পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থানে এক প্রকার অচলাবস্থা বিরাজ করছে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান শ্রমবাজার সউদি আরব সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মালয়েশিয়ায় এক প্রকার অঘোষিত নিষেধাজ্ঞার শিকার হচ্ছে বাংলাদেশী কর্মীরা। মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে অভিবাসন ব্যয় কমিয়ে আনতে ইতিপূর্বে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়ার পরও চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের সমন্বিত ও উদ্যোগ ও কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় তা কোনো সুফল দেয়নি। বিশ্বের যে কোনো দেশের চেয়ে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর ব্যয় তুলনামূলক অনেক বেশি হলেও বাংলাদেশী কর্মীদের বেতন ও সুযোগ সুবিধা তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় নানা ধরনের দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন প্রবাসিরা। সেই সাথে হাজার হাজার অবৈধ অভিবাসির কারণে বৈধ অভিবাসিরাও নানা ধরণের বৈষম্য ও নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে সউদি আরবে বাংলাদেশী নারী শ্রমিকদের হত্যা-নির্যাতনসহ নানাবিধ বঞ্চনা ও মানবাধিকার হরণের প্রসঙ্গে দেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হলেও এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের ভ’মিকা ও কথাবার্তা তাদের চরম দায়িত্বহীনতা ও ব্যর্থতার চিত্রই প্রকাশ করে। প্রবাসে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক ও আইনগত সুরক্ষা এবং বাংলাদেশী কর্মীদের জানমালের হেফাজত করতে বাংলাদেশ দূতাবাস ও কনস্যুলেটে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের দায়হীন আচরণ ও ব্যর্থতার পাশাপাশি ঘুষ-দুর্নীতিতে নিমজ্জিত থাকার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ক্রমবর্ধমান সংকটের কারণে প্রবাসী কর্মসংস্থান ও প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক ধারা দেখা যাওয়ার পর বিচ্ছিন্নভাবে সরকারের কোনো উদ্যোগই কাজে আসেনি।
অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সীর মাত্রাতিরিক্ত মুনাফাবাজি, মিথ্যা তথ্য দিয়ে অবৈধ পন্থায় যৌক্তিক খরচের চেয়ে কয়েকগুন বেশি খরচে বিদেশ গমনের কারণে প্রবাসে বিপদে পড়ছে শ্রমিকরা। জমিজমা, সহায়সম্বল বিক্রি ও ধার-দেনা করে বিদেশ যাওয়ার পর নানাবিধ আইনগত জটিলতার শিকার হয়ে হাজার হাজার প্রবাসী ফেরারি আসামির মত পালিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। একশ্রেণীর নিয়োগদাতা এসব শ্রমিককে শ্রমের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত করছে এবং ক্রীতদাসের মত আচরণ করছে। লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশ যাওয়ার কারণে পারিবারিক ঋণের বোঝা নিয়ে দেশে ফেরার চেয়ে তারা ক্রীতদাসের মত শ্রম বিক্রি করে দেশে টাকা পাঠিয়ে পরিবারের চাহিদা পুরণ ও ঋণ পরিশোধের পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে। এর মধ্যে প্রতিদিনই বিদেশে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে খালি হাতে দেশে ফিরে আসছে প্রবাসী শ্রমিকরা। বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী বিভিন্ন দেশের কারাগার ও ডিটেনশন ক্যাম্পে অনিশ্চিত জীবন কাটাচ্ছেন। সউদি আরবের মত পূণ্যভূমিতে বাংলাদেশী নারী গৃহকর্মীদের নির্যাতিত হওয়ার অসংখ্য ঘটনা আমাদের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয় এবং সউদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের নিস্ক্রীয়তা ও ব্যর্থতার প্রমাণ।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী শ্রমিকদের মূল সমস্যাই হচ্ছে অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয়। এ সমস্যা মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষই প্রথম চিহ্নিত করে সমাধানের প্রক্রিয়া তুলে ধরেন। প্রথমে মাত্র ৩৭ হাজার টাকা খরচে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হলেও সরকার এবং রিক্রুটিং এজেন্সীর সমন্বয়হীনতা এবং অনাগ্রহের কারণে সে প্রক্রিয়া ব্যর্থ হয়ে যায়। রিক্রুটিং এজেন্সির চাপে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা নির্ধারণের পর তাও সফল হয়নি। একইভাবে সউদি আরেেব লোক পাঠানোর সর্বোচ্চ খরচ ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হলেও নির্ধারিত এই খরচের তিন-চারগুন বেশি নিয়ে সউদি আরব ও মালয়েশিয়ায় লোক পাঠাচ্ছে সিন্ডিকেটেড এজেন্সিগুলোর দালাল-কর্মকর্তারা। বিদেশে লাখ লাখ বাংলাদেশী নারী-পুরুষ শ্রমিকের মানবাধিকার হরণ ও শ্রম-দাসত্বের শিকার হওয়ার মূল প্রেক্ষাপটই হচ্ছে অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয়। অভিবাসন খরচ কমিয়ে আনতে পারলে অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে। অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় কমিয়ে এনে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষ শুধু যে ব্যর্থ হচ্ছে তাই নয়, এসব সমস্যা নিরসনের দায়িত্বে থাকা সরকারী কর্মকর্তারাও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সির সাথে অবৈধ লেনদেনে যুক্ত থাকার কারণেই দেশের রেমিটেন্স আয়ের সবচেয়ে স্থিতিশীল ও নির্ভরযোগ্য এই খাতটি এখন চরম হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। গত এক দশকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত আগ্রহ ও উদ্যোগে একাধিকবার মালয়েশিয়া ও সউদি আরবে জনশক্তি রফতানির প্রতিবন্ধকতা দূর হওয়ার সম্ভাবনা দেখা গেলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও দূতাবাস কর্মকর্তাদের ব্যর্থতার কারণে সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি। সউদি আরব ও মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষের সাথে রাষ্ট্রীয় ও কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে প্রবাসীদের সংকটের সমাধান অসম্ভব নয়। তবে অভিবাসন ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করে নির্ধারিত খরচে লাখ লাখ শ্রমিকের প্রবাসে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার মূল দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।