পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী দিয়া-রাজীবের মৃত্যুর ঘটনায় দুই বাসের চালকসহ তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে জাবালে নূর পরিবহনের মালিক জাহাঙ্গীর আলম ও বাসচালকের সহকারী এনায়েত হোসেনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেল তিনটার দিকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ রায় ঘোষণা করেন। দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন- জাবালে নূর পরিবহনের দুই চালক মাসুম বিল্লাহ ও জুবায়ের সুমন এবং এক বাসের সহকারী কাজী আসাদ। এর মধ্যে কাজী আসাদ পলাতক থাকলেও বাকি দুইজন কারাগারে রয়েছেন। দন্ডবিধির ৩০৪ ধারায় ‘অপরাধজনক নরহত্যার’ দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে তাদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদন্ড দেয়া হয়। এ ধারায় এটাই সর্বোচ্চ সাজা।
দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় গত ৭ অক্টোবর উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে বিচারকাজ শেষ হয়। ওইদিনই এ মামলার রায়ের জন্য ১ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন আদালত। এ মামলার মোট আসামি ছিলেন ছয়জন। এর মধ্যে জামিনে থাকা জাবালে নূর পরিবহনের আরেক মালিক শাহাদাত হোসেনের মামলা উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত আছে।
২০১৮ সালের ২৯ জুলাই দুপুরে জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের চালকের রেষারেষিতে একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিমানবন্দর সড়কে র্যাডিসন হোটেল সংলগ্ন সড়কে অপেক্ষামাণ শিক্ষার্থীদের ওপর উঠে যায়। এতে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম ওরফে রাজীব (১৭) এবং একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম ওরফে মিমের (১৬) মৃত্যু হয়। আহত হন আরও অনেকে। পরে ঘটনার দিন রাতেই নিহত শিক্ষার্থী দিয়া খানমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা করেন।
২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক কাজী শরিফুল ইসলাম আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। আদালত তা আমলে নিয়ে ওই বছরের ২৫ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। এরপর বিচার প্রক্রিয়ায় ৪১ সাক্ষীর মধ্যে ৩৭ জন তাদের সাক্ষ্য দিয়েছেন। সবশেষ গত ৭ অক্টোবর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য রোববার দিন ধার্য করেন আদালত।
এদিকে রাজিব ও দিয়ার মৃত্যুর পর সারাদেশে সপ্তাহ খানেক নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা নজিরবিহীন আন্দোলন গড়ে তোলে। এতে কার্যত অচল হয়ে পড়ে দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। সব দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে আন্দোলন থেকে সরে যায় শিক্ষার্থীরা।
সরকারি কৌঁসুলি তাপস কুমার পাল জানান, এই মামলায় মোট ৪১ জন সাক্ষীর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ৩৭ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করে। গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এর মধ্যে তিনজন ঢাকার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, চালক ও চালকের সহকারীরা বেশি যাত্রী ওঠানোর লোভে যাত্রীদের কথা না শুনে, তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা না করে জিল্লুর রহমান উড়াল সড়কের ঢালের সামনে রাস্তা বøক করে দাঁড়ান। চালক মাসুম বিল্লাহ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ১৪-১৫ জন ছাত্রছাত্রীর ওপর বাস উঠিয়ে দেন। এতে ঘটনাস্থলে দুজন শিক্ষার্থী মারা যান।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, সেদিন বাস দুটির চালক ও চালকের সহকারীরা দুই থেকে তিনবার ওভারটেক করেন। জাবালে নূরের চালক মাসুম বিল্লাহ শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীকে বাসচাপায় মেরে ফেলার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, আগে গিয়ে যাত্রী তোলার জন্য বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে দুই শিক্ষার্থীকে মেরে ফেলেছেন এবং অন্যদের আহত করেছেন।
