Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শীতে ঘুরে আসতে পারেন সিলেটের সাদা পাথর

ফয়সাল আমীন | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৫:০৫ পিএম

হোয়াইট স্টোন বা সাদা পাথর। নামটি শুনলেই দেখার প্রত্যাশা জাগে। এমনকি মনের ভিতর জুড়ে এক শুভ্রতা ভর করে। সবুজের বুক জুড়ে প্রকৃতির অপরুপ মহিমা আমাদের হৃদয়কে শুধু প্রশান্তি দেয়না, হৃদয়ে ছড়িয়ে দেয় শ্রান্তির এক ¯িœগ্ধ পরশ। পেছনে মেঘালয় ঝর্ণার স্বচ্ছ ধারা বের হয়ে এসে আঁছড়ে পড়ছে সাদা পাথরের দিকে। টলমলে স্বচ্ছ জলধারা সাদা পাথরের বুকে মিলেমিশে একাকার। এ যেন সৌন্দর্যের এক নান্দনিক কৌশল। যা মানব হৃদয়কে শুধু দোলাই দেয়না, পাশাপাশি নিয়ে যায় এক স্বপ্নের দেশে।
ভোলাগঞ্জ সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানিগঞ্জে অবস্থিত। ভোলাগঞ্জের আরেকপাশে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের উঁচু উঁচু পাহাড়। সেই পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণার পানির প্রবাহ ধলাই নদের উৎস। সবুজ পাহাড়, মেঘের হাতছানি আর বর্ষার পাহাড়ি ঢলের সাথে নেমে আসা সাদা পাথর ধলাই নদের বুকে মিলে মিশে সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। এই নদের উৎস মুখের পাথরের জায়গাটুকু ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট বা “সাদা পাথর” নামে পরিচিত। অনেকের মতে সাদা পাথর বিছনাকান্দির চেয়েও সুন্দর। সাদা পাথর এলাকা ছাড়াও কাছেই রয়েছে উৎমাছড়া, তুরুংছড়ার মত সুন্দর স্থান। এইসব কিছু মিলে ভোলাগঞ্জ এখন দেশের পর্যটকদের নিকট আকর্ষনীয় এক পর্যটন স্থান। সেই সাদা পাথরে এক সরকারি পরিবহণ বিআরটিসি বাসে মাত্র ৫০ টাকা ভাড়া প্রদান কওে যাওয়া যায়। যা পর্যটকদের যাথায়াতকে অনেকটাই সহজতর করে দিয়েছে।
গত ৯ নভেম্বর থেকে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়কে বাস সার্ভিস চালু করেছে সরকারী পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি। সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ রুটে বিআরটিসি ডাবল ডেকার বাস সার্ভিসের উদ্বোধন করেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। নগরীর আম্বরখানা কলোনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামন থেকে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কোম্পানীগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে এই বাস। কোম্পানীগঞ্জ থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যেও দু'ঘন্টা পরপর বাস ছাড়বে। আপাতত এ বহরে দুটি বাস যুক্ত হয়েছে। তবে শীগ্রই বাসের সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। আম্বরখানা থেকে কোম্পানীগঞ্জের জিরো পয়েন্টে গিয়ে থামবে বিআরটিসি'র বাস। জিরো পয়েন্টের পাশেই পর্যটকদেরর আকর্ষনীয় স্থান সাদাপাথর। এখন থেকে মাত্র ৫০ টাকা ভাড়ায় বিআরটিসি'র বাসে পৌঁছে যাওয়া যাবে স্বপ্নের সাদাপাথরে। বিআরটিসি বাস সার্ভিসের সিলেট জেলার সমন্বয়ক শোয়াইব শুভ বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়কে ৭৫ আসনের দুটি বাস চালু করা হয়েছে। এগুলো দু'ঘন্টা পরপর আসা যাওয়া করবে। পরে চাহিদা ভিত্তিতে আরও বাস বাড়ানো হবে। মাত্র ৬০ টাকা ভাড়ায় এই বাসে করে কোম্পানীগঞ্জের জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত যেতে পারবেন যাত্রীরা।
নিয়মিত যাথায়াতকারী যাত্রী স্কুল শিক্ষক সাইফুল হোসেন জানান, আগে জনপ্রতি ২শ' টাকা ভাড়ায় সিএনজি অটাোরিকশায় করে প্রথমে কোম্পানীগঞ্জের টুকেরবাজার যেতে হতো পর্যটকদের। টুকের বাজার থেকেই ট্রলারে চলে যেতে হতো সাদা পাথরের দেশ খ্যাত ভোলাগঞ্জের জিরো পয়েন্টে। এজন্য নৌকা প্রতি ভাড়া পড়তো এক থেকে দেড় হাজার টাকা। পরিবহন সিণ্ডিকেন্টের কারণে নানা ভোগান্তিতেও পড়তে হতো যাত্রীদের। তবে এখন মাত্র ৬০ টাকা ভাড়ায় যাওয়া যাবে ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্টে। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আরিফ, জয়, শুভ, হাসিব এসেছেন সিলেটে বেড়াতে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় বিআরটিসি বাসের কাউন্টারে কথা হয় তাদের সাথে। আরিফ বলেন, আরো একবার সাদা পাথরে গিয়েছে পরিবারের লোকজনের সাথে। এবার বন্ধুরা মিলে এসেছি। প্রথমবার ভাড়াসহ নানা ভোগান্তি পেতে হয়েছে। এবার মনে হচ্ছে যাত্রা স্বস্থিও ও আরামদায়ক হবে। জনপ্রতি ৬০ টাকা করে টিকেট কেটেছি। গতবার সিএনজিকে জনপ্রতি ২০০ টাকা দিতে হয়েছে।
টিপস
উপযুক্ত সময়
ভোলাগঞ্জ যাবার সবচেয়ে ভাল সময় হচ্ছে বর্ষাকাল ও তার পরবর্তী কিছু মাস অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বর। এই সময় যাওয়ার জন্যে সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। অন্যসময় গেলে সেখানে পাথরের সৌন্দর্য দেখতে পেলেও নদীতে বা ছড়ায় পানির পরিমাণ কম থাকবে। আর শীতকালে সাদা পাথর এলাকায় নৌকা চলাচল করার মত পানি থাকেনা তখন পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখতে হবে।
কিভাবে যাবেন
সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। দেশের যেখান থেকেই ভোলাগঞ্জ যেতে চান আপনাকে প্রথমে সিলেট শহরে আসতে হবে। সিলেট থেকে বিআরটিসি বাস, বাস, সিএনজি, লেগুনা বা প্রাইভেট কারে করে যাওয়া যায় ভোলাগঞ্জ। বর্তমানে ভোলাগঞ্জ যাওয়ার রাস্তার অবস্থা খুবই ভাল।

