Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আফগানিস্তানে মার্কিন নীতিতে ট্রাম্পের বিভ্রান্তি

যুদ্ধবিরতির শর্তে বিস্মিত তালেবান নেতারা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

সেপ্টেম্বরে তালেবানের সাথে প্রায় এক বছর ধরে চলতে থাকা জটিল আলোচনা হঠাৎ করেই বাতিল করার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি সপ্তাহে আবার তা একই কায়দায় শুরু করার কথা জানিয়েছেন। আলোচনা আবার শুরুর সম্ভাবনায় স্বস্তি দেখা গেলেও পাশ্চাত্যের ক‚টনীতিবিদ ও তালেবান নেতারা ভাবতে শুরু করেছেন, ট্রাম্প কি এজন্য নতুন কোনো শর্ত যোগ করেছেন। আফগানিস্তানে আকস্মিকভাবে থ্যাঙ্ক গিভিং সফরের সময় তার মন্তব্যে এই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আবারো চুক্তি করার জন্য তালেবানের সাথে আলোচনায় বসবে, তবে তা হবে যুদ্ধবিরতির।

যুদ্ধবিরতি দাবি করাটা হবে আমেরিকার অবস্থান থেকে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন এবং এতে তালেবানের কাছ থেকে বিপুল ছাড়ের প্রয়োজন পড়বে। প্রায় এক বছর ধরে চলা আলোচনায় তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্র মূলত একই অবস্থানে ছিল। তা হলো তালেবান চেয়েছিল, আমেরিকা যেন আফগানিস্তান থেকে সরে যায়। আবার যুক্তরাষ্ট্রও ১৮ বছর ধরে চলা যুদ্ধটি বন্ধ করতে চাচ্ছিল। তবে এ নিয়ে কীভাবে চুক্তিতে উপনীত হওয়া যায়, তা ছিল জটিল বিষয়। তবে এই জটিলতা কাটিয়ে দুই পক্ষ যখন চুক্তি চ‚ড়ান্ত করতে যাচ্ছিল, তখনই ট্রাম্প আলোচনা ভেঙে দিয়েছিলেন। ওই সময় তালেবান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হলেও সহিংসতা হ্রাস করতে রাজি ছিল বলে মনে হয়েছে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র তার বাহিনী প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়ার পর তালেবান ও আফগান নেতাদের মধ্যে ভবিষ্যতের আলোচনায় আলোচ্যসূচি হতো ব্যাপকভিত্তিক যুদ্ধবিরতি।

কিন্তু বৃহস্পতিবার ট্রাম্প জানালেন, তালেবানের অবস্থানে পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন, তারা যুদ্ধবিরতি চায়নি। কিন্তু এখন বিশ্বাস করি, এখন তারা বলছে যে, তারা যুদ্ধবিরতি চায়। আমরা এখন দেখব, কী ঘটে।

ট্রাম্পের ঘোষণায় তালেবান দৃশ্যত বিস্মিত হয়েছে। সা¤প্রতিক সময়ে তালেবান যদিও কোনো না কোনোভাবে আবার আলোচনা শুরু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করলেও তাদের নেতারা জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি প্রশ্নে তাদের মূল অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি। তালেবান আলোচক দলের সদস্য সোহাইল শাহিন নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, আমেরিকানরাই আলোচনার টেবিল থেকে সরে গিয়েছিল। এখন বল তাদের কোর্টে। এই সমস্যার সমাধান করতে তারা আলোচনার টেবিলে ফিরবে কিনা তা নির্ভর করছে তাদের ওপর। আমাদের অবস্থান একই রয়ে গেছে। আমেরিকার আলোচকেরা তালেবানকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে পারবে কিনা তা এখনো অস্পষ্ট।

এদিকে আমেরিকান সামরিক বাহিনী ইতোমধ্যেই আফগানিস্তানে তাদের উপস্থিতি হ্রাস করতে শুরু করেছে। এর ফলে আলোচকেরা আগের চেয়ে কম সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে। গত মাসে আফগানিস্তানে শীর্ষ মার্কিন কমান্ডার জেনারেল অস্টিন এস মিলার বলেন, গত বছরে সৈন্য সংখ্যা দুই হাজার কমেছে। বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেন, তিনি সৈন্য সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনছেন। আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি অবশ্য ট্রাম্পের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন। যুদ্ধবিরতি ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র যেন সৈন্য প্রত্যাহার না করে, তা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিচ্ছিলেন ঘানি। কারণ তাতে তার সরকার আরো নাজুক অবস্থায় পড়বে।