পরিবহন সেক্টরে অনেক খামখেয়ালিপনা দেখা যায়-আদালত
এ মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক ইমরুল কায়েশ বলেন, এ মামলাটি পেনালকোডের ৩০৪ ধারায় হয়েছে। যার সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ড। এর চেয়ে বেশি শাস্তি দেয়ার সুযোগ নেই। আপনারা সংবাদগুলো এমনভাবে প্রচার করবেন যাতে ছাত্রসমাজ ও জনগণের মধ্যে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি না থাকে। আদালত বলেন, পরিবহন সেক্টরে অনেক খামখেয়ালিপনা দেখা যায়। বাসের বেপরোয়া চলাচলের কারণে চাকার নিচে পিষ্ট হওয়া থেকে রেহাই পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরাও। এ ঘটনায় ট্রাফিক পুলিশকে সচেতন হতে হবে। বিচারক আরও বলেন, মালিকরা চালকদের একটা নির্দিষ্ট জমা টাকা টার্গেট দেয়। যেটা তাদের জটিল হয়। এ কারণে মালিকদের খুশি করতে বেপরোয়া চালায়। মালিকদেরও সচেতন হতে হবে।
ন্যায়বিচার পাইনি-আসামিপক্ষের আইনজীবী
যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত বাসচালক মাসুম বিল্লার আইনজীবী হাসিম উদ্দিন বলেন, রায়ে আমরা অবশ্যই অসন্তুষ্ট। ছাত্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদেরকে সন্তুষ্ট করতে আদালত এ রায় দিয়েছেন। এ ঘটনায় কোনো চাক্ষুষ সাক্ষী পাওয়া যায়নি। শুধুমাত্র আসামিদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির পরিপ্রেক্ষিতে এ রায়টি দেওয়া হয়েছে। রায়ের কাগজ পেলে বিষয়গুলো বুঝতে পারবো। আমরা উচ্চ আদালতে যাব। আশা করছি উচ্চ আদালতে গেলে আমরা ন্যায়বিচার পাব। যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত আরেক বাসচালক জুবায়ের সুমনের আইনজীবী টিএম আসাদুল হক বলেন, আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। অবশ্যই আমরা উচ্চ আদালতে যাব। সাক্ষ্য-প্রমাণে বলা হয়েছে, আমার মক্কেল জুবায়ের সুমনের গাড়িটি চলমান ছিল। পেছন থেকে অন্য একটি গাড়ি তার গাড়িটিকে ধাক্কা দেয়। কিন্তু তার গাড়ি দ্বারা কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আসামিকে যাবজ্জীবন দিতে হলে মৃত্যুর কারণ প্রমাণ করতে হয়। কিন্তু সুমনের গাড়ির দ্বারা কোনো হত্যাকান্ড ঘটেনি যোগ করেন তিনি।
রায়ে সন্তুষ্ট বাসচাপায় নিহত রাজীবের পরিবার
আদালতের এ রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন রাজীবের পরিবার। গতকাল বিকেলে রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাজীবের খালাত ভাই মেহেরাজ উদ্দিন এ সন্তুষ্টির কথা জানান। রায়ের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ফোনে মেহেরাজ উদ্দিন বলেন, রোববার রায় হবে তা শনিবার পত্রিকায় দেখেছি। রায়ের কথা শুনেছি সাংবাদিকদের মাধ্যমে। রাজীবের মা অসুস্থ থাকায় আমরা আদালতে যেতে পারিনি। তিনি এখন দক্ষিণখান এলাকায় আমার বাসায় রয়েছেন। রায় হবে শুনে সকাল থেকেই রাজীবের মা কাঁদছিলেন। এই রায়ে রাজীবের মা সন্তুষ্ট হয়েছেন বলে জানান মেহেরাজ।
তিনি বলেন, আমরা বরাবরই বলে আসছিলাম, ঘাতকদের যাতে শাস্তি হয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যখন গিয়েছিলাম আমরা তখনও বলে এসেছি, এই মামলায় আসামিদের যাতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হয়। এদিকে, দিয়া খানমের বাবা এবং মামলার বাদী জাহাঙ্গির আলম রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।