Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী গানশিপও ব্যর্থ আফগান যুদ্ধে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০১৯, ৬:৩৭ পিএম

ইরাক যুদ্ধের এক বছর পর ২০০৪ সালের এপ্রিলে মার্কিন সৈন্যরা তিক্ত নগর বিদ্রোহে জড়িয়ে পড়ে। এটি স্থায়ী হয় আরো ৫ বছর। তারপর মার্কিনিরা অত্যন্ত অনিরাপদ অবস্থায় রেখে ইরাক ত্যাগ করে। ওই মাসে বিরোধপূর্ণ নগরী ফালুজায় ঘটা একটি ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের সমস্যা জোরালোভাবে ফুটিয়ে তোলে। এতে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র এমনভাবে যুদ্ধে নিয়োজিত রয়েছে যে বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষার কোনো চেষ্টাই করা হয়নি। দেশটি বর্তমানে ঠিক একই কাজ উৎসাহভরে করে যাচ্ছে আফগানিস্তানে।

ফালুজার ঘটনায় একটি ছোট অগ্রবর্তী ঘাঁটিতে সাহায্য পাঠানোর জন্য একটি মেরিন কোরকে পাঠানো হয়েছিল। তারা আধা সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে প্রবল হামলার মুখে পড়ে। মেরিনদেরকে একটি ভবনে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। অনেক বড় একটি উদ্ধারকারী বাহিনী প্রায় তিন ঘণ্টার তীব্র যুদ্ধের পর তাদেরকে বের করে নিয়ে আসার আগ পর্যন্ত তারা সেখানেই অবরুদ্ধ ছিল। মেরিনদের সবাই রক্ষা পেয়েছিল, কেউ কেউ আহত হয়েছিল। ওই সময় মার্কিন সামরিক বাহিনীর সাথে ছিলেন ওয়াশিংটন পোস্টের মার্কিন সাংবাদিক পামেলা কনস্টেবল। তিনি পরে ওই ঘটনা তুলে ধরেছিলেন। তিনি ঘটনাটিতে মেরিনের সামনে আসা বিদ্রোহ সম্পর্কে কিছু অস্বস্তিকর বিষয়ও প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, ৯ দিন আগে ফালুজার আশপাশে মার্কিন বাহিনী আসার পর তারা এমন অবস্থায় আর পড়েনি। এতে এখনো নগরীর বেশির ভাগ এলাকা নিয়ন্ত্রণকারী মার্কিনবিরোধী গেরিলাদের কঠোর মনোভাব, সমন্বিত অবস্থান, অস্ত্র, বিপুল সংখ্যার বিষয়টি উঠে আসে।

কোম্পানিটির কমান্ডার ক্যাপ্টেন জ্যাসন স্মিথ (৩০) বলেন, আমরা অবশ্যই ভোলতার চাকে পিষ্ট হয়েছিলাম। আমরা যতটুকু ভেবেছিলাম, তারা ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি সংগঠিত। আমাদের সরবরাহ যানটি ভুল করে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ঢুকে পড়া মাত্র সব দিক থেকে গুলি আর রকেটের মুখে পড়ে। সেখানে মোতায়েন মেরিন অফিসারেরা বলেছেন, ফালুজার সব আক্রমণাত্মক অভিযান স্থগিত থাকবে। আর ফালুজা ও বাগদাদের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্ঘাত নিরসনে আলোচনার চেষ্টা করার দায়িত্ব দেয়া হবে। কিন্তু বুধবার ভোরের ঠিক আগ দিয়ে এসি-১৩০ স্পেকটার গানশিপগুলো, যেখানে মেরিন বহরটি আক্রান্ত হয়েছিল, সেখানকার ছয়টি ব্লকে বিপর্যয়কর হামলা শুরু করে। গোলার আগুনে আকাশ পর্যন্ত জ্বলে ওঠেছিল। মেরিন কর্মকর্তারা বলেন, পুরো এলাকাটিকে কার্যত ধ্বংস করা হয়েছে এবং সেখানে আর কোনো বিদ্রোহমূলক কার্যক্রম দেখা যায়নি।

ইরাকি বিদ্রোহ সম্পর্কে মারাত্মক ভুল করেছিল পেন্টাগন। তবে মার্কিন প্রতিক্রিয়ার প্রকৃতিও ছিল ভয়াবহ। মার্কিন গানশিপগুলো থেকে সরাসরি গোলা নিক্ষেপের ফলে ওই ছয়টি ব্লকের অনেক বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। ওই নাগরিকদের কিন্তু সরে যাওয়ার কোনো সময় দেয়া হয়নি। এটা ছিল একটি শাস্তিমূলক হামলা। অনেক ইরাকি পরে তাদের দখলদারদের হাতে এ ধরনের আরো অনেক সন্ত্রাসী কার্যক্রম দেখেছিল।