উৎমাছড়া ও তুরংছড়া
ভোলাগঞ্জের কাছেই আরও দুইটি পর্যটন স্থান উৎমাছড়া ও তুরংছড়া। অনেকেই সাদা পাথর ভ্রমণ করে উৎমাছড়া ও তুরংছড়া ঘুরতে যান। ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর ঘুরে উৎমাছড়ায় যেতে চাইলে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে দয়ারবাজার। আপনি যেই নৌকায় ভোলাগঞ্জ যাবেন সেই নৌকার মাঝিকে বললেই তিনি দয়ারবাজার ঘাটে নামিয়ে দিবে। সেক্ষেত্রে অল্প কিছু টাকা বেশি দিতে হতে পারে। অথবা আগেই নৌকা ঠিক করার সময় বলে দিবেন। দয়ার বাজার গিয়ে সেখান থেকে সিএনজি/বাইক নিয়ে জনপ্রতি ৩০-৫০ টাকা ভাড়ায় চলে যান চরার বাজার। চরার বাজার নেমে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই উৎমাছড়ার পথ দেখিয়ে দিবে। সেখান থেকে ১০-১৫ মিনিট হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন উৎমাছড়া পয়েন্টে। আর চরারবাজার থেকে তুরংছড়া হেঁটে যেতে সময় লাগে ৩০-৪০ মিনিট। চাইলে চরারবাজার থেকে বাইক নিয়েও যেতে পারবেন। সিলেটে ফিরে আসার সময় আপনার অবস্থান অনুযায়ী চরারবাজার/দয়ারবাজার/ভোলাগঞ্জ থেকে সরাসরি সিএনজি নিয়ে চলে আসতে পারেন সিলেটের আম্বরখানায়।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভ্রমণ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