ঘানি বাগরাম এয়ার ফিল্ডে ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাত করেন। এ সময় তার প্রতিদ্ব›দ্বী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর বিপুলসংখ্যক সমর্থক বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। শুক্রবার আফগান রাজনীতির বড় অংশই নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ছিল। আবদুল্লাহ অভিযোগ করেছেন, দেশটির নির্বাচন কমিশন তিন লাখ প্রশ্নবিদ্ধ ভোট ঘানির অনুকূলে দিয়েছে।
এই দুই ব্যক্তির মধ্যকার বিরোধ আফগান সরকারকে আরো সমস্যায় ফেলে দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প নতুন করে যে ঘোষণা দিলেন, তাতে করে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে যাবে।

অবশ্য কেউ কেউ মনে করছেন, সা¤প্রতিক বন্দি বিনিময়ের পর তালেবান কাবুলে হামলার সংখ্যা হ্রাস করায় তাদের মধ্যেও যে পরিবর্তন এসেছে, তা বোঝা যাচ্ছে। তবে যুদ্ধবিরতির জন্য চাপাচাপি করলে তালেবান হয়তো আলোচনা থেকেই বের হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য অর্জন করা আরো কঠিন হয়ে পড়বে।

এখন যুক্তরাষ্ট্রকেই তার অবস্থা নির্ধারণ করতে হবে। সাবেক মার্কিন ক‚টনীতিক ও বর্তমানে থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের এশিয়া পরিচালক লরেল মিলার বলেন, যুদ্ধবিরতি বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তা মার্কিন কূটনীতিবিদদের আগে পরিষ্কার করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত সহিংসতা হ্রাস চাচ্ছে। সূত্র : এসএএম।



 

Show all comments
  • সুক্ষ্ম চিন্তা ১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৯ এএম says : 0
    সকল মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফুল ইসলাম চঞ্চল ১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:০০ এএম says : 0
    যুদ্ধবিরতি নয় আমেরিকার সকল সৈন্য প্রত্যাহার চাই।
    Total Reply(0) Reply
  • জোহেব শাহরিয়ার ১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:০১ এএম says : 0
    ট্রাম্প যত পাগলামি করবে ওর দেশের তত ক্ষতি হবে। আমেরিকার উচিত দ্রুত আফগান ত্যাগ করা।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ মোশাররফ ১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:০১ এএম says : 0
    আফগান তালেবানদের আল্লাহতায়ালা আবার ক্ষমতা দেবেন ইনশায়াল্লাহ
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:০২ এএম says : 0
    আমেরিকা যত তাড়াতাড়ি আফগান ছেড়ে পালাবে তত তাদের ভালো হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Saker ullah ১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৭:২৫ এএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ,ইসলাম একটি শান্তি প্রিয় ধর্ম - আর এই শান্তির প্রিয় ধর্মের পিছনে উঠে পড়ে লেগেছে, সৈতান এমেরিকা আর ওই শান্তি প্রিয় মানুষগুলোকে তাদের ফ্যামিলিকে তিলে তিলে ধ্বংস করেছে, সন্ত্রাসী নেটো বাহিনী ! লক্ষ লক্ষ মুসলমান মা ভাই বোন শহীদ করেছে কি অপরাধ ছিল এই নিরহ মুসলমানদের?
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Lutfor Rahman ১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৮:৩০ এএম says : 0
    সাড়া দুনীয়ার সমস্ত মুসলমানরা আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আবার তালেবানদের দেখতে চায়।
    Total Reply(0) Reply
  • মো:মুহি উদ্দিন ১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৮:৪৫ এএম says : 0
    যুদ্ধ বিরতি নয় আমেরিকা আফগান দখলদারিত্ব ছেড়ে চলে যাক! এবং আমেরিকা কর্তৃক নিযুক্ত আফগান পুতুল সরকার আশরাফঘানি পাশ্চাত্যের গোলামী বাদ দিয়ে নিজ দেশের সর্বোমৌত্ত রক্ষার স্বার্থে স্হানীয় রাজনীতিবিদ ও তালেবানের সাথে বৈঠক করে সমস্যা সামাধান করা হবে উভয়ের জন্য মঙ্গল জনক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আফগানিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