পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে হয় জীবনের তাগিদে। দূরপাল্লার যাত্রার ক্ষেত্রে সবাই বাস, ট্রেন, লঞ্চ কিংবা অন্যান্য যানবাহন ব্যবহার করে থাকেন। তবে তুলনামূলক আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য অনেকে ট্রেনকে বেশি বেছে নেন। তা ছাড়া চলাচলের ক্ষেত্রে ট্রেনের ভাড়াও সাশ্রয়ী। ট্রেন ভ্রমণ সাশ্রয় হলেও যেন নিরাপদ থাকছে না। দিন কিংবা রাতে যাত্রীবাহী ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা বাড়ছে। নিক্ষিপ্ত পাথরে কেউ আহত কেউ পঙ্গুত্ববরণ করছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে কারও প্রাণও যাচ্ছে। গত দেড় যুগ ধরে ঘটে চলেছে এমন ভয়াবহ ঘটনা। এর সমাধানের পথ খুঁজে পাচ্ছে না রেল। ফলে ভ্রমণে আতঙ্কে থাকছেন যাত্রীরা।
গত ২৯ নভেম্বর সিলেট থেকে চট্রগ্রামগ্রামী চট্রলা এক্সপ্রেসে ট্রেনে কুমিল্লার দৌলতপুর এলাকায় পাথর ঢিল মারা হয়। এতে ট্রেনটির দুই যাত্রী আহত হন। এর আগে গত ২ অক্টোবর ঢাকা থেকে সিলেটগামী আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেস নামে ট্রেনে পাথর ছুড়ে মারা হয়। এতে ট্রেনটির অন্তত চার যাত্রী আহত হন। গত ১৫ অক্টোবর ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা নোয়াখালীগামী আন্তঃনগর উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনে কুমিল্লায় বানাশুয়া এলাকায় পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। দুষ্কৃতিকারীদের ছোঁড়া পাথরের আঘাতে শিশুসহ তিন যাত্রী আহত হয়েছেন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা নোয়াখালীগামী আন্তঃনগর উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেন বানাশুয়া এলাকায় পৌঁছলে দুষ্কৃতিকারীরা ট্রেনের এসি বগিতে পাথর নিক্ষেপ করে। পাথরের আঘাতে ট্রেনটির ৬০১৭ নম্বর বগির ১ নম্বর কেবিনের জানালার গ্লাস ভেঙে পাথর ভিতরে ঢুকে যায়। এ সময় পাথরের আঘাতে শিশু নুসরাত জাহান মুন (৮), কামরুল ইসলামসহ (৫০) তিন যাত্রী আহত হন। তবে আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার মতো ট্রেনে কোনো ব্যবস্থা ছিলো না। এ ঘটনায় ট্রেনের যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে ট্রেনটি লাকসাম স্টেশনে পৌঁছালে ট্রেনের যান্ত্রিক বিভাগের কর্মচারীরা ক্ষতিগ্রস্ত গøাসের ওপর একটি কাগজ লাগিয়ে দেন। এ বিষয়ে লাকসাম রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসিম উদ্দিন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় তদন্ত চলছে। জড়িতদের আটকের চেষ্টা চলছে। এরপর গত ১৭ অক্টোবর ঢাকা-ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের জানালার কাচ ভেঙে সিফাত হোসেন নামে এক যাত্রী আহত হয়। পরে তাকে রেলের যাত্রীরা প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে এবং রেলওয়ে পুলিশের সাথে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ১১৯ টি ঘটনা ঘটেছে। এতে ৩৬ জন আহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় ১০৯টি ট্রেনের জানালা ভেঙেছে। এর মধ্যে দেশের ১৫টি এলাকায় পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটছে বেশি। এদিকে মাঠপর্যায়ের রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, ২০১৯ সালে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা প্রায় ৫ শতাধিক ছাড়িয়েছিল। ২০২০ সালে করোনাকালে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা বারবার ঘটেছে। তবে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটছে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের আওতাধীন চট্টগ্রামের পাহাড়তলী, সীতাকুন্ডের বাড়বকুন্ড, ফেনীর ফাজিলপুর-কালীদহ, কুমিল্লর বুড়িচং এবং নরসিংদী সদর, জিনারদী ও ঘোড়াশাল এলাকায়।
এ বিষয়ে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে পুলিশ সুপার মো. হাছান চৌধুরী বলেন, ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ বন্ধে আমরা কাজ শুরু করেছি। আমরা বিভিন্ন পয়েন্টে মানুষকে বুঝাচ্ছি পাথর নিক্ষেপের কুফল সম্পর্কে। শিক্ষকদেরও বলছি, যাতে তারা পাঠদানেও এ বিষয়টি তুলে ধরেন। জুমার দিনেও আমরা সংশ্লিষ্ট এলাকার মসজিদে গিয়ে বক্তব্য দিচ্ছি। এলাকার লোকজনকে সচেতন করছি। তিনি আরও বলেন, পাথর নিয়ে কেউ হাঁটলেও তাকে আটক করছি। বাচ্চা হলে মা বাবার কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছি। এছাড়া কিছু কিশোর যখন চলন্ত ট্রেনে উঠতে চায় তখন যাত্রীরা তাদের বাধা দেয়। তখন তারা ক্ষিপ্ত হয়ে পাথর নিক্ষেপ করে।
