যেভাবে মাছ ভাজলে ভেঙে যাবে না
বাঙালির প্রতিদিনের খাবারে মাছ তো থাকেই। এটি সব খাবারের মধ্যে পুষ্টির অন্যতম উৎস। তাড়াহুড়ো করে
শাক সবজি গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা প্রদানকারী খাদ্য, সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা ও রোগ প্রতিরোধের জন্য খুবই উপকারী। শাক সবজিতে নানা রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতার উপাদান রয়েছে তা নিয়মিত পরিমানমত সেবন করে সুস্থ থাকা যায়। এমন অত্যন্ত উপকারি অতি-পরিচিত একটি সবজি হলো করলা। করলা এমন সব উপাদান রয়েছে যা মানুষের উচ্চরক্তচাপ ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হজম শক্তি বৃদ্ধি, চোখের নানা সমস্যা ও চর্মরোগ প্রতিরোধে বিরাট ভূমিকা পালন করে।
পরিচিতি ঃ করলা এক প্রকার লতানো বর্ষজীবী বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ এর ফলই হলো করলা। কাঁচা ফল গাঢ় সবুজ তিক্ত স্বাদের লম্বা আকৃতির। করলা সারা বছরই জন্মে, তবে শীত ও বর্ষাকালে প্রচুর জন্মে এবং পাওয়া যায়। করলা তেতো বলে অনেকের নিকট তেমন পছন্দনীয় নয়। তবে পুষ্টি গুণ ও রোগ নিরাময়ে খুবই কার্যকর সবজি।
রাসায়নিক উপাদান ঃ করলার পাতায় থাকে অম্লীয় রজন তিক্ত পদার্থ কিউকারবিটেন ট্রাইটার্পিনয়েড, গামা অ্যামাইনো বিউটারিক অ্যাসিড। এতে আরো থাকে অ্যামাইনো এসিড, ক্যারোটিন, থায়ামিন, নিয়াসিন, এসকরবিক এসিড, খনিজ পদার্থ ইত্যাদি। ফলে থাকে অনকগুলো স্টেয়য়েডাল যৌগ, স্যাপোনিন তিক্ত কিউকারবিটাসিন, গ্লাইকোসাইড, ফেনলিক যৌগ, মোমোর ডাইকোসাইডস কে ও এল। বীজে থাকে এক প্রকার বিরেচক স্থায়ী তৈল লাইনোলেইক, অলিক আলফা, ইলিও স্টেরিক এসিডের ইস্টার, বিটা সিটোস্টেরল গ্লুকোসাইড, এলবুমিন, গ্লোবিউলিন, গ্লুটোলিন ইত্যাদি। পাতা, ফল ও বীজে ভিটামিন এ,বি,সি পাওয়া যায়।
পুষ্টি উপাদান ঃ পুষ্টিবিদদের মতে প্রতি ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী করলায় পুষ্টি উপাদান হলো: খাদ্যশক্তি ২৮ কিলোক্যালরি, জলীয় অংশ ৯২.৪ গ্রাম, শর্করা ৪.৩ গ্রাম, আমিষ ২.৫ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.৮ গ্রাম, লৌহ ১.৮ গ্রাম, আঁশ ০.৮ গ্রাম, ভিটামিন সি ৯৬ মিলিগ্রাম, ভিটামনি এ ২১০ আই,ইউ, ভিটামনি বি-১ .০৭ মিলিগ্রাম, বি-২ ০.০৬ মিলিগ্রাম, নিকোটিনিক এসিড ০.৫ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩১ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১৫২ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৭০ মিলিগ্রাম। এতে আরো অন্যান্য খনিজ উপাদান আছে। তবে জাত ও মাটির গুণাগুনের উপর ভিত্তি করে পুষ্টি উপাদান কম বেশি হতে পারে।
উপকারিতা ঃ করলা অত্যন্ত উপকারি ও রোগ প্রতিরোধক সবজি। একে প্রাকৃতিক ঔষধও বলা যায়। নিয়মিত করলা খেলে শরীরে বয়সের চাপ পড়ে না। তারুণ্য ধরে রাখে। চামড়ার বলিরেখা পড়ে না। এটি ভাইরাস নাশকও শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে রক্ত পরিষ্কার করে। পানির সাথে করলার রস ও মধু মিশিয়ে খেলে হাপানী ব্রংকাইটিস ও গলার প্রদাহ নিরাময়ে যথেষ্ট সাহায্য হয়। করলাতে লুটিন এবং লাইকোপিন থাকে। এগুলো দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বার্ধক্য ঠেকিয়ে রাখে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। হজম কাজ তরান্বিত করে। করলা রক্তের চর্বি তথা ট্রাইগ্লিসারাইড কমায়, আবার ভালো কোলেস্টেরল এইচডিএল বাড়ায়। করলা জীবাণু নাশী বিশেষ করে ই-কোলাই জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে।