শাস্তিমূলক আক্রমণে যে বিমানটি ব্যবহৃত হয়েছিল সেটি ছিল এসি-১৩০ইউ ‘স্পুকি’ গানশিপ। এটি লকহিড সি-১৩০ সামরিক পরিবহন বিমানের একটি বিশেষ সংস্করণ। এতে দুটি বিশেষ ধরনের অস্ত্র সজ্জিত থাকে। একটি হলো এম১০২ হাউটজার। এতে সাত মাইল পাল্লায় মিনিটে ১০টি করে ১০৫ মিলিমিটার গোলা বর্ষণ করা যায়। দ্বিতীয়টি হলো এম৬১ ভলক্যান। ছয় ব্যারেলের এই কামান দিয়ে সেকেন্ডের মধ্যে শত শত রাউন্ড গোলাবর্ষণ করা সম্ভব। বিদ্রোহী এলাকায় ছোট অস্ত্রের অস্তিত্ব থাকতে পারে আশঙ্কায় বেশির ভাগ আক্রমণ হয় রাতে। সাম্প্রতিক সময়ে অবশ্য এসি-১৩০ইউ বিমানকে মার্কিন বিমানবাহিনী থেকে অবসর দেয়া হয়েছে। এর স্থলাভিষিক্ত হয়েছে আরো আধুনিক এসি-১৩০জে ঘোস্টরাইডার। এই বিমানই আফগানিস্তানে অভিযান পরিচালনা করছে।

বিশ্বজুড়ে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনী যে গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকাটি পাঠ করে সেটি হলো স্টার্স অ্যান্ড স্ট্রাইপস। পেন্টাগন থেকে প্রকাশিত এই পত্রিকায় চলতি সপ্তাহে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। স্পুকির মতো ঘোস্টরাইডারেও একই ধরনের কামান ও হাউটজার রয়েছে। তবে এগুলোর সাথে এতে বিমান থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ও লেজার-নিয়ন্ত্রিত বোমাও আছে। এর উড্ডয়ন ক্ষমতা ও সেন্সরও উন্নত করা হয়েছে। এর ইঞ্জিনের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে, এখন এটি আরো উঁচু দিয়ে উড়তে পারে। এর ফলে আফগানিস্তানে বিমানটি বেশ ফলপ্রসূ হয়েছে। স্টার্স অ্যান্ড স্ট্রাইপসে বলা হয়েছে, জুন থেকে ঘোস্টরাইডারগুলো ১,৩৮০ ঘণ্টা উড়ে ২১৮ বার হামলা করেছে। চলতি বছরের প্রথম দিকে তালেবানের সাথে আলোচনা ভেঙে যাওয়ার পর এই হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে। শান্তি আলোচনা ভেঙে যাওয়ার পর ট্রাম্প ‘শত্রুদের ওপর আরো কঠোরভাবে আঘাত’ করার যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তার আলোকেই এটা হচ্ছে। আফগানিস্তানের নিজস্ব বিমান বাহিনীও এখন তার আক্রমণাত্মক সামর্থ্য বাড়িয়েছে। তবে মার্কিন শক্তির তুলনায় এটি খুবই নগন্য।

ঘোষ্টরাইডার ও অন্যান্য মার্কিন হামলার বৃহত্তর প্রভাব নিয়ে প্রত্যক্ষ তথ্য থাকে কমই। ২০১৫ সালের স্পুকির একটি হামলার কথাই বলা যাক। কুন্দুজের একটি হাসপাতালের ওই হামলায় ৩০ জন নিহত হয়েছিল। বলা হয়েছে, মানবীয় ভুলে এমনটি হয়েছে। কিন্তু ওই ধরনের ভুল অব্যাহতই রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জাতিসংঘ হিসাব দিয়েছে যে চলতি বছরের প্রথমার্ধে বিমান হামলায় ৩৬০ জনের বেশি বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। জাতিসংঘের পদ্ধতির সাথে দ্বিমত পোষণ করতে পারে পেন্টাগন। কিন্তু বিমান হামলার কারণেই যে বেশির ভাগ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়, তাতো সত্য কথা।

আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক মৃত্যু বিরল ঘটনা। গানশিপ, সশস্ত্র ড্রোন ও প্রচলিত স্ট্রাইক বিমান ব্যবহার করে হামলার মাধ্যমেই এই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আর পুরো বিষয়টি সামরিক সংবাদমাধ্যমে আড়ালই থাকবে। তবে এর কোনো অবসান অদূর ভবিষ্যতে হওয়ার কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না। আর বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী গানশিপের ব্যবহার অব্যাহত রাখার ফলে তালেবান বাহিনী আত্মসমর্পণ করবে, এমন কোনো ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে না। সূত্র: সাউথ এশিয়ান মনিটর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আফগানিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