তবে এই বিষয়ে মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, যারা চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুড়ছে, তারা সেটাকে অপরাধ বলে মনে করে না। শুধু আনন্দ পেতে অনেকে এই কাজ করছে। আবার অনেকে হয়তো ভাবে, পাথর ছোড়া হলে ট্রেন থামবে কিংবা কিছু জিনিসপত্র কুড়িয়ে পাওয়া যাবে। মূলত, এটা করে তারা অসুস্থ আনন্দ পাচ্ছে।
এ ব্যাপারে মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, সাধারণত দুই-তিনটা ঘটনার কারণে এটা হয়ে থাকে। প্রথমত যে পাথর নিক্ষেপ করছে, সে মনে করতে পারে যে, সে কোনো সামাজিক বা সোশ্যাল ইনজাস্টিসের মধ্যে আছে। অর্থাৎ তার প্রতি একটা অবিচার হচ্ছে। ট্রেন একটা জায়গা দিয়ে যাচ্ছে। সেটা তার সহ্য হচ্ছে না। তার ভালো লাগছে না। কারণ কোনো না কোনো জায়গা থেকে সে হতাশাগ্রস্ত। হয়তো তার (পাথর নিক্ষেপকারী) পারিবারিক জীবনে কোনো হতাশা আছে। পেশাগত জীবনে কোনো হতাশা আছে। তার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর জন্য সে পাথরটা ছোঁড়ে। ট্রেন একটা সহজ লক্ষ্যবস্তু, নিরাপদ লক্ষ্যবস্তু। কারণ ট্রেন পাল্টা পাথর ছোঁড়ে না। সুতরাং সে সহজ জিনিসকে আঘাত করে। এর ভেতর দিয়ে সে হতাশাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন মনে করেন, কেবল আইন করে বা শাস্তি দিয়ে এই প্রবণতা রোধ করা যাবে না। তিনি বলেন, এই প্রবণতা রোধ করতে হবে সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে। শোনা যাচ্ছে, পাথর নিক্ষেপ ঠেকানোর জন্য জানালায় নেট বসানো হচ্ছে। আমি মনে করি এটা কোনো সমাধান না। কারণ নেট বসানো হলে সেই নেটে পাথর মারবে। কাঁচটা রক্ষা পেল, মানুষের মাথা রক্ষা পেল। কিন্তু পাথর মারা তো বন্ধ হবে না। নেট বসানোর চেয়ে মেন্টাল সেফটিনেটটা জরুরি। এ জন্য মানুষের হতাশা, চাপ ও বিকৃতির জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে সেগুলো পরিবর্তন করতে হবে। এ ছাড়াও পাথর ছোঁড়ার এসব ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ওইসব এলাকার স্কুলশিক্ষক, ধর্মীয় নেতা, মসজিদ-মন্দিরের ইমাম, পুরোহিতদের সাহায্য নিতে হবে। স্থানীয় সরকারের সাহায্য নিতে হবে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ভেতর দিয়ে একটা সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারা অনুযায়ী, ট্রেনে পাথর ছোড়া হলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদন্ডসহ ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। তবে পাথর নিক্ষেপে কারও মৃত্যু হলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদন্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু উল্লিখিত আইনে কারও শাস্তির নজির নেই। দশ বছরে শুধু পাথরের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া দরজা ও জানালার গ্লাস মেরামত ও বদলাতে প্রায় ৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
স¤প্রতি রাজধানীর রেলভবনে পাথর নিক্ষেপ বন্ধে সচেতনতা বাড়ানো কার্যক্রমের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, যেসব এলাকায় পাথর নিক্ষেপের ঘটনা বেশি ঘটছে, সেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে উপমহাদেশে ১৮৫৩ সালে ট্রেন চালুর পর থেকেই পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। উন্নত দেশেও এ অপকর্মটি হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে সমস্যাটি ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ট্রেনের গার্ড, কর্মচারী ও যাত্রী আহত হচ্ছেন। অনেকে চোখ হারিয়েছেন। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। ওই সময়ে রেলমন্ত্রী আরও বলেন, পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় এ পর্যন্ত যাদের ধরা হয়েছে তাদের সবাই শিশু, ভবঘুরে অথবা অপ্রকৃতিস্থ। ফলে কাউকে সাজা দেওয়া যায়নি। এজন্য সচেতনতায় জোর দেওয়া হচ্ছে। এতে গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রয়োজন উল্লেখ করে অভিভাবকদেরও সতর্ক করে মন্ত্রী বলেন, ট্রেনে পাথর নিক্ষেপকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। খেলার ছলে কিংবা না বুঝে পাথর নিক্ষেপ, এমন অজুহাতে কেউ পার পাবে না। অপরাধীদের অভিভাবকদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।