করলার অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপকারিতা তুলে ধরা হলো:
* ডায়াবেটিস রোগী কঁচি করলা টুকরো টুকরো করে ছায়ায় শুকিয়ে চুর্ণ করে দুই চামচ করে প্রতিদিন সকালে খেলে খুবই উপকার পাবেন। করলাতে আছে এডিনোসিন মনোফসফেট। অ্যাকটিভেটেড প্রোটিন ফাইনেজ নামক এনজাইমের মাত্রা বৃদ্ধির মাধ্যমে রক্ত থেকে শরীরের কোষগুলোতে চিনি বা সুগার গ্রহণ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এটি শরীরের কোষের গ্লুকোজের বিপাক ক্রিয়া বাড়ায় ফলে রক্তের চিনির পরিমাণ কমে যায়। তাই যারা ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন তারা নিয়মিত করলা খান। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখবে।
* যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন বা রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে যায় তারা প্রতিদিন করলা খান উপকার পাবেন। করলাতে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম রয়েছে যা রক্তচাপ কমাতে বিশেষ কাজ করে। তাছাড়া করলা হৃৎপিন্ড, মস্তিষ্কের ¯œায়ু গুলোকে সতেজ রাখে।
* প্রতিদিন সকালে করলার রসের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খালি পেটে খেলে রক্তের দূষিত উপাদান দূর হয়। সেই সাথে এলার্জিজনিত সমস্যা কমে যায়।
* যাদের পায়খানা কম হয় বা শক্ত পায়খানা হয় তারা প্রতিদিন করলা খান উপকার পাবেন। করলার ল্যাক্সেটিভ উপাদান মলকে নরম করে বের করে দেয়। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
* যারা কৃমিতে আক্রান্ত তারা করলার তেতো রস প্রতিদিন সকালে খান কৃমির উপদ্রব কমে আসবে।
* করলার ভিটামনি সি চামড়া সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে এবং চামড়ার নানা রোগ প্রতিরোধ করে এবং চুল সুন্দর ও উজ্জল রাখে।
* করলায় প্রচুর ভিটামিন এ থাকে যা আমাদের চোখের দৃষ্টি শক্তি প্রখর রাখে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে। রক্তের স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখে। দেহের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
* যারা রক্ত শূণ্যতায় ভুগছেন তারা করলা খান রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি পাবে।
* করলার ভিটামিন গর্ববর্তী মহিলার জন্য খুবই উপকারী। এসময় বিভিন্ন ভিটামিনের অভাবে ক্ষীন ও দর্বল হয়। করলা এ ভিটামিনের অভাব পূরণ করে। মায়ের বুকের দুধ তৈরি হতে ও সন্তান পরিপুষ্ঠ হতে সাহায্য করে।
* যারা বাত ব্যাথায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন ২/৩ চামচ করে করলার রস খান এবং করলা সবজি হিসাবে খান উপকার পাবেন।
* হঠাৎ কারো ডায়রিয়া হলে তাজা করলার পাতার রস ২ চামচ লেবুর রসের সাথে খেলে ডায়রিয়া বন্ধ হবে।
* ইউনানী মতে করলা বায়ু ও অম্ল নাশক, রতি শক্তি বর্ধব ও বীর্য বর্ধক। কিডনিতে পাথর জমতে দেয় না ও মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখে।
* যারা হাপানীতে ভুগছেন তারা নিয়মিত করলা খান উপকার পাবেন।
সতর্কতাঃ করলা তিতা কমাতে রান্নার সময় তার রস বা পানি দিয়ে সিদ্ধ করে এ পানি ফেলে দিবেন না। এতে করলার পুষ্টি গুণ কমে যায়। এটি টুকরো টুকরো করে কেটে ফ্রিজে ভরে রাখবেন না। করলার তিতা কমাতে করলার সাথে আলু মিশিয়ে ভাজি করলে বা অন্য কোন সবজি দিয়ে রান্না করলে তার তিক্ততা কমে আসবে। যেকোন সবজির পুষ্টিগুণ পুরোপুরি পেতে তাজা খাওয়া উচিত। নিয়মিত শাক-সবজি খান সুস্থ থাকুন।
শিক্ষক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কলাম লেখক
ফুলসাইন্দ দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।