকে। তারপর তৈরি করা হয় অল পার্টি হুরিয়াত কনফারেন্সে (৩৩টি দলের মিলিত স্বাধীনতাকামী মোর্চা যা এখন কয়েক ভাগে বিভক্ত)। হিজবুল মুজাহিদীন নামে এক সশস্ত্র সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকতা শুরু করে দলটি। ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে ‘হিজবুল মুজাহিদীন’ গ্রুপটি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ, দুর্দমনীয়। এই গ্রæপটিতে ছিল জামায়াতে ইসলামীর অসংখ্য ক্যাডার। প্রায় প্রতিষ্ঠিত ছিল যে, এটি জামায়াতে ইসলামীর সশস্ত্র স্বাধীনতাকামী গ্রুপ। ভারতীয় বিভিন্ন সংস্থার লোকেরা এটা উপলব্ধি করেছিল যে, জামায়াতে ইসলামীর ইন্ধন নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে এই গ্রুপ দমন করা কঠিন। জামায়াতের দাবি, ভারতীয় সংস্থার মূল টার্গেট ছিল জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় ও দ্বিতীয় সারির নেতারা। ৯০ ও শূন্য দশকের শুরুর দিকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে জামায়াতে ইসলামীর অনেক নেতা মারা যায়। স্বাধীনতাকামীদের মধ্যেও একটি গ্রুপ জামায়াত নেতাদের টার্গেট করেছিল বলে জামায়াতের দাবি। ওই গ্রুপটি স্থানীয়ভাবে ‘ইখওয়ানি’ হিসেবে পরিচিত।
২০০২ সালে ‘ভারতীয় চাপে’ নতিস্বীকার করে জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতের তৎকালীন আমীর গোলাম মোহাম্মদ বাট সংবাদ সম্মেলন করে জানান, হিজবুল মুজাহিদীনের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না, নেই। সৈয়দ আলী শাহ গিলানী তখন জামায়াতে ইসলামীর ‘রাজনৈতিক শাখা’র প্রধান। তিনি ছিলেন জেলখানায়। জামায়াতের আমেিরর এই ঘোষণার পর সৈয়দ গিলানী তা মেনে নেননি। তার মতে, আল্লাহর কথা মানুষকে বলার জন্য আগে আমাদের ভূ-খন্ড স্বাধীন করা জরুরি। জামায়াতের বক্তব্য ছিল, আজাদি আসুক বা না আসুক, আল্লাহর কথা প্রচার করতে হবে। যুদ্ধ, সংঘাত এড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজ করাই জামায়াতের অবস্থান। তবে, এখনও তারা নির্বাচনে অংশ নেন না। এক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে ২০১৫ সালে জামায়াত আমীর মো. আবদুল্লাহ ওয়ানি বলেছিলেন, জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর ভারতের অধীনে না আমেরিকার অধীনে আছে সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। আফসাপা (আর্মড ফোর্স স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট) এখনও বিদ্যমান, যুবক ছেলেদের যখন-তখন ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে-এ অবস্থায় আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি না। অপর এক জামায়াত নেতা এই লেখককে বলেছিলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী মনে করে, জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর একটি বিরোধপূর্ণ এলাকা। পাকিস্তান, ভারত ও জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীরের প্রকৃত জনপ্রিয় নেতৃত্বের অংশগ্রহণে আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য সমাধান আশা করে দলটি। সমাধান হিসেবে তাদের দলের অবস্থান হচ্ছে, অবাধ-সুষ্ঠু গণভোট।’ আজাদি আন্দোলনে সশস্ত্র ভূমিকার প্রশ্নে ভিন্নমতের কারণে সৈয়দ আলী গিলানী জামায়াত থেকে বহিষ্কৃত হন। এছাড়া নানা কারণেই সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে একদিকে আজাদি আর অন্যদিকে শান্তিপূর্ণভাবে মানুষকে ইসলামের মৌলিক চর্চার দাওয়াত এই দুই মত আলাদা হয়ে গেল।
অন্যান্য দেশের মতো ওখানেও জামায়াতে ইসলামী একিট ক্যাডারভিত্তিক ধর্মীয় সংগঠন। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইডি গবেষক লিমন মাজীদ লিখেছেন, ‘জামায়াতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ক্যাডারভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। অনেকে মনে করেন, দলটির গণমুখী (Mass based) পার্টি হিসেবে কাজ শুরু করা উচিত। কিন্তু, গণমুখী দল হতে হলে ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্ব প্রয়োজন। একটা দল যখন ধারাবাহিকভাবে ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্ব খুঁজে পায় না তখন তা বংশীয় শাসনে পরিণত হয়। এটা দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ গণমুখী দলের বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে জামায়াত তার ক্যাডারভিত্তিক দলীয় ব্যবস্থার কারণে, ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বের চেয়ে শৃঙখলা এবং গণতান্ত্রিক চর্চাকে প্রধান্য দিয়েছে। ফলে, পীর সাহেবের হাতে প্রতিষ্ঠার পরও এটি বংশীয় সম্পত্তিতে পরিণত হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।